তৃণমূল প্রার্থী দেবব্রত মজুমদারের সঙ্গে বচসা বিজয়গড়ে। ছবি: রণজি়ৎ নন্দী।
একাধিক আশঙ্কা দানা বেঁধেছিল শুক্রবার রাত থেকেই। এক, দুপুরের পরে গরম বাড়তে পারে। দুই, অন্য কেউ তাঁর ভোটটা দিয়ে যেতে পারে। তিন, বেলা গড়ালে গণ্ডগোল বাড়তে পারে। শনিবার ভিড়টা তাই দেখা গিয়েছিল সকালের দিকে, সাতটা বাজার ঢের আগেই। সকাল ছ’টায় এসেও লাইনে পাঁচ-ছ’জনের পরে।
বেলা গড়াতেই ছবিটা পাল্টে গেল। টালিগঞ্জ থেকে ক্যামাক স্ট্রিট,পার্ক স্ট্রিট, যাদবপুর থেকে গড়িয়া, তিলজলা-তপসিয়া সর্বত্রই পাতলা হয়ে গেল ভিড়। তবে, পাড়ার মোড়ে মোড়ে জটলার খামতি ছিল না। ছিল নির্ভেজাল আড্ডাও। চেতলায় এমনই এক আড্ডায় উঁকি দিয়ে পাওয়া গিয়েছে রাজ্যের নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকেও।
রাজ্যে পালাবদলের আগে যেমন একতরফা অভিযোগ আসত সিপিএমের বিরুদ্ধে, এ দিনও সকাল থেকে বিকেল, পরপর অভিযোগ আছড়ে পড়েছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। একটানা বেজে গিয়েছে রিং-টোন। দক্ষিণ কলকাতা ও শহরতলির এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটতে হয়েছে সেই অভিযোগ শুনে।
অভিযোগও ছিল বিভিন্ন ধরনের, কখনও বা অভিনবও। কোথাও ইভিএমে কালির দাগ। আশঙ্কা, যন্ত্রটি আগে ব্যবহৃত। কোথাও, অন্য দলের এজেন্টদের শাসানো হয়েছে। কসবায় বুথ জ্যামিং, তিলজলায় ছাপ্পা ভোট। প্রতিবাদ করায় বিজেপি প্রার্থীর জামা ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে। আরও অভিযোগ, বিভিন্ন জায়গায় এজেন্টকে মারধর করে বার করে দেওয়া হয়েছে বুথ থেকে। কোথাও সিপিএম নেতা ভোট দিয়ে বেরিয়ে মার খেয়েছেন। দুপুরের পরে শহরতলির একটি বুথে ভোটযন্ত্র খারাপ হয়ে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেছেন ভোটারেরা। মাথায় হাত দিয়ে বুথে বসে থাকতে দেখা গিয়েছে তৃণমূল প্রার্থীকে।
এ দিকে, বিজয়গড়ের একটি বুথে ঢোকার বৈধ ছাড়পত্র নিয়ে বিজেপির রাজ্য সম্পাদক রাহুল সিংহের ছবি তুলছিলেন চিত্রসাংবাদিকেরা। প্রথম বাধা এল তৃণমূল এজেন্টের তরফে। এ নিয়ে তর্কাতর্কির মাঝেই ঢুকে পড়লেন সিপিএম এজেন্টও। চিত্রসাংবাদিকদের মুখের উপরে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিলেন তিনি। দরজা বন্ধ নিয়ে ফের একপ্রস্ত বচসা। চেঁচামেচি শুনে বুথে ছুটে এলেন দক্ষিণ কলকাতা জেলা তৃণমূলের সভাপতি এবং ওই ওয়ার্ডের প্রার্থী দেবব্রত মজুমদার। এজেন্টদের শান্ত করে চিত্রসাংবাদিকদের বুথ থেকে চলে যেতে অনুরোধ করলেন তিনি। গোটা ঘটনার দায় কার, তা নিয়ে এর পরেই শুরু হয়ে গেল সিপিএম-তৃণমূল বচসা।
যাঁকে নিয়ে এত কাণ্ড, ততক্ষণে ভোট দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছেন সেই রাহুলবাবুই।