গ্যাস লিক করে আতঙ্ক বালিতে

একের পর এক গ্যাস লিকের ঘটনা। এমনকী, তার কারণে এক ছাত্রীর মৃত্যুর পরেও হুঁশ ফেরেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। আর প্রতিবারেই কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ ওঠে ‘গ্রেটার ক্যালকাটা গ্যাস সাপ্লাই কর্পোরেশন’-এর বিরুদ্ধে! এ বার ঘটনাস্থল বালি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৫ ০০:৫১
Share:

গ্যাস থেকে বাঁচতে মুখে কাপড়। শনিবার। — নিজস্ব চিত্র।

একের পর এক গ্যাস লিকের ঘটনা। এমনকী, তার কারণে এক ছাত্রীর মৃত্যুর পরেও হুঁশ ফেরেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। আর প্রতিবারেই কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ ওঠে ‘গ্রেটার ক্যালকাটা গ্যাস সাপ্লাই কর্পোরেশন’-এর বিরুদ্ধে! এ বার ঘটনাস্থল বালি।

Advertisement

অভিযোগ, শনিবার সকালে বালি হল্ট স্টেশন সংলগ্ন নর্থ ঘোষপাড়া এলাকায় গ্যাস লিক হওয়ার খবর পৌঁছনোর পরেও সময়মতো সেখানে পৌঁছলেন না সংস্থার কর্মীরা। শুক্রবারও একই ঘটনা ঘটেছিল মৌলালির ক্রিক রো-এ। সেখানেও সময়মতো কর্মীরা না যাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। এ দিন সকালে বালিতে গ্যাস লিক হওয়ার পরে দমকল, পুলিশ চলে এলেও গ্যাস সংস্থার কর্মীরা প্রায় আড়াই ঘণ্টা পরে পৌঁছন। তার পরে গ্যাস বেরোনো বন্ধ করা যায় বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

এই অভিযোগ অস্বীকার করছেন না সংস্থার আধিকারিকও। তাঁর কথায়, ‘‘লোকবলের খুব অভাব। তাই হয়তো পৌঁছতে দেরি হয়েছে।’’ গত জানুয়ারিতে কলেজ স্ট্রিটের আরপুলি লেনে মৃত্যু হয় কলেজছাত্রী সুমন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ অনুমান করে, ঘরের পাশ দিয়ে যাওয়া গ্যাসের পাইপে লিক হয়েই বিষাক্ত গ্যাসে দমবন্ধ হয়ে মারা যান তিনি। কিন্তু এর পরেও যে গ্রেটার ক্যালকাটা গ্যাস সাপ্লাই কর্পোরেশন পুরনো গ্যাস লাইনগুলিকে ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ করছে না, তার প্রমাণ দিল বালির ঘটনা।

Advertisement

এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ নর্থ ঘোষপাড়ার অরুণাভ সরণিতে থাকা গ্যাস প্লান্ট থেকে আচমকা বিকট আওয়াজ শোনেন স্থানীয়েরা। তাঁরা জানান, এই শব্দের পরেই প্লান্ট থেকে বিকট আওয়াজ বেরোতে থাকে। সঙ্গে ঝাঁঝালো গন্ধের গ্যাস। ভয়ে স্থানীয়েরা আগুন জ্বেলে রান্না বন্ধ করে দেন। এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে আসে দমকল ও নিশ্চিন্দা থানার পুলিশ। কিন্তু প্লান্টের কোথা থেকে গ্যাস বেরোচ্ছে, তা কেউই বুঝে উঠতে পারছিলেন না। পরে দমকলকর্মীরা দেখেন, একটি পাইপের সকেট খুলে গিয়েছে।

স্থানীয় পঞ্চায়েত (নিশ্চিন্দা) প্রধান সন্দীপ রায় বলেন, ‘‘আমরা প্রথমে ডানকুনিতে গ্যাস সংস্থার অফিসে খবর দিই। কিন্তু সেখান থেকে সদুত্তর না পেয়ে এলাকার বিধায়ককে বিষয়টি জানাই। তিনিই ওই সংস্থার আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।’’ এলাকার তৃণমূল বিধায়ক তথা সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দীর্ঘ দিন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই এই সমস্যা। বাসিন্দাদের স্বার্থে ওই সংস্থার আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।’’

এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি বাড়ির অধিকাংশ বাসিন্দাই ভয়ে রাস্তায় বেরিয়ে এসেছেন। সকলেরই নাকে-মুখে রুমাল বাঁধা। স্থানীয় বাসিন্দা দেবপ্রসাদ রায়, পাপিয়া মিত্রেরা তখন জানান, ক্রমশ গ্যাসের তীব্রতা বাড়ছে। গন্ধে শ্বাসকষ্ট শুরু হয় অনেকের। তীব্র শব্দের জেরে অধিকাংশেরই কানে শুনতে সমস্যা হচ্ছে। পাশ্ববর্তী এলাকা ঘোষপাড়ার পঞ্চায়েত প্রধান নকুলেশ্বর সমাদ্দার জানান, প্রায় ৪০ বছর ধরে এই প্লান্ট রয়েছে। কিন্তু শেষ দশ বছর ধরে গ্যাস সংস্থার কোনও কর্মীকে এখানে আর দেখা যায় না। গ্যাস সংস্থা সূত্রের খবর, দুর্গাপুর থেকে ডানকুনি সেখান থেকে বালি হল্টের এই প্লান্টে আসে কোক-অাভেন গ্যাস। বালি থেকেই বিভিন্ন পাইপলাইনের মাধ্যমে তা রাজাবাজার, কামারহাটি, আলিপুর, হাওড়া, মল্লিকবাজারে চলে যায়।

এ দিন প্রায় আড়াই ঘণ্টা পরে রাজাবাজার থেকে ঘটনাস্থলে আসেন গ্রেটার ক্যালকাটা গ্যাস সাপ্লাই কর্পোরেশনের কয়েক জন কর্মী। প্লান্ট পরীক্ষা করে তাঁরা জানান, একটি সকেট পাইপ কেউ ভেঙে দিয়েছে। এর জন্যই তীব্র গতিতে গ্যাস লিক হচ্ছে। এক কর্মী বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে লোহা চুরির জন্যই কেউ এটা করেছে।’’ কিন্তু দিনে-দুপুরে চুরি হলেও তা দেখভালের জন্য সংস্থার কেউ নেই কেন? কেনই বা শেষ ১০ বছরে কোনও রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি? সংস্থার এক আধিকারিক ফের লোকাভাবের যুক্তিই খাড়া করেছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement