আনাজের খোসা ও প্লাস্টিক, ভাঙা বোতল ও উচ্ছিষ্ট খাবার কিংবা রক্তমাখা গজ-তুলো-ব্যান্ডেজ— এ সব এক সঙ্গে মিশিয়ে ডাঁই করে রাখা হচ্ছে আবর্জনা ফেলার জায়গায়। ফলে, ক্ষতিকারক বর্জ্য বা আবর্জনা থেকে বেরোনো তরলের মাটি চুঁইয়ে শহরের ভূগর্ভস্থ জলকে দূষিত করে তোলার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা নয়, এমন আশঙ্কা খোদ রাজ্য পরিবেশ দফতরের।
কলকাতার মাত্র সাতটি ওয়ার্ডে আবর্জনা বাছাই করে সংগ্রহ করছে পুরসভা। বাকি ১৩৪টি ওয়ার্ডে সব ধরনের আবর্জনা এক সঙ্গে স্তূপীকৃত করে ফেলা হচ্ছে ধাপায়। এ নিয়ে রাজ্য পরিবেশ দফতর উদ্বিগ্ন। মঙ্গলবার পরিবেশ বিষয়ক একটি কর্মশালায় পরিবেশসচিব অর্ণব রায় জানান, পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অবিলম্বে এ বিষয়ে নজর দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কিছু কাজ হয়েছে। কিন্তু ব্যাপক ভাবে কোনও কাজ হয়নি বলে তিনি স্বীকার করছেন।
নিরি (ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট)-র কলকাতা শাখা আয়োজিত ওই কর্মশালায় পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্রও ছিলেন। পরে তিনি বলেন, ‘‘যখন সংগ্রহ করা হচ্ছে, সেই সময়েই বর্জ্য দু’ভাগে ভাগ করতে হবে। কিছু বর্জ্য প্রাকৃতিক ভাবেই বিলুপ্ত হয়। কিছু বর্জ্য তা হয় না। দু’ধরনের বর্জ্যকে আলাদা রাখতে হবে। কিন্তু এটা হচ্ছে না।’’
তবে কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল অপসারণ) দেবব্রত মজুমদারের দাবি, প্রাকৃতিক ভাবে বিলুপ্ত হয় না, এমন বর্জ্য পুরসভার কাছে খুব বেশি আসছে না। তিনি জানান, মুম্বইয়ে বাড়ি বাড়ি সংগ্রহের সময়ে নয়, ডাম্পিং গ্রাউন্ডেই এক ধরনের আবর্জনাকে অন্য ধরনের আবর্জনা থেকে আলাদা করে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলা হচ্ছে। দেবব্রতবাবুর কথায়, ‘‘বাকি ১৩৪টি ওয়ার্ডেও বাড়ি বাড়ি দু’রকম বিনের মধ্যে দু’ধরনের বর্জ্য ফেলার ব্যবস্থা যত শীঘ্র সম্ভব আমরা চালু করব।’’
মেয়র পারিষদ বলেন, ‘‘সমস্যা হচ্ছে আবর্জনা ফেলার জায়গা নিয়ে। জলাভূমির মধ্যে এই ধাপার মাঠ। সেখানে আবর্জনা ফেললে ভূগর্ভস্থ জল দূষিত হওয়ার ঝুঁকি সব সময়ে থেকে যায়। তাই আমরা শহরের অন্যত্র আবর্জনা ফেলার জায়গা খুঁজছি, যেখানে বৈজ্ঞানিক ভাবে জঞ্জাল ফেলা হবে।’’
পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র জানান, ক্ষতিকারক বর্জ্য থেকে নির্গত তরল যাতে চুঁইয়ে ভূগর্ভস্থ জলকে দূষিত না করে, সেই জন্য ডাম্পিং গ্রাউন্ডে নাইলনের আবরণ দরকার। যেটা হলদিয়ায় আছে, ধাপায় নেই।
পরিবেশ দফতরের কর্তাদের একাংশের মতে, একসঙ্গে মিশে থাকা সব ধরনের বর্জ্য ধাপার মাঠে অবৈজ্ঞানিক ভাবে জমা করা হচ্ছে। যার ফলে ক্ষতিকর বর্জ্য থেকে নিঃসৃত তরল ভূগর্ভস্থ জলে দূষণ ঘটাতে পারে, এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে। কর্মশালায় তাঁর বক্তৃতায় কল্যাণবাবু জানান, রাজ্যের ৩৪২টি ব্লকের মধ্যে ৮১টি আর্সেনিকপ্রবণ, ৪৯টি ফ্লুওরাইড দূষণ কবলিত এবং আরও ৫০টি ব্লকের ভূগর্ভস্থ জল পানের অযোগ্য নুনের পরিমাণ খুব বেশি থাকায়। তাঁর বক্তব্য, বর্জ্য থেকে সম্পদ তৈরির ক্ষেত্রে এখানে ত্রুটি আছে, অর্থাৎ বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার ঠিক মতো হচ্ছে না।
যে কারণে ধাপার মাঠের পুরনো আবর্জনা ফেলার জায়গাটির আয়তন ১০ হেক্টর আর সেটি ৩০ মিটার উঁচু।