শনিবার কলকাতা পুরসভার সাংবাদিক বৈঠকে ফিরহাদ হাকিম। —নিজস্ব চিত্র।
কলকাতায় বাড়তে পারে নদী ভাঙনের সমস্যা। তাই দ্রুতই এই সংক্রান্ত বিষয়ে বৈঠকে বসবেন কলকাতা পুরসভা ও কলকাতা বন্দর কর্তপক্ষ। শনিবার কলকাতা পুরসভার সাংবাদিক বৈঠকে ভাঙন সংক্রান্ত এক প্রশ্নে জবাব দিতে গিয়ে উদ্বেগ ধরা পড়েছে মেয়র ফিরহাদ হাকিমের গলায়। তিনি জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে শীঘ্রই কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।
কলকাতা শহরে গঙ্গা ভাঙন পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ফিরহাদ বলেন, ‘‘কলকাতায় গঙ্গার ভাঙন নিয়ে পুরসভার কমিশনার বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছেন। পোর্ট ট্রাস্টের চেয়ারম্যানও বলেছেন, পুরসভায় এসে আলোচনা করবেন। আমাদের সরকারের তরফে কেন্দ্রীয় সরকারকেও এ বিষয়ে জানানো হয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এখানে বড় আকারে ড্রেজিং না করলে গঙ্গা নিজের গতিপথ বদল করতে পারে। হাওড়ার দিকে পলি পড়ে কলকাতার দিকে ভাঙন হতে পারে। এখানকার পাশাপাশি ফরাক্কাতেও ড্রেজিং দরকার।’’
রাজ্য সরকারের তরফে সেচ দফতর গঙ্গা ভাঙন নিয়ে কাজ করলেও কলকাতার ক্ষেত্রে সেই দায়িত্ব পুরসভার কাঁধে। ছটপুজোর দিন তক্তাঘাটে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার কথাও উঠে আসে সাংবাদিক বৈঠকে। ঘটনাচক্রে সেই তক্তাঘাটও মেয়রের বিধানসভা কেন্দ্র কলকাতা বন্দরের অধীনেই। যার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের। এ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ‘‘আমাদের পক্ষে কঠিন পদক্ষেপ করার কোনও উপায় নেই। কেএমসি অ্যাক্টে কোনও এ প্রসঙ্গে বিধান নেই। কিন্তু আমরা চেষ্টা করছি বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার সমাধান করার। যে হেতু বিষয়টি পোর্টের দায়িত্ব, তাই এ বিষয়ে আমরা আলোচনা করে দেখতে পারি। উপনির্বাচন হয়ে গেলেই বৈঠক হবে।’’
গতিপথ বদলাচ্ছে কলকাতার গঙ্গা। সেই কারণে ভাঙনের ভ্রুকুটি দেখা দিয়েছে উত্তর কলকাতার ঐতিহ্যশালী নিমতলা শ্মশানঘাটে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে পুজোর ব্যস্ততার মধ্যেই ষষ্ঠীর দিন দুপুরে কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিমতলা শ্মশানঘাট এলাকা পরিদর্শনে যান মেয়র। ওইদিন পরিদর্শনের সময় তাঁর সঙ্গেই ছিলেন কলকাতা পুরসভার কমিশনার ধবল জৈনও। গঙ্গার এ হেন চরিত্র বদল নিয়ে যে তিনি চিন্তিত, তাও উল্লেখ করেছিলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, নিমতলা মহাশ্মশান কলকাতার অন্যতম স্মৃতিবিজড়িত ও ঐতিহ্যপূর্ণ স্থান, যা বহু বছর ধরে শহরের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক চেতনাকে ধারণ করে রেখেছে। এই মহাশ্মশান শুধুমাত্র একটি দাহস্থল নয়, বরং এখানে বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ায় এটি এক স্মৃতিবিজড়িত স্থান হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষকৃত্য এখানে সম্পন্ন হয়েছিল, যা এই স্থানকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক মর্যাদা প্রদান করে। রবীন্দ্রনাথের দাহকালের সেই মুহূর্ত আজও বহু মানুষের কাছে এক আবেগঘন স্মৃতি হিসেবে রয়ে গিয়েছে। এছাড়া, কলকাতার আরও অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব যেমন বিধানচন্দ্র রায়, ক্ষিতিমোহন সেন, এবং আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের শেষকৃত্যও নিমতলায় সম্পন্ন হয়েছে, যা এই স্থানকে আরও বেশি স্মৃতিবিজড়িত করে তুলেছে। শুধুমাত্র শেষকৃত্যের স্থান হিসেবে নয়, নিমতলা মহাশ্মশান শহরের ইতিহাস, সংস্কৃতি, এবং বাঙালির আবেগের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। তাই ভাঙনের আশঙ্কায় কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চিন্তিত কলকাতা পুরসভাও। যদিও নিমতলা-সহ শহরের একাধিক ঘাটের রক্ষণাবেক্ষণ এবং দেখভালের দায়িত্ব মূলত কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের হাতেই। তাই এখন কলকাতা পুরসভাও কেন্দ্রীয় সরকারের মুখাপেক্ষী। উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রকের অধীন কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট।