পুরানো সেই..: কড়াকড়ি শিথিল হতেই ফিরে এল সেই যানজট। সোমবার, ভিআইপি রোডে। ছবি: সুমন বল্লভ
লকডাউনের ৭৬ দিনের মাথায় শহরে ফিরে এল ভিড় আর যানজটের চেনা ছবি। সোমবার, সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে গাড়ির চাপে হাঁসফাঁস অবস্থা হয়েছে বড় রাস্তা থেকে শুরু করে গলিপথে। যানজটে একাধিক বার থমকেছে গতি। সকালে যে জট শুরু হয়েছিল, বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যাতেও তা স্বাভাবিক তো হয়ইনি, উল্টে আরও কঠিন আকার নিয়েছে। সমস্যা বাড়িয়েছে একাধিক রাস্তায় সাইকেল এবং বাইকের ভিড়। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, চিৎপুর সেতু এবং বি টি রোডের পরিস্থিতি এক সময়ে কার্যত পুলিশের হাতের বাইরে চলে যায়। অবস্থা বেগতিক দেখে ধর্মতলা থেকে স্ট্র্যান্ড রোড হয়ে হাওড়ার দিকে অনেক গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। তাতেও সমস্যা পুরো মেটেনি। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের পর্যবেক্ষণে যানজটের যে সব কারণ সামনে এসেছে, তাতে আজ মঙ্গলবারও পথে বেরিয়ে হয়রানির প্রভূত আশঙ্কা থাকছে। যদিও লালবাজারের আশ্বাস, সমস্যা কাটিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।
লালবাজার সূত্রের দাবি, এ দিন শহরের রাস্তায় অন্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি ব্যক্তিগত গাড়ি এবং মোটরবাইক ঢুকেছিল। তার ফলেই চাপ বেড়েছে। অতিরিক্ত গাড়ি ঢোকায় পার্কিং লটও ভরে গিয়েছিল। ফলে বহু গাড়ি দাঁড় করাতে হয়েছে রাস্তায়। এ ছাড়া, অনেক গলি থেকে এখনও ঝড়ে ভেঙে পড়া গাছ না-সরানোয় সেখানে গাড়ি রাখা যায়নি। পুলিশের একাংশের বক্তব্য, এরই মধ্যে কিছু রাস্তায় সাইকেল চলছে। লকডাউনের জন্য তাতে বাধা দেওয়া হচ্ছে না। তার জন্য কমছে যানবাহনের গতি। এ দিন পুলিশ অফিসারদের অভিজ্ঞতা, শহরে এমন বহু গাড়িচালক এসেছিলেন যাঁরা এখানকার রাস্তা সম্পর্কে সড়গড় নন। তাতেও সমস্যা বেড়েছে।
এ দিন ইএম বাইপাস থেকে গড়িয়াহাট হয়ে ধর্মতলায় আসছিলেন দুই মহিলা। দফায় দফায় যানজটে ফেঁসেছে তাঁদের গাড়ি। উত্তরে বেলগাছিয়া সেতুতে সকাল থেকে টানা যানজট ছিল। পুলিশের বক্তব্য, টালা সেতু ভাঙার জন্য এমনিতেই বেলগাছিয়া সেতুর উপরে চাপ বেড়েছে। তার উপরে এ দিন সেখানে সাইকেল নিয়ে অনেককে যেতে দেখা যায়। তাতে সমস্যা বাড়ে। চিংড়িঘাটা, অজয়নগর, কালিকাপুর-সহ বিভিন্ন এলাকাতেও মাঝেমধ্যে থমকেছে গাড়ির গতি।
আরও পড়ুন: সংক্রমিত আরও ১১ পুলিশকর্মী
পুলিশ জানিয়েছে, সকাল ১০টা নাগাদ চাঁদনি চক অঞ্চলে একটি স্কুলের কাছে পড়ুয়াদের অভিভাবকেরা ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ অবরোধ করেন। একে গাড়ির চাপ, তার উপরে অবরোধে ওই ব্যস্ত রাস্তায় যান চলাচল ব্যবস্থা তালগোল পাকিয়ে যায়। বিকেলে পগেয়াপট্টির কাছে মহাত্মা গাঁধী রোডে একটি গাড়ি খারাপ হওয়ায় সেখানে যানজট হয়। সন্ধ্যায় আবার জট তৈরি হয় উত্তর ও মধ্য কলকাতার বিস্তীর্ণ অংশে। পুলিশ সূত্রের দাবি, বি টি রোডে ব্যারাকপুর কমিশনারেট এলাকায় যানজট হয়েছিল। সেটাই বাড়তে বাড়তে কলকাতায় চলে আসে। রাত ন’টাতেও শোভাবাজার থেকে বাগবাজার পর্যন্ত অংশে গাড়ির দীর্ঘ লাইন চোখে পড়েছে। কার্যত স্তব্ধ ছিল লকগেট উড়ালপুলের দিকে যাওয়ার রাস্তাও।
একই ছবি দেখা গিয়েছে শহরতলিতে। বেলা ১১টা নাগাদ বারাসতের ডাকবাংলো মোড়ে একটি গাড়ি বিকল হলে যান পরিষেবা ব্যাহত হয়। বিরাটি, বিমানবন্দরের কাছে যশোর রোডেও বারবার গাড়ি থমকেছে। যাত্রীদের বক্তব্য, একে তো রাস্তায় নেমেছে প্রচুর সাইকেল আর বাইক। তার উপরে সার্ভিস রোডে লরি এবং অন্য গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখার ফলে সেই সব দু’চাকার যান চলে এসেছে মূল রাস্তায়। দমদম অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরির কাছে রাস্তা এমনিই সরু। তার উপরে রাস্তার উপরে সার দিয়ে লরি রাখায় পরিসর আরও কমেছে। ফলে বেড়েছে গাড়ির জট। নাগেরবাজারে একটি হাসপাতালের কাছেও রাস্তার উপরে সার দিয়ে ফাঁকা বাস দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, বিকেলে উত্তর শহরতলিতে বৃষ্টির জেরে বি টি রোডের কিছু অংশে জল জমে যায়। তার জেরে যানজট পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হয়ে ওঠে।
কোন্নগর থেকে বালি পর্যন্ত জি টি রোডেও পিছু ছাড়েনি যানজট। ওই রাস্তা পেরোতে এ দিন প্রায় এক ঘণ্টা লেগেছে। প্রচুর ছোট গাড়ি ও অ্যাপ-ক্যাব ছিল রাস্তায়। বেড়েছে টোটোও। বালি সেতু থেকে দক্ষিণেশ্বর পেরিয়ে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে বিমানবন্দরের দিকে যেতেও ঘাম ছুটেছে মানুষজনের।
আরও পড়ুন: ‘পরে লোক বাড়বে, তাই আজই এলাম’