—প্রতীকী চিত্র।
এক দশকেরও বেশি সময় ধরে শিয়ালদহ উত্তর এবং মেন শাখায় সব লোকাল ট্রেনকে ১২ কোচে উন্নীত করার কথা ভাবা হলেও নানা বাধায় তা করা যায়নি। এই পথে শিয়ালদহ স্টেশনের ১ থেকে ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মকে ১২ কোচের ট্রেন ধারণের উপযোগী করে তোলাই ছিল সবচেয়ে বড় বাধা। গত এপ্রিলে সেই কাজ শুরু করে বর্তমানে তা শেষ হওয়ার মুখে। তাই জুলাই মাস থেকেই শিয়ালদহ উত্তর এবং মেন শাখার সব রুটে ১২ কোচের ট্রেন চলবে বলে জানিয়েছে রেল। তবে সূত্রের খবর, আলাদা অনুষ্ঠান করে এই পরিষেবার সূচনা করা হতে পারে। এর ফলে প্রতিটি লোকাল ট্রেন অন্তত ১০৫০ জন যাত্রী বেশি বহন করতে পারবে। সেই লক্ষ্যে ৯ কোচের লোকাল ট্রেনগুলিতে আরও তিনটি করে কামরা জুড়ে ১২ কোচের ট্রেনে পরিবর্তিত করার কাজও শেষের পথে। শিয়ালদহ ডিভিশনের নারকেলডাঙা কারশেডে এখন সেই কাজ চলছে।
শিয়ালদহ স্টেশনের এক থেকে পাঁচ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ১২ কোচের ট্রেন আনতে প্রায় ৭০ মিটার দৈর্ঘ্য বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল। ডিআরএম ভবন না ভেঙে কী ভাবে ওই কাজ করা যায়, তা নিয়ে দীর্ঘ ভাবনা-চিন্তা চললেও হয়রানির আশঙ্কায় কেউই তা শুরু করতে ভরসা পাননি। শেষে শিয়ালদহ ডিভিশনের রেলওয়ে ম্যানেজার দীপক নিগমের তৎপরতায় এপ্রিলে ওই কাজ শুরু হয়। শুরুতে শিয়ালদহ স্টেশনের মূল ভবনের দিকে বাফার পিছনে সরিয়ে সব ক’টি প্ল্যাটফর্মের দৈর্ঘ্য ১০ মিটার বাড়ানো হয়। পরের পর্বে ১, ২ এবং ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মকে দমদমের দিকে প্রায় ৬০ মিটার সম্প্রসারিত করা হয়। এর পরে রেললাইন, সিগন্যালিং এবং ওভারহেড কেব্ল ব্যবস্থার বিন্যাস ঢেলে সাজানো হয়। এখন ৩ এবং ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মকে দমদমের দিকে সম্প্রসারিত করার কাজ চলছে।
শিয়ালদহ ডিভিশনে দৈনিক ৮৯২টি লোকাল ট্রেন চলে। শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় অধিকাংশ ১২ কোচের ট্রেন চললেও উত্তর ও মেন শাখায় প্ল্যাটফর্ম সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতার জেরে তা বেশি চালানো যেত না। ৬, ৭ এবং আংশিক ভাবে ৮ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকেই ১২ কোচের লোকাল ট্রেন চলত। নতুন ব্যবস্থায় ট্রেন চলাচল যেমন মসৃণ হবে, তেমনই ট্রেনপিছু প্রায় ১০৫০ জন যাত্রীধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে বলে দাবি রেল কর্তৃপক্ষের। ফলে দিনে আড়াই থেকে তিন লক্ষ অতিরিক্ত যাত্রী বহন করতে পারবে রেল। শিয়ালদহ ডিভিশনের রেলওয়ে ম্যানেজার বলেন, ‘‘১২ কোচের লোকাল ট্রেন চালানো গেলে যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্যের উন্নতি ঘটবে। জুলাই মাস থেকেই এই সুবিধা চালু করার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।’’
শিয়ালদহ ডিভিশনে থাকা ১১০টি ইএমইউ রেকের মধ্যে ৩৮টি রেক ন’কোচের ছিল। সেগুলির কাপলিং খুলে, নতুন কোচ জুড়ে ১২ কোচে পরিবর্তিত করা হচ্ছে। এ ছাড়াও, চেন্নাইয়ের ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি থেকে পাওয়া নতুন ১০টি রেকেও প্রয়োজনীয় বদল করা হয়েছে। তবে এর ফলে মোট ট্রেনের সংখ্যা যাতে না কমে, সে জন্য অতিরিক্ত রেকের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। নতুন ব্যবস্থায় কারশেডে ট্রেনের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়েও সমস্যা কমবে বলে রেল সূত্রের খবর।