মেঘ ছেঁড়া আলো। সোমবার, শোভাবাজারে বিশ্বনাথ বণিকের তোলা ছবি।
বর্ষা আসতে এখনও বাকি এক মাস। কিন্তু সোমবার সকাল থেকে হঠাৎই যেন বদলে গিয়েছে কলকাতার আবহাওয়াটা!
চ়ড়া রোদের বদলে মেঘলা আকাশ। মাঝেমধ্যেই বইছে হাওয়া। কোনও কোনও এলাকায় ছিটেফোঁটা বৃষ্টিও হয়েছে। মেঘলা আকাশের ফলে দিনভর রোদ উঠতে পারেনি, ফলে বাড়েনি তাপমাত্রাও। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, এ দিন কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, এ সময়ের স্বাভাবিক। যদিও আবহবিদ্দের মতে, গরমকালে দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকাটাই দস্তুর।
এ দিকে মৌসম ভবন জানিয়েছে, এ বার কেরলে বর্ষা ঢুকতে দেরি হবে। ফলে দক্ষিণবঙ্গেও বিলম্বে পৌঁছবে বর্ষার ট্রেন। অথচ এ দিন সকাল থেকে আবহাওয়া দেখে অনেকেই মনে করেছেন, বর্ষা এসে গেল বুঝি! তা নিয়ে হোয়্যাটসঅ্যাপ-ফেসবুকে রসিকতাও চালু হয়েছে।
আবহবিদেরা অবশ্য বলছেন, বর্ষা এখনও দূর অস্ত্, এ প্রাক-বর্ষারও লক্ষণ নয়। উত্তরবঙ্গের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝা এবং বিহার থেকে ছত্তীসগঢ় পর্যন্ত বিস্তৃত থাকা একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখার দৌলতেই এমন হাওয়া বদল। তবে তা সাময়িক। এই পরিস্থিতি কেটে গেলেই ফের হাজির হবে গরম। বাড়বে দিনের তাপমাত্রা। দক্ষিণবঙ্গবাসীর কপালে ফের নাকাল হওয়ার পূর্বাভাসও দিচ্ছেন আবহবিজ্ঞানীদের অনেকে।
আবহাওয়া দফতরের বিজ্ঞানীরা বলছেন, কাশ্মীর থেকে বয়ে আসা পশ্চিমী ঝঞ্ঝাটি উত্তরবঙ্গের উপর দিয়ে যাওয়ার ফলে সেখানে বায়ুর চাপ অনেক কমে গিয়েছে। আর দক্ষিণবঙ্গের বায়ুর চাপ সেই তুলনায় অনেক বেশি রয়েছে। তাই দক্ষিণবঙ্গ লাগোয়া বঙ্গোপসাগর থেকে ক্রমাগত জলীয় বাষ্প টেনে যাচ্ছে উত্তরবঙ্গ। ফলে মিলছে জোলো দখিনা বাতাস। সেই ঝঞ্ঝারই দোসর হয়েছে বিহারের নিম্নচাপ অক্ষরেখাও। সে-ও ক্রমাগত পশ্চিমাঞ্চলের দিকে জোলো হাওয়া টানছে। এই দুইয়ের প্রভাবেই দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে জলীয় বাষ্পের বাড়বাড়ন্ত হয়েছে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথ এ দিন বলেন, আগামী দিন দুয়েক একই রকম পরিস্থিতি থাকবে। মেঘলা আকাশ-বৃষ্টির জেরে দিনের তাপমাত্রা তেমন বাড়বে না। তবে বাড়তি জলীয় বাষ্পের জন্য ভ্যাপসা আবহাওয়ার অস্বস্তি সইতে হবে দক্ষিণবঙ্গবাসীকে।
পশ্চিমাঞ্চলে জোলো হাওয়ার বাড়বাড়ন্তের জন্য বাড়ছে কালবৈশাখীর ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনাও। রে়ডার চিত্র বিশ্লেষণ করে এ দিন হাওয়া অফিসের এক কর্তা জানান, বিকেলে ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুর এবং ধানবাদের কাছে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হয়েছিল। তার ফলে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বর্ধমানের একাংশে ঝড়বৃষ্টি হয়। রাতের দিকে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত ভাবে ঝড়বৃষ্টির খবর মিলেছে।