মেট্রোর কাজের প্রয়োজনে দোকানপাট তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে না।
এমনটাই মনে করে কলকাতা হাইকোর্ট। বুধবার হাইকোর্টে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো-প্রকল্প সংক্রান্ত এক মামলার শুনানিতে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত মন্তব্য করেন, ‘‘দোকানদারদের হয়ে যে সরকার লড়াই করে, মেট্রো-প্রকল্পের কাজের জন্য সেই সব দোকান উচ্ছেদ করা হবে, এমনটা কি ভাবা যায়?’’ বিচারপতির বক্তব্য, কোর্ট বড়জোর উচ্ছেদের নির্দেশিকা জারি করতে পারে। তবে সেই নির্দেশ পালন করা হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। বড়জোর আদালত অবমাননার মামলা হতে পারে। এর বেশি কিছুই হবে না।
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো-প্রকল্প পুরনো রুটে হবে না নতুন, সেই প্রসঙ্গে এ দিন সওয়াল-জবাব হচ্ছিল আদালতে। তখন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত এ দিন কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল কৌশিক চন্দের উদ্দেশে বলেন, ‘‘যদি পুরনো রুটেও ওই প্রকল্প হয়, তা হলেও কি আপনি মনে করেন রাস্তা দখলকারী দোকানদার-হকারদের তুলে দেবে সরকার? সরকার তো তাদের পক্ষে।’’ এ দিন কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন লিমিটেড (কেএমআরসিএল) বিচারপতি দত্তের আদালতে জানায়, ওই প্রকল্পের প্রস্তাবিত নতুন রুট নিয়ে তাদের আপত্তি নেই। তবে সেনাবাহিনী ও আর্কিওলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া (এএসআই)-র অনুমোদন
প্রয়োজন। এ ছাড়া, নতুন প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত ৭৬৪ কোটি টাকা বরাদ্দের ব্যাপারে রেল বোর্ড তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অনুমোদন
দরকার। তা জেনে বিচারপতি দত্ত উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘যে হকার সমস্যা ও ট্রাফিক সমস্যার জন্য রাজ্য সরকার বিকল্প রুট চাইছে, নতুন রুটেও তো সেই সমস্যা থাকবে। হকার ও ট্রাফিক সমস্যা হবে হিন্দ সিনেমা, ওয়েলিংটন স্কোয়ার, এস এন ব্যানার্জি রোডে। সে ক্ষেত্রে আদৌ ওই প্রকল্প কার্যকর হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েই যায়।’’
‘কলকাতা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কর্পোরেশন’ (সিইএসসি)-এর আইনজীবী সুবীর সান্যাল এ দিন আদালতে জানান, নতুন রুটে ওই মেট্রো প্রকল্প হলে বাড়তি অসুবিধা দেখা দেবে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ বজায় রাখার ক্ষেত্রে। মাটির তলায় লো-ভোল্টেজ, হাই-ভোল্টেজ বিদ্যুতের তার রয়েছে। সেই সব তার সরানোর জায়গা রাজ্য সরকার দিলেও, প্রযুক্তিগত ভাবে সেই তার সরিয়ে নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ চালু রাখার ক্ষেত্রে বিস্তর অসুবিধা
রয়েছে। সে ক্ষেত্রে সিইএসসি-কে বাড়তি টাকাও দিতে হবে কেএমআরসিএল-এর। আদালতে সুবীরবাবুর অভিযোগ, নতুন রুট সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানের জন্য আলোচনায় বসতে রাজ্যের পরিবহণ দফতরকে গত ২৭ জানুয়ারি ও ১০ মার্চ দু’বার চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু চিঠির জবাবই আসেনি। সুবীরবাবু এ দিন আদালতে আরও জানান, পুরনো রুট নিয়ে সিইএসসি-র কোনও অসুবিধা নেই।
নতুন রুট নিয়ে কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন লিমিটেড-এর সায় আছে জেনে বিচারপতি দত্ত কৌশিকবাবুর কাছে জানতে চান, কেন্দ্রের মন্ত্রিসভা বাড়তি টাকার অনুমোদন দেবে কি না এবং তা কত দিনে জানা যাবে। অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এ দিন তা জানাতে পারেননি। এর পরে বিচারপতি দত্ত কৌশিকবাবুর কাছে জানতে চান, ‘‘বাড়তি টাকার অনুমোদন না পেলে কী হবে?’’ কৌশিকবাবু বলেন, ‘‘তা হলে পুরনো রুটেই ওই প্রকল্প হবে। তাই প্রকল্পের ঠিকাদার সংস্থা আগে কাজ শুরু করুক।’’ এর পরেই হকার সমস্যা নিয়ে ওই মন্তব্য করেন বিচারপতি দত্ত।
সব পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারপতি দত্ত এ দিন রাজ্যের অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল লক্ষ্মী গুপ্তকে অনুরোধ করেন, রাজ্যের পরিবহণ সচিব এবং কলকাতার ডেপুটি কমিশনারকে সোমবার বিকেলে তাঁর চেম্বারে হাজির করাতে। এ ছাড়া, সিইএসসি এবং মেট্রো-প্রকল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত সংস্থাগুলিকেও তাঁর চেম্বারে হাজির হতে অনুরোধ করেন বিচারপতি দত্ত। বিচারপতি দত্ত লক্ষ্মীবাবুর কাছে এ-ও জানতে চান, ‘‘আপনি রাজ্যের নগরোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রীকে এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করছেন না কেন? ওই মন্ত্রী খুব উদ্যমী।’’ এ দিন বিকেল পৌনে পাঁচটায় এজলাস ছেড়ে ওঠার আগে বিচারপতি দত্ত বলেন, ‘‘পুরনো রুট নিয়ে সমস্যার সমাধানেই আগামী সোমবার সব পক্ষের আলোচনায় বসা দরকার।’’
কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন লিমিটেড-এর আইনজীবী রঞ্জন বাছাওয়াত এ দিন আদালতে জানিয়েছেন, হাওড়া ময়দান থেকে মাটির তলায় সুড়ঙ্গ কেটে কলকাতার দিকে আসার পরে সুড়ঙ্গ কাটার যন্ত্রটি লালদিঘিতে রাখার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের অসুবিধা নেই। কিন্তু লালদিঘিতে ওই যন্ত্র রাখার ব্যাপারে রেল বোর্ড আদৌ অনুমতি দেবে কি না, তা এখনও জানা যায়নি। রেল বোর্ডকে সেই অনুমতি দিতে আদালতের কাছে আর্জি জানান কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন লিমিটেড-এর আইনজীবী রঞ্জনবাবু।