আরও একটি জট কাটল ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর। কলকাতা পুরসভা, রাজ্য সরকার এবং কলকাতা মেট্রো কর্তৃপক্ষের মধ্যে আলোচনায় নির্দিষ্ট হল ধর্মতলা থেকে শিয়ালদহ স্টেশন পর্যন্ত সুড়ঙ্গের মধ্যে ‘টাটকা হাওয়া’ আনার স্থান। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পে সল্টলেক থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত যাবতীয় জট মোটামুটি কেটে গিয়েছিল আগেই। এ বার, শিয়ালদহ থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত মেট্রো আসার পথে আর কোনও বাধা থাকল না।
মেট্রো সূত্রের খবর, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রথমে শিয়ালদহ থেকে সেন্ট্রাল স্টেশন হয়ে বিবাদী বাগ যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাজ্যের আপত্তিতে ঠিক হয়, শিয়ালদহ থেকে ধর্মতলা হয়ে বিবাদী বাগ যাবে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো। সেই মতো ঠিক হয়, শিয়ালদহ থেকে মাটির তলায় সুড়ঙ্গের মাধ্যমে মেট্রো সরাসরি ধর্মতলা যাবে। পথে আর কোনও স্টেশন থাকবে না। কিন্তু শিয়ালদহ থেকে ধর্মতলা দু’কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্বে একটানা সুড়ঙ্গ থাকলে তা নিরাপত্তার দিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ। টানা সুড়ঙ্গ থাকলে অক্সিজেনের অভাবেরও আশঙ্কা থাকে। তাই, মাঝামাঝি এলাকায় মেট্রো একটি হাজার বর্গমিটার মতো জায়গা খুঁজছিল মাটির নীচ থেকে উপর পর্যন্ত রাস্তা তৈরির। ওই পথেই মেট্রো সুড়ঙ্গের মধ্যে যন্ত্রের মাধ্যমে টাটকা হাওয়া পাঠাবে।
সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে যে ব্যায়াম সমিতিটি রয়েছে, সেখানেই ওই টাটকা হাওয়া পাঠানোর কেন্দ্র তৈরির জন্য প্রাথমিক ভাবে চিহ্নিত করে মেট্রো কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বহু দিনের পুরনো ওই ক্লাবটিকে ওখান থেকে সরানোর ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়। গত মাসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই সমস্যা সমাধানের নির্দেশ দেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে। এর পরেই মেয়রের সঙ্গে মেট্রো কর্তৃপক্ষ এবং রাজ্য পরিবহণ দফতর বৈঠকে বসে। সেখানে ছিলেন স্থানীয় সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ও। স্থির হয়, পাশেই পুরসভার একটি নার্সারি এবং কয়েকটি থাকার জায়গা রয়েছে। সেটি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাবে পুরসভা। আর ওই জায়গায় উঠে যাবে ব্যায়াম সমিতি। অন্য দিকে, ব্যায়াম সমিতির জায়গায় সুড়ঙ্গের মধ্যে টাটকা হাওয়া পাঠানোর কেন্দ্র তৈরি করবে মেট্রো।
মেয়রের দাবি, এক মাসের মধ্যেই ব্যায়াম সমিতি ওখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘‘ওখানে পুরসভার বুস্টার পাম্পিং স্টেশন এবং জঞ্জাল বিভাগের অফিস। ওই জমিতেই ক্লাবকে বক্সিং ও অন্য খেলাধুলোর জন্য জমি লিজ দিয়েছিল পুরসভা। ঠিক হয়েছে, ক্লাবকে পুরসভার পাশের জমিতে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে ওই জমিটি মেট্রোকে ছেড়ে দেওয়া হবে।’’
সল্টলেকের সেক্টর ফাইভ থেকে শিয়ালদহ, বৌবাজার, লালদিঘি হয়ে হাওড়া ময়দান পর্যন্ত ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো রুটের প্রস্তাব অনুমোদন পায় ২০০৮ সালে। কিন্তু পুরনো মেট্রোর সেন্ট্রাল স্টেশনের কাছে নতুন স্টেশন করা নিয়ে জমি জট তৈরি হয়। মহাকরণের কাছেও স্টেশন গড়া নিয়ে সমস্যা হয়। শুরু হয় রাজ্য ও কেন্দ্রের চাপান-উতোর। শেষমেশ রাজ্যের প্রস্তাবিত রুটেই শিয়ালদহ থেকে ধর্মতলা, বিবাদী বাগ হয়ে হাওড়া ময়দান পর্যন্ত ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্প হবে বলে চূড়ান্ত হয়েছে। এতে ওই প্রকল্পে অতিরিক্ত প্রায় ৮০০কোটি টাকা খরচ হবে। ইতিমধ্যেই দত্তাবাদ, এসপ্ল্যানেড, শিয়ালদহ এবং হাওড়া ময়দান স্টেশন তৈরির জন্য যে সব জট রয়েছে, তা কেটে গিয়েছে। এ বার জট কাটল সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারেরও।
বাকি রইল শুধু বিবাদী বাগ স্টেশন তৈরির জট। সেখানে প্রস্তাবিত মেট্রোপথের একশো মিটারের মধ্যে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ নির্দিষ্ট করে দেওয়া তিনটি ঐতিহ্যবাহী সৌধ রয়েছে। তাই ওই রুটে কাজ শুরু করার আগে পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের অনুমতি নিতে হবে। সেই প্রক্রিয়া এখনও শেষ হয়নি। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের অনুমোদন পেলে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের পথে আর কোনও বাধা থাকবে না বলে দাবি মেট্রো কর্তাদের।