এক অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষকের সই জাল করে তাঁর সঞ্চয়ের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠল একটি ব্যাঙ্কের এক কর্মচারীর বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে আইডিবিআই ব্যাঙ্কের দমদম শাখায়। ওই শিক্ষকের নাম সমরেন্দ্রনাথ ঘোষ। ২০০৭ সালে তিনি হাবড়া কলেজ থেকে অবসর নেন। সমরেন্দ্রনাথবাবুর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনি তাঁর অবসরকালীন পাওয়া পুরো টাকা বিভিন্ন ব্যাঙ্কে ভাগ করে রেখেছিলেন। ২০১২ সালে সেগুলি একত্রিত করে আইডিবিআই ব্যাঙ্কের দমদম শাখায় পাঁচ বছরের জন্য ২০ লক্ষ টাকার একটি স্থায়ী আমানত (ফিক্সড ডিপোজিট) খোলেন। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ওই ব্যাঙ্কের রিলেশনশিপ ম্যানেজার দেবদুলাল দারাই ফোনে সমরেন্দ্রনাথবাবুকে বলেন, তাঁর ফিক্সড ডিপোজিট আপডেট করতে হবে। তিনি যেন ফিক্সড ডিপোজিট সার্টিফিকেটগুলি নিয়ে ব্যাঙ্কে যোগাযোগ করেন। দেবদুলালবাবুর কথা মতো সব সার্টিফিকেট নিয়ে ব্যাঙ্কে যান সমরেন্দ্রনাথবাবু। তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, দেবদুলালবাবু তাঁকে বলেন, আসল সার্টিফিকেটগুলি জমা রেখে যেতে। আপডেট হওয়ার পরে তিনি সেগুলি এপ্রিল মাসে ফেরত পেয়ে যাবেন। বদলে তাঁকে সার্টিফিকেটগুলির প্রতিলিপি দিয়ে দেওয়া হয়।
ওই শিক্ষক পুলিশকে আরও জানিয়েছেন, এপ্রিল মাসে ব্যাঙ্ক থেকে তাঁর কাছে একটি ফোন আসে। ফোনে বলা হয়, তিনি তাঁর স্থায়ী আমানতের বিনিময়ে ঋণ নিয়েছেন। ওই ফোন পেয়ে হতচকিত হয়ে যান সমরেন্দ্রনাথবাবু। তিনি সঙ্গে সঙ্গে ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখনই দেখা যায়, তাঁর স্থায়ী আমানতের পুরো ২০ লক্ষ টাকাই হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। বেপাত্তা রিলেশনশিপ ম্যানেজার দেবদুলালবাবুও। এর পরেই সমরেন্দ্রনাথবাবু বুঝতে পারেন, তিনি প্রতারিত হয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে আইডিবিআই ব্যাঙ্কের পূর্বাঞ্চলের সদর দফতরে ঘটনাটি জানান তিনি। দমদম থানাতেও প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পেয়ে পৃথক তদন্তে নামে দমদম থানার পুলিশ এবং আইডিবিআই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, এর আগেও কয়েকটি ক্ষেত্রে দেবদুলালবাবুর বিরুদ্ধে আমানতকারীদের সই জাল করে টাকা হাতানোর অভিযোগ উঠেছিল। সমরেন্দ্রনাথবাবুর ছেলে শান্তনু ঘোষের অবশ্য অভিযোগ, তদন্তে পুলিশ গা-ছাড়া মনোভাব দেখাচ্ছে। ওই শিক্ষক বলেন, “সামনেই আমার মেয়ের বিয়ে। সেই উদ্দেশ্যেই আমার সারা জীবনের উপার্জনের ওই টাকা রাখা ছিল। আমি তো কোনও চিট ফান্ডে টাকা রাখিনি। রেখেছিলাম ব্যাঙ্কে। সেখানেই এমন ভাবে প্রতারিত হলে আমাদের টাকা রাখার নিশ্চয়তা কোথায়?” পুলিশ অবশ্য তদন্তে ঢিলেমির অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের এক কর্তা জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। ব্যাঙ্কের অভিযুক্ত ওই কর্মীর খোঁজ চলছে। সন্ধান পেলেই তাঁকে গ্রেফতার করা হবে।
এ ব্যাপারে আইডিবিআই ব্যাঙ্কের চিফ জেনারেল ম্যানেজার সৌম্যশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা এপ্রিল মাসেই দমদম থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি। পুলিশ তদন্তে নেমেছে। আমরাও বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেছি। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, আমাদেরই এক কর্মী জড়িত। আমরা ইতিমধ্যেই দেবদুলালবাবুকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছি। তদন্তে যদি ওই কর্মীর জড়িত থাকার কথা প্রমাণিত হয়, আমরা ওই গ্রাহককে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করব। এটাই আমাদের নীতি।”