ফাইল চিত্র।
অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে শহরে এখন সাজ সাজ রব। বিভিন্ন এলাকায় চলছে সৌন্দর্যায়নের শেষ মুহূর্তের কাজ। অথচ, শহরের আর এক প্রান্তে ছবিটা পুরো উল্টো। ২০০৫ সালে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের পাশে তৈরি হয় ‘মোহরকুঞ্জ’। সেখানকার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ছিল সুরেলা ঝরনা (মিউজিক্যাল ফাউন্টেন)। কিন্তু, বছর দুয়েক ধরে সেই ফোয়ারাটি বন্ধ। যা দেখে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ।
২০০৫ সালে কলকাতার তৎকালীন মেয়র সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগে ‘সিটিজেন্স পার্ক’ নামে ওই উদ্যানটি তৈরি হয়। প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ২৪ বিঘের ওই উদ্যান তৈরিতে খরচ হয়েছিল প্রায় ৬৪ লক্ষ টাকা। পরে ২০০৭ সালে উদ্যানটির নাম দেওয়া হয় ‘মোহরকুঞ্জ’। ২০১৫ সালের জুলাই মাসে পাঁচ বছরের জন্য ওই উদ্যানের রক্ষণাবেক্ষণের ভার দেওয়া হয় বেসরকারি সংস্থা রিলায়্যান্স-কে। কিন্তু অভিযোগ, ওই সংস্থা দায়িত্ব নেওয়ার পরেই মোহরকুঞ্জের সেই ঝরনাটি বন্ধ হয়ে যায়। শুধু তা-ই নয়, ওই উদ্যানে মোট ১০৮টি পুরনো ধাঁচে তৈরি বাতিস্তম্ভ রয়েছে, যার মধ্যে মাত্র আট-দশটিতে এখনও আলো জ্বলে। বাগান পরিচর্যা নিয়েও বিস্তর অভিযোগ করেছেন পুরসভার উদ্যান বিভাগের আধিকারিকেরা।
মঙ্গলবার মোহরকুঞ্জের মূল প্রবেশপথ দিয়ে ঢুকতে গিয়েই হোঁটট খেতে হল। উদ্যানের নামফলকটাই উধাও হওয়ার জোগাড়। শুধু সুরেলা ঝরনাই নয়, আরও দু’টি ঝরনা
খারাপ হয়ে রয়েছে। সুরেলা ঝরনার সামনে বসার ব্যবস্থা থাকলেও সেখানে কেউ নেই। এক নিরাপত্তারক্ষীর কথায়, ‘‘ঝরনা বন্ধ। তাই এখানে কেউ বসেন না।’’ সন্ধ্যায় বেড়াতে আসা
এক দম্পতির কথায়, ‘‘সন্ধের পরে সুরেলা ঝরনাটি বেশ উপভোগ্য হত। কেন যে এটা সারানো হয় না।’’ উদ্যানের চারপাশ ঘুরে দেখা গেল, কোনও বাতিস্তম্ভ ভেঙে বাগানের মাটিতে পড়ে আছে তো কোনওটি হেলে পড়েছে। অধিকাংশ বাতিস্তম্ভ থেকেই রং উঠে গিয়েছে। শুকিয়ে গিয়েছে কিছু গাছও। পুরসভার উদ্যান বিভাগ সূত্রের খবর, আগে মোহরকুঞ্জে মালির সংখ্যা ছিল তিরিশ। এখন রয়েছেন মাত্র দশ জন। মালির সংখ্যা কম থাকায় উদ্যানের যথাযথ পরিচর্যা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন পুরসভার উদ্যান বিভাগের আধিকারিকেরা।
তাঁর আমলে তৈরি হওয়া উদ্যানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল যে সুরেলা ঝরনা, গত দু’বছর ধরে সেটি বন্ধ। এ প্রসঙ্গে তৎকালীন মেয়র তথা বর্তমান পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের পাশের পরিত্যক্ত জায়গাটিকে উদ্যানে পরিণত করা ছিল আমার স্বপ্নের প্রকল্প। পুরো প্রকল্পটাই এখন নষ্ট হওয়ার মুখে।’’ মোহরকুঞ্জ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা রিলায়্যান্সের অবশ্য দাবি, তারা উদ্যানের দায়িত্ব নেওয়ার আগে থেকেই সুরেলা ঝরনাটি বন্ধ ছিল। পুরসভার তরফে উদ্যান বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘রিলায়্যান্স উদ্যান রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেওয়ার মাস দু’য়েক আগে ওই ঝরনাটি বিকল হয়ে যায়। চুক্তিমতো ঝরনার যন্ত্রপাতি মেরামতির দায়িত্ব রিলায়্যান্সের। কিন্তু ওরা তা করেনি।’’
রিলায়্যান্সের তরফে মোহরকুঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক সুশান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মিউজিক্যাল ফাউন্টেন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সমস্যা চলছে। সেটিকে অবিলম্বে মেরামতির ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি, বিকল হওয়া বাতিস্তম্ভগুলি সারানোর কাজও শুরু হবে।’’ তবে বাগান পরিচর্যা সংক্রান্ত পুরসভার অভিযোগ প্রসঙ্গে সুশান্তবাবু জানান, আগের তুলনায় বাগান পরিচর্যা ভালই হচ্ছে। পুরসভার উদ্যান বিভাগের মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘রিলায়্যান্স চাইলে আমরাই ওই সুরেলা ঝরনা মেরামত করে দেব।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, ২০১৫ সালে পুরসভার কাছ থেকে মোহরকুঞ্জ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেওয়ার
পরে রিলায়্যান্স আর একটি সংস্থাকে বাগান পরিচর্যার দায়িত্ব দিয়েছে। ওই সংস্থার আধিকারিক প্রতাপকুমার মুহুরির কথায়, ‘‘উদ্যানের মূল ফটকের নামফলক শীঘ্রই নতুন করে লাগানো হবে। বাতিস্তম্ভগুলি যাতে শীঘ্রই
চালু করা যায়, সে বিষয়ে পুরসভার আলো বিভাগের ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে কথা বলব।’’ পুরসভার উদ্যান বিভাগের এক আধিকারিকের অভিযোগ, ‘‘এক সংস্থা দায়িত্ব নেওয়ার পরে ফের অন্য এক সংস্থাকে কাজের বরাত দেওয়ায় বাগান পরিচর্যায় খামতি থেকে যাচ্ছে।’’ পুরসভার আধিকারিকেরা জানান, বিশাল এলাকা জুড়ে থাকা মোহরকুঞ্জ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক কর্মী প্রয়োজন। কিন্তু রিলায়্যান্স দায়িত্ব নেওয়ার পরেই কর্মী কমানো হয়েছে বলে অভিযোগ।