প্রতীকী ছবি।
কিছু দিন আগেই একটি অনলাইন বিপণি থেকে কেনাকাটা করেছিলেন মধ্য কলকাতার এক বাসিন্দা। সেই সূত্রেই তাঁর কাছে একটি ইমেল এবং ফোন আসে। বলা হয়, ওই শপিং সাইটে কেনাকাটা করার জন্য তিনি লটারি জিতেছেন। তবে ওই পুরস্কার নেওয়ার জন্য কিছু টাকা জমা দিতে হবে। বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নম্বর দিয়ে তাঁকে ওই টাকা জমা দিতে বলা হয়। সরল বিশ্বাসে সেই টাকা জমা দিয়ে দেন ওই ব্যক্তি। কিন্তু বেশ কিছু দিন অপেক্ষা করার পরেও লটারির টাকা না পেয়ে তিনি ওই নম্বরে ফোন করে জানতে পারেন, সেটি বন্ধ। প্রতারিত হয়েছেন বুঝতে পেরে সেই অনলাইন শপিং সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে অভিযোগ জানান তিনি।
পুলিশের দাবি, ঘটনাটি চলতি বছরের প্রথম দিকের। ওই ব্যক্তির কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে সেই অনলাইন সংস্থার তরফে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। গত ৬ মার্চ সংস্থার তরফে অ্যান্ড্রু ডমিনি অ্যান্থনি পল নামে এক ব্যক্তি হেয়ার স্ট্রিট থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। লালবাজার জানিয়েছে, সেই অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতারণা-দমন শাখার গোয়েন্দারা শুক্রবার তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। তাদের জেরা করে বাগুইআটির প্রফুল্লকানন এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বিভিন্ন ভুয়ো নথিপত্র, কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক ও সিপিইউ।
তদন্তকারীরা জানান, গুলারাজ আহমেদ ও বিশাল শর্মা নামে ধৃত দুই যুবককে জেরা করে মহম্মদ সাদিক নামে আরও এক অভিযুক্তের খোঁজ পায় পুলিশ। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, কোন গ্রাহক ওই সংস্থা থেকে কী মাল কিনছেন, ওই যুবকেরা তা কোনও ভাবে জেনে যেত। তার পরে সেই গ্রাহকের ফোন নম্বর এবং ইমেল আইডি জোগাড় করে ফেলত। তার পরেই শুরু হত লটারির প্রলোভন দেখিয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টা।
পুলিশ সূত্রের খবর, অভিযুক্তেরা ওই অনলাইন সংস্থার নাম করে ফোনে বা ইমেলে গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বলত, তাঁরা ‘লাকি ড্র’-এর মাধ্যমে আকর্ষণীয় পুরস্কার জিতেছেন। কিন্তু সেই পুরস্কার পেতে হলে ‘প্রসেসিং ফি’ বাবদ একটা মোটা টাকা জমা দিতে হবে। ওই টাকা পাওয়ার পরেই ফোন নম্বর বদলে নিত তাঁরা। ফলে গ্রাহকেরা আর কোনও ভাবেই যোগাযোগ করতে পারতেন না। গত ডিসেম্বর থেকেই ওই প্রতারণার ব্যবসা চলছিল বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। ছ’মাস ধরে দুশোরও বেশি গ্রাহককে ওই সংস্থার নাম করে প্রতারিত করা হয়েছিল বলে জেনেছে পুলিশ।
কী ভাবে সন্ধান মিলল প্রতারকদের?
তদন্তকারীরা জানান, যে ফোন নম্বর এবং আইপি অ্যাড্রেস থেকে গ্রাহকদের ফোন ও ইমেল করা হয়েছিল, তার সূত্র ধরেই গুলারাজ আহমেদের সন্ধান মেলে। পাওয়া যায় বিশাল শর্মাকেও। পরে ইএম বাইপাস থেকে অপর অভিযুক্ত মহম্মদ সাদিককেও ধরে ফেলেন গোয়েন্দারা। পুলিশের দাবি, ওই তিন জন বাগুইআটির প্রফুল্ল কানন এলাকায় অফিস খুলে ওই প্রতারণার ব্যবসা চালাচ্ছিল। তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র-সহ একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছে।