মানিকতলায় হেলে থাকা সেই বাড়ি। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
হেলে পড়া বাড়িতেই বসবাস দীর্ঘ ১৮ বছর! মানিকতলায় বিপ্লবী বারীন ঘোষ সরণিতে পাশাপাশি দু’টি বাড়ির বাসিন্দারা রয়েছেন এ ভাবেই। ঝড়-বৃষ্টিতে বা ভূমিকম্প হলে তাঁদের মধ্যে তবু কিছুটা তৎপরতা দেখা যায়। পুরসভার ইঞ্জিনিয়ার ডাকিয়ে পরীক্ষাও করান বলে দাবি। কিন্তু তার পরেও রয়ে যান সেই হেলা বাড়িতেই। গার্ডেনরিচ-কাণ্ডের পরে চারদিকে শোরগোল শুরু হলেও মানিকতলার ওই বাড়ির বাসিন্দারা অবশ্য ওই বাড়ি থেকে সরার মতো সচেতনতা দেখান না। উল্টে বলেন, ‘‘১৮ বছর ধরে তো এখানেই আছি। কখনও কিছু মনেও হয়নি। লোকজন মজা করে বলে, তোরা হেলা বাড়ি কিনেছিস।’’
সদ্য কলকাতা পুরসভার ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে বেআইনি বহুতল ভেঙে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তার পরেই গার্ডেনরিচের ওই এলাকায় একাধিক হেলে পড়া বাড়ির ছবি প্রকাশ্যে আসে। এর পরে পুরসভার তরফে তৎপরতা বাড়ে, দেওয়া হয় নোটিস। গার্ডেনরিচের মতো মানিকতলাতেও বিপ্লবী বারীন ঘোষ সরণির ঠিকানায় পাশাপাশি একাধিক বাড়ি হেলে রয়েছে। বৃহস্পতিবার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘আট মাস আগে হেলে পড়া বাড়ির প্রকৃত তথ্য জানতে নোটিস দেওয়া হয়েছে। এতে পুরসভার কিছু করার নেই। বাড়ির বাসিন্দাদের নিজেদেরই উদ্যোগী হয়ে ঠিক করতে হবে।’’ বাসিন্দারা জানান, এলবিএস-কে দিয়ে বাড়ি পরীক্ষা করানো হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন, বাড়িটিকে যন্ত্র দিয়ে সোজা করতে হবে। পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের এক আধিকারিকও জানাচ্ছেন, আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে হেলে পড়া বাড়ি সোজা করা সম্ভব।
মানিকতলার ওই হেলা বাড়ির ঠিকানা ৪৬/সি/২৯। বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখা গেল, চারতলা বাড়িটি ডান দিকে হেলে রয়েছে। অবস্থা এমন, যে সিঁড়ি দিয়ে উপরে ওঠার সময়েও হেলে যাওয়া দিকেই টান অনুভব করা যায়। সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে উপরের দিকে তাকালে মাথা ঘুরতে বাধ্য। বাড়িটির একতলার একটি ফ্ল্যাট তালাবন্ধ, সেখানে কাউকে দেখা যায়নি। দোতলায় থাকেন একজন অসুস্থ মহিলা। তেতলার বাসিন্দা দীপালি চক্রবর্তী জানান, ২০০১ সালে তাঁরা এই বাড়িতে ফ্ল্যাট কেনেন। ২০০২ সাল থেকে বসবাস শুরু করেন। বাড়িটির প্রতিটি তলায় একটি করে ফ্ল্যাট রয়েছে। প্রথম যাঁরা কিনেছিলেন, তাঁরাই এখানে থাকেন। দীপালির দাবি, ‘‘বহু দিন ধরে এখানে থাকছি। কিন্তু কিছু বুঝিনি। ন’মাস আগে উল্টো দিকের জমিতে নির্মাণ শুরু হয়। সেই জমি পরীক্ষা করার সময়ে আমাদের বাড়ির দিকে পুরসভার নজর পড়ে। তবে শুধু এটিই নয়, পাশের আরও চারটি বাড়ি এক এক দিকে হেলে রয়েছে। কিন্তু এর জন্য বাড়ি ছেড়ে কখনও কোথাও যেতে হবে বলে মনে হয়নি।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কা থাকলে পুরসভার লোক এনে বাড়ির অবস্থা পরীক্ষা করাই। ভূমিকম্প হলে তার পরেও একই কাজ করি। কিন্তু বাড়ির কোনও অংশে বিপদের কিছু রয়েছে বলে কেউই বলেননি। তাই বিশেষ ভাবার কিছু আছে মনে হয়নি।’’