বিপত্তি: পাশেই চলছে গড়িয়া-বিমানবন্দর মেট্রোর কাজ। ধসে গিয়েছে সার্ভিস রোডের ফুটপাতের একাংশ। শুক্রবার, কৈখালির কাছে। —নিজস্ব চিত্র।
গড়িয়া-বিমানবন্দর মেট্রোর কাজ চলাকালীন কৈখালির কাছে সার্ভিস রোডের ফুটপাতের ধারে আংশিক ধস নামল। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। ফুটপাতের যে অংশে ধস নেমেছে, তার ঠিক পাশেই রয়েছে একটি আবাসন এবং কিন্ডারগার্টেন স্কুলের গেট। স্কুলের গেটের সামনের অবস্থা এতটাই খারাপ যে, দুর্ঘটনার আশঙ্কায় এখন ওই প্রধান গেট ব্যবহার করতে দেওয়া হচ্ছে না। খুদে পড়ুয়াদের অন্য গেট দিয়ে ঢুকতে হচ্ছে। অভিযোগ, শুধু ফুটপাতেই ধস নামেনি, আবাসনের গেটের সামনের অংশেও ফাটল দেখা দিয়েছে। বাসিন্দাদের দাবি, ওই ফাটল আগে ছিল না। মেট্রোর কাজের খোঁড়াখুঁড়ির কারণেই হয়েছে।
গড়িয়া-বিমানবন্দর মেট্রো রেলের কাজ ভিআইপি রোড এলাকায় কয়েক বছর ধরে চলছে। ভিআইপি রোডের উপরে কৈখালিতে একটি মেট্রো স্টেশন হওয়ার কথা। স্টেশন তৈরির কাজ চলছে বিমানবন্দরগামী ভিআইপি রোড এবং তার সার্ভিস রোডের উপরে। বিপত্তি দেখা দিয়েছে সার্ভিস রোডে। সার্ভিস রোড ঘেঁষে রয়েছে বেশ কয়েকটি আবাসন, দোকানপাট, অফিস, ব্যাঙ্ক, গাড়ির শোরুম, কাফেটেরিয়া, কিন্ডারগার্টেন স্কুল। মেট্রো স্টেশনের জন্য স্তম্ভ বসানোর খানিকটা কাজ শেষ হয়েছে। এখন সার্ভিস রোড খুঁড়ে বড় একটি নিকাশি নালা তৈরির কাজ করছে মেট্রো রেল।
সার্ভিস রোডের ধার ঘেঁষে থাকা ওই সব আবাসনের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এমনিতেই এখন তাঁদের ঢুকতে-বেরোতে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে। যদিও সেটা জনস্বার্থের কথা ভেবে তাঁরা মেনে নিয়েছেন। কিন্তু, এ বার তাঁরা আতঙ্কিত ফুটপাতের একাংশে ধস নামতে দেখে।
মেট্রোর পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্ল্যাটফর্ম তৈরির জন্য আবাসনের গা ঘেঁষে পর পর আরও স্তম্ভ তৈরি হবে। বাসিন্দাদের প্রশ্ন, এখন নিকাশি নালা তৈরি করতেই যদিফুটপাতের একাংশে ধস নামে, তা হলে ওই সব স্তম্ভ বসানোর সময়ে পরিস্থিতি কী হবে? একটি আবাসনের নিরাপত্তারক্ষী বিজয়কুমার বসু বললেন, ‘‘মেট্রোর যে স্তম্ভগুলি ইতিমধ্যে বসেছে, সেগুলি বসানোর সময়েই আবাসনের মাটি কাঁপত। এ বার তো একদম আবাসন ঘেঁষেই স্তম্ভ বসানো শুরু হবে। তখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে না তো?’’
খুদে পড়ুয়াদের ওই পথ দিয়ে স্কুলে নিয়ে যেতে গিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন তাদের অভিভাবকেরাও। স্থানীয় এক বাসিন্দা বললেন, ‘‘মেট্রোর কাজ করতে গিয়েই তো ধস নেমে বৌবাজার এলাকার বিধ্বস্ত অবস্থা। এ বার এখানেও ধস নামায় আমাদের আতঙ্ক হচ্ছে। এ রকম জনবহুল জায়গায় যতটা সতর্কতা নিয়ে কাজ করা দরকার, সেটা হচ্ছে কি?’’
ওই এলাকায় কাজ করতে গিয়ে আগেও আংশিক মাটি সরে যাওয়ার সমস্যা যে হয়েছিল, তা মানছে মেট্রো। এক কর্মীর কথায়, ‘‘ভিআইপি রোড এলাকার অনেকটাই আগে জলাভূমি ছিল। ফলে ওখানে মাটির চরিত্র ভিন্ন। সে কথা মাথায় রেখেই ধীরে ধীরে কাজ করতে হচ্ছে। যদিও মেট্রো কর্তৃপক্ষের আশ্বাস, যথেষ্ট সতর্কতা নিয়েই কাজ হচ্ছে। ওই প্রকল্পের এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘‘আতঙ্কের কিছু নেই। যে পুরনো নিকাশি নালা ছিল, তার জল নির্মীয়মাণ নতুন নিকাশ নালায় চলে আসায় ফুটপাতের মাটি ধসে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আবাসনের ধার ঘেঁষে যখন স্তম্ভ বসানোর কাজ হবে, তখনও যথেষ্ট সতর্কতার সঙ্গেই কাজ করা হবে।’’