উধাও: দোকানের দখলে প্রায় পুরো ফুটপাতই। ধর্মতলা এলাকায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
শহরের ফুটপাতে হকারদের দখলদারি এখনও বজায় রয়েছে। তবু সেই ফুটপাতের সৌন্দর্যায়নেই ফের দেড় কোটি টাকা খরচ করতে চলেছে কলকাতা পুরসভা। সৌন্দর্যায়ন ও পথচারীদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে শহরের প্রায় ২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ফুটপাত জুড়ে নতুন রেলিং বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পুর প্রশাসনের একাংশেই প্রশ্ন উঠেছে, হকার-রাজের কারণে যেখানে ফুটপাত দিয়ে হাঁটাই সমস্যা, সেখানে শুধু রেলিং বসিয়ে কী ভাবে সমস্যার সমাধান সম্ভব!
পুরসভা সূত্রের খবর, কিছু দিন আগে পুর কমিশনারের ঘরে এক বৈঠকে স্থির হয়, শহরের যে সমস্ত ফুটপাতে এখনও রেলিং নেই, সেখানে ওই নতুন রেলিং বসানো হবে। এমনকি, পার্ক সংলগ্ন রাস্তাতেও রেলিং বসানোর পরিকল্পনা করা হয়। প্রাথমিক ভাবে এ-ও ঠিক হয়, পাঁচ হাজার নতুন রেলিং শহরের রাস্তার ধারে ধাপে ধাপে বসানো হবে। আগামী তিন মাসের মধ্যে ওই কাজ সম্পূর্ণ করা হবে। পুরসভার এন্টালি ওয়ার্কশপে ওই নতুন রেলিং তৈরি করা হবে। পুরো প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ হয় এক কোটি ৪০ লক্ষ টাকা।
কিন্তু পুরসভা সূত্রের খবর, এর পরেই সমস্যার সূত্রপাত হয়। কারণ, এন্টালি ওয়ার্কশপের বর্তমান পরিকাঠামোয় মাত্র তিন মাসের মধ্যে পাঁচ হাজার রেলিং তৈরি সম্ভব নয় বলে জানান পুর আধিকারিকদের একাংশ। তখন দু’টি ভাগে কাজটি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। স্থির হয়, ২৩ কিলোমিটারের মধ্যে সাড়ে ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তার জন্য বাইরের কোনও এজেন্সি দিয়ে রেলিং তৈরি করানো হবে। বাকিটা তৈরি হবে এন্টালি ওয়ার্কশপে। পুরসভার এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘পাঁচ হাজার রেলিং তৈরি করতে সময় লাগবে। বিশেষ করে সৌন্দর্যায়নের উদ্দেশে যখন কাজটা করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ সময় দিতে রাজি হয়েছেন।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, সেই মতোই কাজ শুরুর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে এন্টালি ওয়ার্কশপে। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে বিতর্কও। পুর প্রশাসনের একাংশেই প্রশ্ন উঠেছে, ফুটপাতে নতুন রেলিং বসিয়ে সৌন্দর্যায়ন কী ভাবে সম্ভব, যদি তা হকারদের দখলে থাকে! এমনিতেই শহরের ফুটপাত যাতায়াতের অগম্য। ফলে হকার-সমস্যার সমাধান না করে এত টাকা খরচ করার যৌক্তিকতা কোথায়, সেই প্রশ্নও সামনে আসছে। এক পুর আধিকারিকের কথায়, ‘‘ফুটপাত থেকে হকার না তুলে বা তাঁদের জন্য জায়গা নির্দিষ্ট না করে শুধু রেলিং বসিয়ে যে সৌন্দর্যায়ন সম্ভব নয়, সেটা সকলেই বোঝেন! কিন্তু তার পরেও এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।’’
যদিও এন্টালি ওয়ার্কশপের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ সামসুজ্জামান আনসারি সে যুক্তি মানতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, রেলিং বসানো হলে হকারেরা মূল রাস্তায় চলে আসতে পারবেন না। কিন্তু ফুটপাতে হকার-রাজের কী হবে, রেলিং বসিয়ে পথচারীদের নিরাপত্তা সুরক্ষিত করা যাবে কি না, সেই প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। সামসুজ্জামানবাবুর কথায়, ‘‘সৌন্দর্যায়নের কারণে ফুটপাতে রেলিং বসানো হবে। পথচারীদের হাঁটাও সুরক্ষিত হবে বলে আশা করছি। খুব শীঘ্রই কাজ হবে।’’