টালার আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এ ভাবেই চলত মা ক্যান্টিনের রান্নার কাজও। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।
টালা এলাকায় স্কুলের ভবন দখল করে মা ক্যান্টিনের খাবার তৈরির অভিযোগ উঠেছিল। বেআইনি ভাবে সেখানে স্কুলের বিদ্যুৎ এবং জল ব্যবহার করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ করেছিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। তাঁদের দাবি ছিল, ভোর থেকে শুরু হওয়া রান্নার কাজের জেরে অবস্থা এমন হয়েছিল যে স্কুলের ছেলে-মেয়েদের শৌচাগারে যাওয়ার জলটুকুও অবশিষ্ট থাকছিল না। বার বার নানা মহলে অভিযোগ জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি বলে জানিয়েছিলেন তাঁরা।
এই নিয়ে শোরগোল পড়তেই রবিবার কড়া পদক্ষেপ করল পুরসভা। সূত্রের খবর, আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় নামে টালার ওই স্কুলে মিড-ডে মিল রান্নার দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বেআইনি ভাবে দিনের পর দিন সেখানে মা ক্যান্টিনের রান্নার কাজও চালিয়ে যাচ্ছিল। রবিবারই ওই সংস্থার প্রধানকে ডেকে সতর্ক করা হয়। দ্রুত মা ক্যান্টিনের রান্নার কাজ স্কুল থেকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় তাঁকে। এর পরেই এ দিন দুপুর থেকে ওই স্কুলের জায়গা ফাঁকা করে বড় বড় রান্নার কড়াই, গ্যাস সিলিন্ডার, বাসনপত্র, হাতা-খুন্তি গাড়িতে তুলে সরিয়ে নিয়ে যেতে দেখা যায়। সোমবার থেকে সেখানে শুধুমাত্র স্কুলের মিড-ডে মিলের রান্নার কাজ চলবে বলে জানা গিয়েছে।
স্কুলটি কলকাতা পুরসভার এক নম্বর বরোর অন্তর্গত। ওই বরোর চেয়ারম্যান, তৃণমূল নেতা তথা স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি তরুণ সাহা এ দিন বলেন, ‘‘ওই স্কুল ভবনে অন্তত চারটি বিভাগের পড়াশোনা হয়। প্রাক্-প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছেলেমেয়েরা মিড-ডে মিল পায়। সেই মিড-ডে মিলের রান্নার দায়িত্ব নেওয়া সংস্থাই এত দিন এই বেআইনি কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল বলে অভিযোগ। আগে যতবারই বলেছি, আমাদের বলা হয়েছে, উপরমহলের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া আছে। রবিবার এ নিয়ে আরও শোরগোল পড়তেই স্কুল শিক্ষা দফতরে কথা বলি। পুরসভার উপরমহলেও কথা পৌঁছেছে। এর পরেই সম্ভবত কড়া নির্দেশ এসেছে। মা ক্যান্টিনের কাজ ভাল কাজ। কিন্তু তাই বলে জোর করে কোনও স্কুল দখল করে তা চলতে পারে না।’’
যে সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, সেটির প্রধান প্রদীপ সরকারের সঙ্গে কথা বলা হলে তিনি আগে জানিয়েছিলেন, উপরমহল থেকে তাঁর অনুমতি নেওয়া রয়েছে। কিন্তু এ দিন রান্নার জিনিসপত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময়ে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘দমদম বীরপাড়ায় আমাদের নতুন জায়গা দেওয়া হয়েছে। পুরসভার মা ক্যান্টিন সংক্রান্ত বিষয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার বলেছেন, এখন থেকে মা ক্যান্টিনের রান্নার কাজ সেখানেই করতে হবে।’’ কিন্তু এত দিন এই ভাবে স্কুল দখল করে কাজ চালিয়ে গেলেন কী ভাবে? প্রদীপবাবুর উত্তর, ‘‘এত দিন যখন কাজ চলেছে, তার মানে সকলেই সব জানেন। এখন সুযোগ বুঝে দায় ঝেড়ে ফেলা হচ্ছে।’’ কারা দায় ঝেড়ে ফেলছেন, তা অবশ্য স্পষ্ট করে আর বলতে চাননি তিনি।