হসপিটাল রোডে দুর্ঘটনায় পড়া দু’টি গাড়ি। (ইনসেটে) আহত নাবালক। বুধবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
চিৎকার করে কেঁদে চলেছে একটি ছেলে। তার ঠাকুরমা পাশে দাঁড়িয়ে মাঝেমধ্যেই বমি করছেন। তাঁর কপালের এক দিক ফুলে গিয়েছে। অদূরেই মাটিতে বসে ছটফট করছেন এক ব্যক্তি। এক চোখ ফুলে গিয়েছে তাঁর। মুখ ফেটে রক্ত ঝরছে।
বুধবার দুপুরে ইডেন গার্ডেন্সে ম্যাচ দেখতে যাওয়ার পথে হঠাৎ ইউ-টার্ন নিতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েন একটি গাড়ির আরোহীরা। পিছন থেকে আসা অ্যাপ-ক্যাবের ধাক্কায় আহত হন চালক-সহ তিন জন। অ্যাপ-ক্যাবের দুই যাত্রীও আহত হয়েছেন। ইডেনমুখী গাড়িটির চালকের দোষেই এই ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি।
এ দিন হসপিটাল রোডে ট্র্যাফিক-বিধি ভেঙে ওই গাড়িটি হঠাৎ ‘ইউ টার্ন’ নিতে যায়। পিছনে থাকা অ্যাপ-ক্যাবটি সজোরে ধাক্কা মারে সেই গাড়ির ডান দিকে। সে দিকেই পিছনের আসনে বসে ছিলেন বৃদ্ধা ও তাঁর নাতি। ঘটনাস্থলে পৌঁছে দ্রুত পাঁচ আহতকে এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ার সেন্টারে পাঠায় পুলিশ। যদিও পরে ওই নাবালক ও তার ঠাকুরমাকে নিয়ে চলে যান ছেলেটির বাবা। বাকিরা আপাতত সেখানেই চিকিৎসাধীন বলে পুলিশ সূত্রের খবর। পুলিশ দু’টি গাড়িই হেফাজতে নিয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত এ দিন দুপুর সাড়ে ৩টে নাগাদ। হসপিটাল রোড ধরে নাতিকে নিয়ে নিজেদের গাড়িতে ইডেনে যাচ্ছিলেন মধু লোহিয়া নামে ওই বৃদ্ধা। গাড়ি চালাচ্ছিলেন সত্যেন্দ্র রায় নামে এক প্রৌঢ়। ফোর্ট উইলিয়ামের দিকে যাওয়ার সময়ে হঠাৎ তাঁদের মনে হয়, ভুল রাস্তায় যাচ্ছেন। তখন এক জায়গা থেকে ইউ টার্ন নিতে যান তাঁরা। তখনই পিছনে থাকা অ্যাপ-ক্যাবটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ওই গাড়িটিকে ধাক্কা মারে। ক্যাবের চালক মহম্মদ রিয়াজ়উদ্দিন আনসারি বলেন, ‘‘সল্টলেক থেকে যাত্রী তুলে ভিক্টোরিয়ার দিকে যাচ্ছিলাম। মা উড়ালপুল ধরে এসে হসপিটাল রোডে ঢোকার পরে রাস্তা ফাঁকা ছিল। সামনের গাড়িটা হঠাৎ ইউ-টার্ন করতে যায়। তখন আর কিছু করার ছিল না। আমার গাড়ি ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার গতিতে চলছিল। এর চেয়েও বড় কিছু ঘটতে পারত।’’
হসপিটাল রোডকে মাঝামাঝি ভাগ করে দ্বিমুখী যান চলাচল করায় ট্র্যাফিক পুলিশ। এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার মাঝখানে পড়ে থাকা হ্যাচব্যাক গাড়িটির ডান দিকের অংশ দুমড়ে গিয়েছে, ভেঙেছে কাচ। গাড়ির জ্বালানিও চুঁইয়ে মাটিতে পড়ছে। পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা অ্যাপ-ক্যাবটির ইঞ্জিনের অংশও দুমড়ে ঢুকে গিয়েছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী বলেন, ‘‘এখানে ইউ-টার্ন করার কথা নয়। দ্রুত গতিতে এখানে গাড়ি চলে। এ ভাবে ইউ-টার্ন নিতে গেলে তো বিপদ ঘটতে বাধ্য।’’
গাড়িতে শিশু ও বয়স্ক রয়েছেন জেনেও ইউ-টার্ন নিতে গেলেন কেন? রক্তাক্ত গাড়িচালক সত্যেন্দ্র কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। আহত মধুদেবী কোনও মতে বললেন, ‘‘এই চালককে চিনি না। এ দিনই প্রথম আমাদের গাড়ি চালাচ্ছেন। খেলা দেখতে যাব বলে ছেলে ড্রাইভিং স্কুল থেকে ডেকে নিয়েছিল। কেন হঠাৎ ঘুরতে গেল, জানি না।’’
শহরের গাড়ির গ্যারাজগুলির অন্যতম ব্যবসা হল, গাড়িচালক ভাড়ায় দেওয়া। ঘণ্টা হিসাবে টাকা নিয়ে কাজ করেন তাঁরা। অতীতে এমন গাড়িচালকদের টানা কাজ করে যাওয়ার ক্লান্তির জেরে একাধিক দুর্ঘটনার অভিযোগ উঠেছে। ট্র্যাফিক-বিধি সম্পর্কে তাঁদের জ্ঞান কতটা, তা নিয়েও ধোঁয়াশা আছে। এ দিনের ঘটনা তেমন কিছুর জন্যই ঘটেছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখছে হেস্টিংস থানার পুলিশ।