Peerless Hospital

Spinal Muscular Atrophy Diseases: এসএমএ-র ওষুধের প্রথম প্রয়োগ শুরু পূর্ব ভারতে

বিভিন্ন জটিলতা কাটিয়ে এ বার অত্যন্ত দামি সেই বিদেশি দু’টি ওষুধ বিনামূল্যে পেতে শুরু করেছে পিয়ারলেস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৩টি শিশু।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:৪১
Share:

ত্রয়ী: ওষুধ নিতে পিয়ারলেস হাসপাতালে হাজির তিন খুদে। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুমন বল্লভ

ওদের মধ্যে কেউ ভাল গান গাইতে পারে। কেউ আবার খুব ভাল ছবি আঁকে। কারও আবার অঙ্কের মাথা খুব ভাল। কিন্তু নিজে থেকে বসা বা দাঁড়ানোর ক্ষমতা হারিয়ে ওরা প্রত্যেকেই হুইলচেয়ার-নির্ভর। কয়েক বছর আগে ‘স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রফি’-তে (এসএমএ) আক্রান্তদের জন্য ওষুধ বেরিয়েছে বিদেশে। কিন্তু তার খরচ বছরে ৭০ লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে ২ কোটিরও বেশি।

Advertisement

বিভিন্ন জটিলতা কাটিয়ে এ বার অত্যন্ত দামি সেই বিদেশি দু’টি ওষুধ বিনামূল্যে পেতে শুরু করেছে পিয়ারলেস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৩টি শিশু। এসএমএ-র চিকিৎসায় দু’টি ওষুধ রয়েছে। একটি খাওয়ার ওষুধ, বছরে যার খরচ ৭২ লক্ষ টাকা। অন্যটি ইঞ্জেকশন, যার খরচ বছরে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। দেশ জুড়ে এসএমএ আক্রান্তদের অভিভাবকদের মঞ্চ ‘কিয়োর এসএমএ ইন্ডিয়া’-র প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য মৌমিতা ঘোষের কথায়, ‘‘রাজ্যে নথিভুক্ত এমন রোগীর সংখ্যা প্রায় ৮০। দীর্ঘ চেষ্টার পরে মাত্র ১৩টি বাচ্চা বিনামূল্যে ওষুধ পেতে শুরু হওয়ায় আশার আলো দেখছি।’’

খাওয়ার ওষুধটি ভারতে ব্যবহারের জন্য ইতিমধ্যেই ডিসিজিআই (ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া)-এর অনুমোদন পেয়েছে। গত বছর থেকে ‘কমপ্যাশনেট ইউজ় প্রোগ্রাম’ (সিইউপি)-এর অধীনে প্রস্তুতকারী সংস্থা থেকে ওষুধটি পেয়ে সাতটি বাচ্চাকে বিনামূল্যে দেওয়া শুরু করেছে শহরের ওই হাসপাতাল। আপাতত তিন বছর ওষুধটি বিনামূল্যে দেবে প্রস্তুতকারী সংস্থা। কিন্তু দেশে ব্যবহারের ছাড়পত্র না পাওয়ায় আটকে ছিল ইঞ্জেকশনের প্রয়োগ। মৌমিতা জানাচ্ছেন, ২০১৯-এ ওই ইঞ্জেকশন প্রস্তুতকারী সংস্থা দেশের ২১টি শিশুর উপরে ওষুধটি প্রয়োগ করে। সেই তালিকায় পূর্ব ভারত ছিল না। তবে হাল ছাড়েননি ‘কিয়োর এসএমএ ইন্ডিয়া’-র সদস্যেরা এবং ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

গত বছর থেকে পিয়ারলেস হাসপাতালের এসএমএ ক্লিনিকে রোগটি নির্ণয় এবং সেটির কারণে তৈরি হওয়া সমস্যাগুলির চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বাবা-মা দু’জনেই ‘সারভাইভ্যাল মোটর নিউরোন’ জিনের বাহক হলে সন্তান এসএমএ-তে আক্রান্ত হতে পারে। বৃহস্পতিবার এক সাংবাদিক বৈঠকে হাসপাতালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুজিত কর পুরকায়স্থ বলেন, ‘‘হাসপাতালের এথিক্স কমিটি ছাড়পত্র দেওয়ার পরে সব আইনি জটিলতা কাটিয়ে বিদেশ থেকে ইঞ্জেকশনটি আনা সম্ভব হয়েছে। পূর্ব ভারতে একমাত্র পিয়ারলেসকেই বেছে নিয়েছে প্রস্তুতকারী সংস্থা।’’

হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল ডিরেক্টর, চিকিৎসক শুভ্রজ্যোতি ভৌমিকের কথায়, ‘‘বিরল রোগের ওষুধের ক্ষেত্রে নীতি পরিবর্তন করেছে কেন্দ্র। যদি কোনও চিকিৎসক মনে করেন, বিদেশি ওষুধটির প্রয়োজন, তিনি প্রেসক্রিপশন করলে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সেটি আনতে বিশেষ অনুমোদন দিচ্ছে।’’ হাসপাতালের নিয়োনেটোলজি অ্যান্ড পেডিয়াট্রিক্সের ক্লিনিক্যাল ডিরেক্টর, চিকিৎসক সংযুক্তা দে জানাচ্ছেন, ছ’টি বাচ্চার উপরে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হচ্ছে ইঞ্জেকশনটির। সেটি দেওয়ার আগে রোগীকে ভর্তি করে শিরদাঁড়ার জল বার করতে হয়। তার পরে শিরদাঁড়ার মাধ্যমে ওষুধটি মস্তিষ্কে পাঠানো হয়। ১৪ দিনে চার বার এবং আজীবন চার মাস অন্তর তা দিতে হবে।

সংযুক্তা বলেন, ‘‘মস্তিষ্ক থেকে মেরুদণ্ডে বার্তা আসার মাধ্যমেই আমাদের হাঁটাচলা, ওঠাবসা এবং অঙ্গ সঞ্চালন নিয়ন্ত্রিত হয়। মোটর নিউরোনের মাধ্যমে সেই বার্তা শরীরে ছড়িয়ে যায়। কিন্তু এসএমএ-তে আক্রান্তদের সেই স্নায়ু শুকিয়ে যাওয়ায় মাংসপেশিগুলি ঠিক মতো কাজ করে না। এ বার এই দু’টি ওষুধ প্রয়োগ করে কিছু বাচ্চাকে সুস্থ রাখা সম্ভব হবে। তবে স্বপ্ন, সব আক্রান্তের কাছে ওষুধটি পৌঁছে দেওয়া।’’ ইঞ্জেকশন পাওয়া বিহারের আদিত্য ও রাঘব এবং হাবড়ার আহেলি বণিক এ দিন এসেছিল হাসপাতালে। হুইলচেয়ারের হাতল চেপে ধরে আহেলি বলে, ‘‘বড় হয়ে আমি শিক্ষিকা হব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement