ফিরহাদ হাকিম
আগামী বছর পুরভোট। আর তা নিয়েই সতর্ক কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমও।
শনিবার ‘টক টু মেয়র’ অনুষ্ঠানে কসবার এক বাসিন্দার একটি সমস্যাকে কেন্দ্র করে তিনি পুর প্রতিনিধি এবং পুর আধিকারিকদের সতর্ক করলেন। মেয়র সাফ জানিয়ে দেন, যে কোনও বিতর্কিত বিষয়েই পুরসভাকে সব সময়ে নিরপেক্ষ থাকতে হবে। বিতর্কিত কোনও বিষয়ের পিছনে পুর প্রতিনিধিদের কারও কোনও চাপ থাকলেও আধিকারিকেরা তার সামনে মাথা নোয়াবেন না। আধিকারিকদের নিরপেক্ষ ভাবেই কাজ করতে হবে।
এ দিন ‘টক টু মেয়র’ অনুষ্ঠানে কসবার এক বাসিন্দা ফোনে মেয়র ফিরহাদকে জানান, কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেআইনি কাজ হচ্ছে। অভিযোগ, তা হচ্ছে জনপ্রতিনিধির সহায়তা নিয়েই। সে সব জেনেও পুর অফিসারেরা নীরব থাকছেন বলেই অভিযোগ ছিল ওই ব্যক্তির। সেই প্রসঙ্গে তিনি তাঁর একটি জমিতে কী হয়েছে তা বিস্তারিত জানান টেলিফোনেই। তা শুনেই অনুষ্ঠানে হাজির থাকা অফিসার ইঞ্জিনিয়ারদের উদ্দেশে মেয়র ওই বার্তা দেন। তিনি বলেন, ‘‘কাউন্সিলরের চাপে কোনও অন্যায্য কাজ করবেন না। দু’জনের ঝগড়ায় পুরসভা কোনও পক্ষ নেবে না। কাউন্সিলর কোনও পক্ষের হয়ে চাপ দিলেও পুরসভা কোনও বিতর্কে জড়াবে না।’’
ওই ব্যক্তির কসবায় একটি জমি রয়েছে। তাঁর অভিযোগ, সেখানে বেআইনি নির্মাণ হচ্ছিল। তার প্রমাণ পেয়ে মেয়রের নির্দেশে কড়া পদক্ষেপ করা হয়। এর পরেই তাঁর জমির একটি অংশ খুঁড়ে মাটি ডাঁই করে ওই জমিরই পাশে জমা করা হয়। তার জেরে সেখানে জমে জল এবং আবর্জনা। কিছুটা আক্রোশের জেরেই ওই ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ। ঘটনার পিছনে এক পুর প্রতিনিধির মদত ছিল বলেই অভিযোগ। বিষয়টি মেয়রের কানে তুলতেই তিনি পুর প্রশাসনকে নিরপেক্ষ থাকার নির্দেশ দেন।
টক টু মেয়রে আসা অভিযোগের কতগুলি সমাধান হয়েছে, কতগুলির কাজ এখনও হয়নি, মেয়র এ দিন তার হিসেবও নেন। সেখানেই একাধিক দফতরের কাজে অসন্তোষ প্রকাশ করে মেয়র ওই সব দফতরের উপস্থিত কর্তাদের বলেন, ‘‘আপনারা শিক্ষাগত যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছেন ঠিকই। তবে আমরা কিন্তু মানুষের দয়ায় এই চেয়ারে বসেছি। তাই মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা, আমাদের সব চেয়ে বেশি। এটা আপনারা মনে রাখবেন। এই অনুষ্ঠানে যাঁরা সমস্যার কথা জানাচ্ছেন, সব সময়ে তা সমাধান করা পুরসভার কাজ। সেটা যাতে সময়ে হয় তা দেখবেন। না পারলে আমাকে জানাবেন।’’
বিল্ডিং, পরিবেশ, কর মূল্যায়ন, স্বাস্থ্য, সিভিল, নিকাশি, লাইসেন্স-সহ একাধিক দফতরের বাকি থাকা কাজের হিসেব দেন পুর কমিশনার খলিল আহমেদ। মেয়র বলেন, ‘‘যে সব কাজ বাকি রয়েছে তা দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করুন। কোন কাজ হচ্ছে তার তালিকা পোর্টালে পাঠান। আর যদি কোনও সমস্যা হয়ে থাকে, তা হলে মেয়রের দফতরে জানান।’’
উত্তর কলকাতার শিকদার বাগানের বাসিন্দা ভবানী বসাক বলেন, ‘‘মা-কে নিয়ে জীর্ণ বাড়িতে বাস করি। বৃষ্টি পড়লেই ভয় হয়। সংস্কার করতে চাই।’’ মেয়র তাঁকে বলেন, ‘‘বিল্ডিং দফতরের ডিজি এখানে রয়েছেন। তাঁকে বলে দিয়েছি যোগাযোগ করে নেবেন।’’ বাড়ির সামনের রাস্তায় জঞ্জাল জমে রয়েছে, মশা বাড়ছে জানিয়ে পিকনিক গার্ডেনের এক বাসিন্দা মেয়রকে ফোনে জানান। সোমবারের মধ্যেই ওই জঞ্জাল সরানো হবে বলে আশ্বস্ত করেন মেয়র। বেহালার রায় বাহাদুর রোডের এক বাসিন্দা জানান, সকাল থেকে তাঁদের এলাকায় আবর্জনা ফেলে রাখেন পুরসভার কর্মীরা। দুর্গন্ধ সহ্য করতে হয়। দুপুরের পরে তা খালি হয়। মেয়র নির্দেশ দেন, আবর্জনা গাড়িতে চাপিয়ে সোজা কম্প্যাক্টরে ফেলতে হবে। তার জন্য বাড়তি গাড়ি লাগলেও দেওয়া হবে।