ফিরহাদ হাকিম এবং শোভন চট্টোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
মেয়র নির্বাচনের আগে ফের শোভন চট্টোপাধ্যায়কে বার্তা তৃণমূলের। পুরদলের নেতা তথা মেয়র পদপ্রার্থী ফিরহাদ হাকিম রবিবার ফোন করলেন সদ্য প্রাক্তন মেয়রকে। খবর তৃণমূল সূত্রের। সোমবার মেয়র নির্বাচনের ভোটাভুটিতে অংশ নেওয়ার জন্য শোভনকে ফিরহাদ অনুরোধ করেছেন বলে খবর। শোভন অবশ্যই ভোট দিতে যাবেন, জানাচ্ছে শোভনের ঘনিষ্ঠ বৃত্ত। তবে ফিরহাদ হাকিমের তরফ থেকে এই ফোনালাপের বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি।
রবিবার দুপুর পৌনে ২টো নাগাদ শোভন চট্টোপাধ্যায়ের কাছে ফিরহাদ হাকিমের ফোন যায় বলে জানা গিয়েছে। সোমবার মেয়র নির্বাচনের ভোটাভুটিতে যোগ দেওয়ার মতো সময় শোভন পাবেন কি না, কিছুটা হালকা মেজাজে ফিরহাদ এমনই জানতে চান বলে শোভন ঘনিষ্ঠদের দাবি। শোভন জবাবে জানান যে, তিনি আপাতত অনেক কিছু থেকেই মুক্ত, তাই ভোট দিতে যাওয়ার মতো সময় অবশ্যই পাবেন। জানাচ্ছেন শোভনের ঘনিষ্ঠরা। প্রাক্তন মেয়রের জবাবে হবু মেয়র খুশিই হন বলে খবর। শোভনের এই সিদ্ধান্ত তাঁকে দলের অনুগত সৈনিক হিসেবে আরও একবার প্রমাণ করবে এবং সেটাই এখন তাঁর জন্য সবচেয়ে জরুরি— ফিরহাদ এমন পরামর্শ দেন বলেও তৃণমূল সূত্রে এ দিন জানা গিয়েছে।
রাজনীতির সূত্রেই শোভন এবং ফিরহাদ দীর্ঘ দিনের সহকর্মী। তাঁদের সম্পর্কও যে চিরকাল বন্ধুত্বপূর্ণই থেকেছে, মেয়র পদপ্রার্থী ঘোষিত হওয়ার দিনেই ফিরহাদ তা জানিয়েছিলেন। রবিবার দুপুরের ফোনালাপও বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল বলেই শোভন ঘনিষ্ঠরা জানাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: পুলিশকে সাত দিন ঘোল খাইয়ে খুনের কথা কবুল, গ্রেফতার রজতের স্ত্রী
সোমবার দুপুরে কলকাতা পুরসভায় মেয়র নির্বাচনের জন্য ভোটাভুটি হবে। কলকাতার প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র তথা ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মীনাদেবী পুরোহিতকে বিজেপি মেয়র নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছে। তৃণমূলের যে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা কলকাতা পুরসভায় রয়েছে, তাতে ফিরহাদ হাকিমের হারের কোনও সম্ভাবনাই নেই। দু’চার জন কাউন্সিরের ভোট এ ধার-ও ধার হলেও ফিরহাদ হাকিমকে মেয়র পদে বসাতে তৃণমূলের কোনও সমস্যা হবে না। তা সত্ত্বেও শোভন চট্টোপাধ্যায়ের কাছে রবিবার ফিরহাদ হাকিমের ফোন গিয়েছে বলে যে কথা শোনা যাচ্ছে, তাতে শোভনের প্রতি দলের বিশেষ বার্তা রয়েছে বলেই রাজনৈতিক শিবির মনে করছে।
আরও পড়ুন: নেতা বলে মানেনি তখন, তাই কেসিআর দাক্ষিণ্যে পিছিয়ে দক্ষিণ তেলঙ্গানা
শোভন চট্টোপাধ্যায় ভোট দিতে না গেলেও, বা উল্টো দিকে ভোট দিলেও, ফিরহাদ হাকিমই মেয়র পদে নির্বাচিত হবেন। কিন্তু শোভন তেমন কিছু করলে দলের মুখ পুড়বে। সে কথা মাথায় রেখেই তৃণমূল নেতৃত্ব ভোটাভুটি সংক্রান্ত বিষয়ে কোনও হুইপ জারি করেননি বলে তৃণমূলের একাংশের দাবি। হুইপ অগ্রাহ্য করে শোভন যদি অন্য দিকে ভোট দেন, বা ভোট দানে বিরত থাকেন, তা হলে নেতৃত্বকে অনেক বেশি অস্বস্তিতে পড়তে হবে। তাই এই ভোটাভুটিতে শোভনের অবস্থানকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না, এমন একটা বার্তাই দেওয়া হোক— চেয়েছিলেন তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ। হুইপ শেষ পর্যন্ত জারি হয়নি ঠিকই, কিন্তু শোভন চট্টোপাধ্যায়ের অবস্থানকে যে গুরুত্বই দেওয়া হচ্ছে না, এমন কোনও বার্তাও শাসক দল দিতে চাইল না। সেই কারণেই ভোটাভুটির আগের দিন মেয়র পদপ্রার্থী নিজে ফোন করলেন প্রাক্তন মেয়রকে। মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
যদিও এই ফোনালাপের কথা নিয়ে ফিরহাদ বা শোভন কেউই বাইরে কোনও রকম মুখ খোলেননি।