‘নিষিদ্ধ’, তা সত্ত্বেও দেদার আতসবাজি পুড়ল সল্টলেকে

অভিযোগ, বুধবার রাতভর সল্টলেকে করুণাময়ীর কাছে মেলাপ্রাঙ্গণে আতসবাজির প্রদর্শনী হয়েছে। ফেটেছে বড় বড় চরকি, তুবড়ি, রংমশাল। সল্টলেকবাসী অনেকেই বলছেন, বাজির ধোঁয়া-গন্ধে চারপাশ ভরে গিয়েছিল। সম্প্রতি আতসবাজির ধোঁয়া নিয়ে পরিবেশকর্মীরা সরব হয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৭ ০১:০৭
Share:

নেই পরোয়া: নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের কাছেই পোড়ানো হল আতসবাজি। বুধবার রাতে। ছবি: শৌভিক দে

বিদেশিদের কথা মাথায় রেখে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের ৫০ মিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে বাজি পোড়ানো নিষিদ্ধ করেছে প্রশাসন। অথচ দীপাবলির আগে সেই সল্টলেকই হয়ে উঠল বাজি পো়ড়ানোর সব থেকে বড় আখড়া!

Advertisement

অভিযোগ, বুধবার রাতভর সল্টলেকে করুণাময়ীর কাছে মেলাপ্রাঙ্গণে আতসবাজির প্রদর্শনী হয়েছে। ফেটেছে বড় বড় চরকি, তুবড়ি, রংমশাল। সল্টলেকবাসী অনেকেই বলছেন, বাজির ধোঁয়া-গন্ধে চারপাশ ভরে গিয়েছিল। সম্প্রতি আতসবাজির ধোঁয়া নিয়ে পরিবেশকর্মীরা সরব হয়েছেন। নানা সমীক্ষাতেও উঠে এসেছে সেই ধোঁয়ার বিপদের কথা। এমন পরিস্থিতিতে এই বাজি প্রদর্শনী পরিবেশকে কতটা দূষিত করল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পাশাপাশি এ প্রশ্নও তুলল, যুব বিশ্বকাপ চলাকালীন বাজি পো়ড়ানোর উপরে যে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছিল তা আদৌ কার্যকর হল কি?

পরিবেশকর্মীদের অনেকেই বলছেন, কাগজ-কলমে ৫০ মিটার ব্যাসার্ধের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ধোঁয়া তো আর আটকে থাকবে না। হাওয়ায় তা ছড়িয়ে পড়বেই। ফলে দূষণ ছড়ালই। পরিবেশকর্মীদের একাংশের অভিযোগ, প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের মদতেই এ সব অনুষ্ঠান বাড়ছে। ফলে দূষণের পিছনে প্রশাসনও দায় ঝেড়ে ফেলতে পারে না।

Advertisement

প্রশাসন যে আতসবাজি ঠেকাতে খুব একটা সক্রিয় নয় তা সম্প্রতি পরিবেশমন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের কথাতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। বাজি নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেছিলেন, ‘‘কালীপুজো, দীপাবলিতে তারাবাজি, চরকা, রংমশাল পোড়ানো পরম্পরা। এটাকে বন্ধ করা যাবে না।’’ অনেকটা একই সুর বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্তের গলাতেও। তিনি বলছেন, ‘‘এটা দীর্ঘ দিন ধরেই চলে আসছে। এক দিনে তো বদলানো সম্ভব নয়।’’ তবে তিনি এ-ও বলছেন, ‘‘নাগরিকদের কাছে আমাদের আর্জি, বাজি পো়ড়ানোর আনন্দ যেন অন্যের কষ্টের কারণ না হয়ে ওঠে। পরিবেশকে রক্ষা করেই আনন্দ করা উচিত।’’

পরিবেশবিদেরা বলছেন, আতসবাজিতে থাকা রাসায়নিক পুড়ে যে ধোঁয়া বেরোয় তা শরীরে যেমন প্রভাব ফেলে তেমনই আশপাশের লোকজনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ধোঁয়া থেকে শ্বাসনালী ও ফুসফুসের নানা রোগ হতে পারে। এবং বাস্তব ছবিটা হচ্ছে, ফি বছরই আতসবাজির এমন প্রদর্শনী এবং সার্বিক ভাবে ব্যবহার বাড়ছে।

এই ধরনের অনুষ্ঠান যে ভাবে বা়ড়ছে তাতে উদ্বিগ্ন রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের একাংশও। তাঁরা বলছেন, এমন ব্যাপক হারে বাজি পোড়ানো শুরু হলে তার কুপ্রভাব কিন্তু আমজনতাকেই ভুগতে হবে। তা হলে এ ক্ষেত্রে তাঁরা কোনও পদক্ষেপ করছেন না কেন? পর্ষদ সূত্রের ব্যাখ্যা, আতসবাজির উপরে কোনও আইনি বিধিনিষেধ নেই। শীর্ষ আদালতের নির্দেশে দিল্লির দীপাবলি দূষণহীন হয়েছে। এ রাজ্যে বাজির দূষণ ঠেকাতে নাগরিকদের সচেতনতার উপরেই ভরসা রাখছে পর্ষদ। পরিবেশকর্মীরা অবশ্য বলছেন, বাজি ঠেকাতে আদালতের দ্বারস্থ হবেন তাঁরা।

সচেতনতা নাকি আদালতের নির্দেশ, বাজি ঠেকাতে কোনটা কার্যকর হয় সেটাই এখন দেখার!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement