চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ভাবিয়ে তুলছে সারদা কমিশনের কর্তাদেরও। শুক্রবার দমকলের অফিসারেরা ওই অফিস পরিদর্শন করে জানিয়ে দিয়েছেন, অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল। যা শুনে রীতিমতো আতঙ্কে কমিশন। কারণ, ওই অফিসেই রয়েছে সারদা কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সব ফাইলপত্র। আমানতকারীদের রেকর্ড-সহ সারদার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির নথিপত্র।
ওই অফিসেই গত দেড় বছর ধরে কাজ করে চলেছেন কমিশনের চেয়্যারম্যান শ্যামলকুমার সেন, দুই সদস্য অম্লান বসু, যোগেশ চট্টোপাধ্যায়-সহ সেক্রেটারি ও অন্য অফিসার-কর্মীরা। এ দিন দমকল দফতরের অফিসারদের বার্তা সকলেরই অস্বস্তি বাড়িয়েছে। আর চেয়ারম্যানের চেম্বার দেখে আঁতকে ওঠেন দমকলের অফিসারেরা। তাঁদের কথায়, “ওই ঘরে ভেন্টিলেশনের কোনও ব্যবস্থা নেই। আগুন লাগলে ধোঁয়াও বেরোবে না। এ তো ভয়ঙ্কর অবস্থা। সত্বর ওই ঘরে জানলার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।” এমনকী, ওই অফিসের উপরে কোনও জলাধারও নেই বলে কমিশন সূত্রে জানানো হয়েছে। যা শুনে স্তম্ভিত দমকল-কর্তারা। আরও জানা গিয়েছে, রাতে রান্নাবান্নাও হয় ওই অফিসের বাইরে।
কমিশন সূত্রের খবর, চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনালে অগ্নিকাণ্ডের পরে কমিশনের কর্তাদের নজরে আসে অগ্নি-নিরাপত্তার বিষয়টি। তাঁরাই খবর দেন দমকল দফতরকে। এ দিন বিকেলে কমিশনে ঢুকেই দমকলের কর্তারা দেখেন, মূল প্রবেশদ্বারের সামনে পড়ে রয়েছে কাগজভর্তি সারি সারি বস্তা। এমনকী, চেয়ারম্যানের চেম্বারের দেওয়ালেও ডাঁই করে রাখা হয়েছে বস্তাভর্তি আবেদনপত্র। ওই ধরনের দাহ্য পদার্থ রাখার জন্য যেমন অগ্নি-নিরাপত্তা থাকা দরকার, তা নেই বলে কমিশনের চেয়ারম্যানকে জানিয়ে দেন তাঁরা।
সেক্রেটারির ঘরের বাইরে করিডরের উপরে ছিল ‘ড্রাই ফায়ার এক্সটিংগুইশার’ পাউডারের সিলিন্ডার। আগুন লাগলে দ্রুত ওই পাউডার ছড়িয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়। কিন্তু কমিশনের কোনও কর্মী তা চালাতেই পারেন না। দমকলের অফিসারেরা এ দিনই তা-ও শিখিয়ে দিলেন কমিশনের নিরাপত্তারক্ষীদের। আর পুরো বিষয়টি তদারকি করলেন কমিশনের অন্যতম সদস্য প্রাক্তন আইপিএস যোগেশ চট্টোপাধ্যায়।
কমিশনের অফিস দেখে একগুচ্ছ সুপারিশও মৌখিক ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন সেখানকার কর্তাদের। দমকল দফতরের বক্তব্য, একটি মাত্র সিঁড়িতে হবে না। স্পাইরাল সিঁড়ি বানাতে হবে। চেয়ারম্যানের চেম্বারে জানলা করতে হবে। অন্য ঘরগুলিতেও ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করে তাঁরা আরও জানিয়েছেন, ফ্লোরে স্প্রিঙ্কলারের ব্যবস্থাও করতে হবে। অফিস চলাকালীন ড্রাই পাউডার দিয়ে ছোটখাটো আগুন নেভানো যেতে পারে। কিন্তু রাতবিরেতে আগুন লাগলে পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হতে পারে বলে কমিশনের কর্তাদের সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা।
দমকলের ফিরিস্তি পেয়ে রীতিমতো চিন্তায় পড়েছে কমিশন। এ ব্যাপারে কমিশনের কেউ কেউ জানান, রাজ্য সরকারের পূর্ত দফতর ওই অফিস বানিয়েছে। দমকল দফতরের সুপারিশগুলি দ্রুত রূপায়িত করার জন্য পূর্ত দফতরের কাছে লিখিত ভাবে জানাবে কমিশন।