মৃতার দেহ বের নিয়ে আসছে উদ্ধারকারী দল।
মধ্য কলকাতার গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিয়ের বহুতলে বিধ্বংসী আগুন মৃত্যু হল এক বৃদ্ধার। পুলিশ সূত্রে খবর, বাড়িটিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ার সময়ে ওই বৃদ্ধা নিজের ঘরের শৌচাগারের ভিতরে আটকে পড়েছিলেন। রাতেই তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। বৃদ্ধার পরিচয় গভীর রাত পর্যন্ত জানা যায়নি বলেই পুলিশ সূত্রে খবর। দমকল এবং কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর তৎপরতায় প্রাণ বাঁচল বহুতলের বাসিন্দাদের। যদিও তার মধ্যেই আতঙ্কে বহুতলের একটি ফ্ল্যাট থেকে পড়ে গুরুতর জখম হল ১৪ বছরের এক কিশোর।
শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ হঠাৎ করেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে মধ্য কলকাতার গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউয়ের একটি আটতলা বাড়িতে। বাসিন্দাদের দাবি, একতলার মিটার বক্স থেকে আগুন ছড়ায়। বাসিন্দারা সেই আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেও দ্রুত সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে বহুতলের বিভিন্ন জায়গায়। আতঙ্কে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায় বাসিন্দাদের মধ্যে।
পুলিশের দাবি, বাড়ির বাসিন্দাদের যখন দমকলকর্মীরা উদ্ধার করছিলেন তখন ১৪ বছরের ওই কিশোরও উপর থেকে নীচে পড়ে গিয়ে আহত হয়। দমকলের ১০টি ইঞ্জিন আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ করতে ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। স্থানীয়েরাও জানান, আগুনের কারণে ওই বাড়ির ছাদে আটকে পড়া লোকজনকে দমকলকর্মীরা যখন উদ্ধার করছিলেন, সেই সময়ে ওই কিশোর নীচে পড়ে যায়। হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে।
আরও পড়ুন: ‘হাজতে মৃত্যু’ বিজেপি কর্মীর, দেহ নিয়ে দিনভর টানাপড়েন শহরে
প্রাথমিক ভাবে ৬টি আগুন নেভানোর ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। পরে আরও ইঞ্জিন গিয়ে পৌঁছয় ঘটনাস্থলে। তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ততক্ষণে গোটা বাড়ি ঘন কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায় বাসিন্দাদের। দমকল আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। কিন্তু তার মধ্যেই আতঙ্কে এক কিশোর পড়ে যায় বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। তাকে এলাকার বাসিন্দারাই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। বাকি বাসিন্দারা পুলিশের নির্দেশে ছাদে উঠে যান। অন্যদিকে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হাই়ড্রোলিক ল্যাডার নিয়ে আসে দমকল। কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যরা দমকলকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সেই ল্যাডারে করে উদ্ধার করেন অধিকাংশ বাসিন্দাদের।
পুলিশ জানিয়েছে, ছ’তলা বাড়িটিতে ৫০-৬০ জন আবাসিক থাকেন। কিছু অফিসও রয়েছে। আগুন লাগার পরে ওই আবাসিকেরা বহুতলের ছাদে উঠে আটকে পড়েন। দমকলকর্মীরা তখন ওই বাড়িটির পাশের একটি বহুতলে উঠে মই দিয়ে তাঁদের উদ্ধারের কাজ শুরু করেন। আবাসিকেরা জানান, আগুন মিটার বক্সে লেগে ছড়িয়ে পড়ে।
বাড়িটির এক আবাসিক শেখ সালাহউদ্দিন জানান, আগুন লাগার পর ধোঁয়ায় ভরে যায় গোটা বাড়িটি। বাড়িটি বহু পুরনো। তাতে ওঠানামার জন্য একটি মাত্রই সিঁড়ি রয়েছে। সেখান দিয়েই আবাসিকেরা প্রথমে হুড়মুড়িয়ে নামতে শুরু করেন। কিন্তু ধোঁয়ার কারণে কিছু দেখতে না পেয়ে আগুনের হাত থেকে বাঁচতে তাঁরা বহুতলের ছাদে উঠে যান।
আরও পড়ুন: করোনা আক্রান্ত দিলীপ ঘোষ, ভর্তি করা হল আমরি হাসপাতালে
এর পর দমকলকর্মীরা দুই বাড়ির মাঝে মই রেখে আবাসিকদের উদ্ধারের কাজ শুরু করেন। শেখ মানোয়ার নামে এক বাসিন্দা জানান, উদ্ধারকাজ চলার সময়ে ওই বালকটি পড়ে যায়। তিনি জানান, বহুতলে লিফট থাকলেও অধিকাংশ সময়েই সেটি কাজ করে না। বাড়ির নীচেই জমে রয়েছে দাহ্যবস্তু। আগুনের কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে দমকল বিভাগ জানায়। রাত ১২টার পরে আগুন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসে বলেই দমকলের তরফে দাবি করা হয়।
ঘন ধোঁয়ার জন্য দমকলকর্মীদের প্রথম দিকে কাজে সমস্যা হচ্ছিল। পরে যদিও তাঁরা সেই ধোঁয়া পেরিয়েই আগুনের উৎসস্থলে পৌঁছন এবং আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন। এক দমকল আধিকারিক বলেন, ‘‘ছাদের দরজা খোলা ছিল বলে বড় বিপর্যয় এড়ানো গিয়েছে। না হলে যে রকম আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল তাতে স্টিফেন কোর্টের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারত।”