প্রতীকী ছবি।
বই-খাতা নিয়ে সিমেন্টের চাতালে বসে রয়েছে বাচ্চারা। ঘড়িতে বেলা ১১টা। আস্তে আস্তে বাড়ছে রোদের তেজ। ওই ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে প্রাক্-প্রাথমিকের শিশুরা সোমবার তাদের মা-বাবার হাত ধরে প্রথম স্কুলে এল। তবে ক্লাসঘরে নয়, তারা জীবনে প্রথম স্কুলের স্বাদ পেল বাগবাজার সর্বজনীন দুর্গাপুজোর মাঠে।
এ দিন বাগবাজার এলাকায় ৯টি প্রাথমিক স্কুলের প্রাক্-প্রাথমিক, প্রথম শ্রেণি এবং দ্বিতীয় শ্রেণির ক্লাস
হল। অভিভাবকেরা জানালেন, দীর্ঘ সময় পরে স্কুল চালু হওয়ায় তাঁরা খুশি। তবে ছেলেমেয়েদের স্কুলে নিয়ে গিয়ে পড়ালে তাঁরা অনেক বেশি নিশ্চিন্ত হতেন।
এ দিন অবশ্য বাগবাজার সর্বজনীনের মাঠে পড়ুয়াদের ভিড় ছিল ভালই। সেখানে ‘পাড়ায় শিক্ষালয়’ সূচনার আগে কলকাতা সর্বশিক্ষা মিশনের চেয়ারম্যান কার্তিক মান্না বলেন, ‘‘প্রথম দিন বাচ্চারা খেলাধুলো-নাচ-গান করেছে, গল্প-কবিতা শুনেছে। সহপাঠীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছে ওদের। আর পড়াশোনা তো হয়েছেই।’’ প্রাক্-প্রাথমিকের পড়ুয়া রাজ চক্রবর্তী এ দিন বই-খাতা নিয়ে বসতে না বসতেই চকলেট পেল শিক্ষিকাদের কাছ থেকে।
তবে পড়ুয়াদের খোলা জায়গায় ক্লাস করানোর ব্যাপারে আপত্তি রয়েছে অনেক অভিভাবকের। এ দিন বাগবাজারের মাঠে অপেক্ষা করা, প্রাক্-প্রাথমিকের এক ছাত্রের মা তিয়াসা ঘোষাল দাস বলেন, ‘‘মাঠের মধ্যে রোদ্দুরে বসে রয়েছে ছেলে। এত ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ও যদি ছুটে কোথাও চলে যায়, লক্ষ রাখবে কে?’’ দিয়া গায়েন নামে আর এক ছাত্রীর মা পদ্মা গায়েন বলেন, “এখানে কাছাকাছি শৌচাগার কোথায়? কোথায়ই বা পানীয় জল? আর প্রতিদিন তো মেয়ের সঙ্গে এসে দু’ঘণ্টা অপেক্ষা করতে পারব না। ওরা তো প্রথম দিন স্কুলবাড়িটাকেই দেখতে পেল না।’’
যদিও স্থানীয় পুর প্রশাসন এবং ওই ৯টি স্কুলের শিক্ষকদের তরফে চেষ্টার ত্রুটি ছিল না। ওই এলাকার প্রাথমিক স্কুল মহারাজা কাশিমবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষিকা তনুশ্রী রায় বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, পড়ুয়াদের জন্য পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কাছেই ছিল শৌচাগার। তিনি জানান, রোদ থেকে ছেলেমেয়েদের বাঁচাতে পরের দিন থেকে ছাউনি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এ দিন পড়ুয়াদের মিড-ডে মিলে ছিল ফ্রায়েড রাইস এবং আলুর দম।
দক্ষিণের যোধপুর পার্ক বয়েজ় স্কুলের মাঠে এ দিন ওই স্কুল-সহ মোট পাঁচটি স্কুলের তৃতীয় এবং ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়াদের ক্লাস হয়। ত্রিপলের উপরে বসে ক্লাস করে ছাত্রছাত্রীরা। মাথার উপরে ছিল ছাউনি। যোধপুর পার্ক বয়েজ়ের প্রধান শিক্ষক অমিত সেন মজুমদার বলেন, “ছেলেরা স্কুলের শৌচাগার ব্যবহার করেছে। প্রথম দিন ওদের খেলাচ্ছলে বিভিন্ন জিনিস শেখানো হয়েছে।’’ তবে এক অভিভাবক সুজিত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এ ভাবে পাড়ায় শিক্ষালয়ে এক-দু’দিন নিয়ে এসে স্কুলে আসার অভ্যাস তৈরি করে নিজের নিজের স্কুলের শ্রেণিকক্ষে পড়ুয়াদের ক্লাস করার অনুমতি দেওয়া হোক।’’
কার্তিকবাবু জানান, কলকাতা জেলায় মোট ৫২১টি কেন্দ্রে পাড়ায় শিক্ষালয় হয়েছে। পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার ছিল ৬০ শতাংশ।
অন্য দিকে, মাথার উপরে ছাউনির ব্যবস্থা না করেই হাওড়ায় সোমবার থেকে শুরু হল পাড়ায় শিক্ষালয়। শুধু বিদ্যালয় বা তার আশপাশের মাঠ নয়, হাওড়া পুরসভার পার্কগুলিতেও ক্লাস করল পড়ুয়ারা। কিন্তু বৃষ্টি হলে বা গরম বাড়লে ছাউনির ব্যবস্থা কে করবে, তা নিয়ে জেলা স্কুলশিক্ষা দফতর ও পুরসভার মধ্যে চাপান-উতোর শুরু হয়েছে। স্কুলশিক্ষা দফতরের দাবি, গ্রামাঞ্চলে পঞ্চায়েত ওই ছাউনি-সহ শৌচাগার ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করছে। শহরে এই কাজ করার জন্য পুরসভাকে বলা হয়েছে। যদিও পুরসভার বক্তব্য, এমন প্রস্তাব তারা পায়নি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান কৃষ্ণ ঘোষ বলেন, ‘‘প্রথম দিনেই সবটা করা যায়নি। ছাউনি-সহ অন্যান্য ব্যবস্থা দু’-এক দিনের মধ্যে হয়ে যাবে। গ্রামের কেন্দ্রগুলিতে পঞ্চায়েত অস্থায়ী ছাউনি-সহ পানীয় জল ও শৌচাগারের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। শহরে ওই কাজ পুরসভা করে দেবে।’’ যদিও হাওড়া পুরসভার চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পাড়ায় শিক্ষালয়ের জন্য আমাদের কাছে শিক্ষা দফতর পার্ক চেয়েছিল। আমরা ২৯টি পার্ক দিয়েছিলাম। কিন্তু মাথায় ছাউনি করার কথা আমাদের জানানো হয়নি। জানালে ব্যবস্থা করব।’’