সমাগম: মিলন মেলার অস্থায়ী শিবিরে সভায় যোগ দিতে আসা সমর্থকেরা।ছবি: শৌভিক দে
‘দিদিকে একটি বার কাছ থেকে দেখন যাবে নাই!’
বুকে স্বেচ্ছাসেবকের ব্যাজ ঝোলানো যুবকের হাত ধরে বারবার বলছিলেন মালদহের নয়না বিবি। কিছুতেই তাঁকে বোঝানো যাচ্ছিল না, সেটা সম্ভব নয়। শেষমেশ নাছোড়বান্দা ওই বৃদ্ধাকে ধমকের সুরেই ‘ক্যান, চাঁচলের মঞ্চে দিদিকে কাছ থেকে দেখস নাই,’ বললেন নয়না বিবির দলের আর এক জন মনসা বিবি।
শুধু মালদহের ওই বৃদ্ধাই নন, শনিবার ২১শে জুলাইয়ের সভায় গিয়ে এক বার অন্তত ‘দিদি’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কাছ থেকে দেখার ইচ্ছে নিয়ে শুক্রবার বিকেলেও কাতারে কাতারে লোক ঢুকেছেন শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণের বিভিন্ন অস্থায়ী শিবিরে। আলিপুরে ‘উত্তীর্ণ’ স্টেডিয়াম, কসবা রাজডাঙার গীতাঞ্জলি স্টেডিয়াম, বাইপাসের মিলন মেলা-সহ আরও কয়েকটি জায়গায় তৈরি হয়েছে শিবির। সব জায়গাতেই শুক্রবার দুপুর থেকে ‘মেলা’র মতো ভিড় উপচে পড়তে দেখা গেল। বিকেল চারটে বাজলেও ভাত, আলু-পটলের তরকারি, বাঁধাকপি, ডিমের ঝোল, কুমড়ো-আলু-ছোলার তরকারি, ডাল রান্নায় বিশ্রাম নেই রাঁধুনিদের। কোনও শিবিরে হেঁশেলের দায়িত্বে ১৫০ জন, তো কোথাও আবার ৫০০ জন। বিকেলের পরেও সে সব শিবিরে খাবারের স্টলে লম্বা লাইন। ভিড় সামাল দিতে শেষের দিকে বহু ক্ষেত্রেই পাতে পড়েছে ঝোল ছাড়া সেদ্ধ ডিম।
আলিপুরের ‘উত্তীর্ণ’ স্টেডিয়ামে চলছে রান্নার তোড়জোড়। শুক্রবার।ছবি: শৌভিক দে
এত লোককে সামলাচ্ছেন কী ভাবে? মিলন মেলার এক স্বেচ্ছাসেবকের কথায়, ‘‘যত লোকই আসুক, কোনও সমস্যা হবে না।’’ থাকা, খাওয়া থেকে শুরু করে মেডিক্যাল, পুলিশ, দমকলের ক্যাম্প— সবই রয়েছে অস্থায়ী শিবিরগুলির বাইরে। সর্ব ক্ষণের জন্য স্থানীয় নেতৃত্ব তাতে কড়া নজর রাখলেও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ শীর্ষ নেতারা মাঝেমধ্যে এসে তদারকি করে যাচ্ছেন খাবারদাবার থেকে সব কিছুর। সঙ্গে রয়েছে সিসি ক্যামেরার নজরদারিও।
আলিপুরের ‘উত্তীর্ণ’তে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরেই জলপাইগুড়ি, মুর্শিদাবাদের লোকজনদের থাকার বন্দোবস্ত হয়েছে। এ দিন সেখানেই ভুল করে চলে এসেছিলেন কোচবিহারের গোপালচন্দ্র দাস। বললেন, ‘‘বুঝতে পারিনি তো, তাই এখানে চলে এসেছি। দলের সকলের খাওয়া হয়েই বাইপাসে চলে যাব।’’ অন্য দিকে চিড়িয়াখানা, হাওড়া ব্রিজ ঘুরে ফেরার পথে জিনস্ কিনে বেজায় ঠকেছেন বলে মিলন মেলার শিবিরে বসে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছিলেন উত্তর দিনাজপুরের রহমত আলি ও তাঁর তিন বন্ধু। রহমত বললেন, ‘‘চারটে প্যান্ট ৮০০ টাকা নিল। তাও কাপড়টা ভাল নয়।’’
এই মিলন মেলাতেই এসে উঠেছেন উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, পুরুলিয়া-সহ আরও দু’-একটি জেলার কর্মী, সমর্থকেরা। সেখানেই ‘প্রোগ্রেসিভ ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর চিকিৎসা কেন্দ্রে বসে জিরিয়ে নিচ্ছিলেন সংগঠনের সভাপতি নির্মল মাজি। ভোর থেকে শিয়ালদহ, কলকাতা স্টেশন ঘুরে সব শিবিরের চিকিৎসা কেন্দ্রে ঘুরে বেরিয়ে তদারকি করছেন। তিনি বললেন, ‘‘মাথা যন্ত্রণা, অম্বলের সমস্যা নিয়েই বেশি লোক আসছেন। কয়েক জনের জ্বর, সর্দিও রয়েছে।’’
কসবার গীতাঞ্জলি স্টেডিয়ামে ঠাঁই মিলেছে মালদহ, বালুরঘাটের লোকজনের। তাঁদেরই এক জন মদন টুডুর সকাল থেকেই মাথার যন্ত্রণা হওয়ায় দুপুরে তেমন কিছু মুখে তোলেননি। তবে পড়ন্ত বিকেলে ‘‘ডাক্তারবাবুর দেওয়া দু’টি বড়ি খেয়ে ভালই আছি’’ বলে গলায় মাদল ঝুলিয়ে দৌড় দিলেন মদন। ক্যাম্পের বাইরে তাঁর সঙ্গীরা তত ক্ষণে ধামসা, মাদল বাজিয়ে গান ধরেছেন। যোগ দিলেন তিনিও।