ফাইল চিত্র।
বছর তিনেক আগে গড়িয়াহাটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পরে শহরজুড়ে রাস্তার দু’পাশে হকারদের দোকানের উপরে ‘বিপজ্জনক’ প্লাস্টিকের ছাউনি সরানোর কথা ঘোষণা করেছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। গড়িয়াহাটে প্লাস্টিকের ছাউনি থেকেই দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল সেই আগুন। কিন্তু তিন বছর পেরিয়ে গেলেও ফুটপাতে হকারদের স্টল থেকে প্লাস্টিকের ছাউনি সরানোর কাজ হয়নি। এর মধ্যে ওই ছাউনির জেরে তৈরি অন্য বিপদের কথাও উঠে এসেছে সম্প্রতি।
গত শুক্রবার কলকাতা পুরসভার অধিবেশনে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর ইলোরা সাহা অভিযোগ করেন, কেবল আগুন লাগার কারণই নয়, শহরের ফুটপাতের ওই সব প্লাস্টিকের ছাউনি বর্ষার সময়ে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার মশার জন্মস্থানেপরিণত হচ্ছে।
ইলোরাদেবীর আরও দাবি, ‘‘আমার ওয়ার্ড বড়বাজার লাগোয়া। উত্তর কলকাতার এই এলাকায় প্রচুর পুরনো বাড়ি রয়েছে। ফুটপাতে হকারদের প্লাস্টিকের স্থায়ী ছাউনিতে বর্ষার জল জমে থাকে। সেখানে মশার লার্ভা জন্ম নেয়। এলাকাবাসীরা অভিযোগ করেছেন, প্লাস্টিকের ছাউনির মাথায় জমা জলে জন্মানো মশার উৎপাতে তাঁরা টিকতে পারছেন না।’’ অভিযোগের উত্তরে ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ জানিয়েছিলেন, পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ ও জঞ্জাল অপসারণ বিভাগের পক্ষ থেকে যৌথ ভাবে অভিযান চালিয়ে এই সমস্ত স্থায়ী ছাউনির হকারদের সতর্ক করা হবে। কাউন্সিলরদেরও সজাগ থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তবে প্রশ্ন উঠেছে, বছর তিনেক আগেই গড়িয়াহাটে আগুন লাগার পরে পুরসভার তরফে শহর জুড়ে থাকা ফুটপাতে প্লাস্টিকের ছাউনি সরিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। এই বিষয়ে পুরসভার তরফে পুলিশকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এর পরে কিছু দিন ফুটপাত থেকে হকারেরা প্লাস্টিকের ছাউনি সরিয়ে ফেললেও পুনরায় সে সব ফিরে এসেছে বলে অভিযোগ।
গড়িয়াহাটে অগ্নিকাণ্ডের পরেই ফুটপাতের স্টল থেকে প্লাস্টিকের ছাউনি সরাতে হকার সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। কলকাতা পুরসভার তরফে পুলিশকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, কোনও ভাবেই ফুটপাতে প্লাস্টিক থাকবে না। ফুটপাত থেকে প্লাস্টিক সরিয়ে হকারদের জন্য তাইল্যান্ড মডেলের অনুকরণ করা হবে বলে জানিয়েছিলেন মেয়র। ওই মডেল অনুযায়ী, হকারদের স্টলের মধ্যে বসানো থাকবে চৌকো ছাতা।
কিন্তু তিন বছর পার হলেও সে সবের কিছুই হয়নি বলে অভিযোগ। পুরসভার এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘পুরসভার প্রস্তাব মেনে নিতে রাজি হননি হকাররাই। যার জন্য প্লাস্টিক সরানো এখনও সম্ভব হয়নি।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতা পুরসভার এক তৃণমূল কাউন্সিলরের কথায়, ‘‘শহর জুড়ে প্লাস্টিক সরাতে গিয়ে রাজনৈতিক চাপ এসে পড়েছিল। কারণ, ফুটপাতে হকারদের স্থায়ী ছাউনি থাকে না। রোদ, বর্ষা থেকে বাঁচতে তাঁদের প্লাস্টিকের ছাউনিই ভরসা। এ ক্ষেত্রে ওই ছাউনি সরিয়ে নিলে তাঁদের ব্যবসার বড় ক্ষতিহয়ে যাবে বলে সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছিল।’’
কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (হকার পুনর্বাসন) দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘ফুটপাতে হকারদের প্লাস্টিকের ছাউনির বিপদ তো রয়েছেই। কিন্তু এখনও প্লাস্টিকের বিকল্প ব্যবস্থা কিছু করা যায়নি। তবে পুরসভা শহর জুড়ে প্লাস্টিকের ছাউনি সরিয়ে দেবে। এ বিষয়ে কী করা যায়, ভাবনাচিন্তা চলছে।’’