Coronavirus in West Bengal

তিন সন্তানের ‘ত্যাজ্য-মা’! কোভিড-মুক্ত বৃদ্ধা ১ মাস ধরে পড়ে আছেন বাঙুরের করোনা বেডেই

করোনা-আক্রান্ত হওয়ায় পূরবী মুখোপাধ্যায় নামের ওই বৃদ্ধাকে গত ৯ এপ্রিল এম আর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলেন তাঁর মেয়ে সোমা বিশ্বাস।

Advertisement

সারমিন বেগম

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২১ ১৫:০৮
Share:

পূরবী মুখোপাধ্যায়।

করোনা-মুক্ত হওয়ার এক মাস পরেও কোভিড-ওয়ার্ড থেকে ‘মুক্তি’ পাচ্ছেন না এক বৃদ্ধা। করোনা-আক্রান্ত হওয়ায় পূরবী মুখোপাধ্যায় নামের ওই বৃদ্ধাকে গত ৯ এপ্রিল এম আর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলেন তাঁর মেয়ে সোমা বিশ্বাস। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, করোনা-মুক্ত হওয়ার পর গত ২০ এপ্রিল তাঁরা পূরবীকে ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে বাড়ি নিয়ে যেতে রাজি হননি ওই বৃদ্ধার পরিবার বা আত্মীয়স্বজনের কেউই। অগত্যা এখনও হাসপাতালের কোভিড-ওয়ার্ডেই পূরবীর দিন কাটছে। করোনা রোগীদের সঙ্গেই।

Advertisement

গত চার বছর ধরে বেহালার একটি বৃদ্ধাশ্রমে থাকতেন পূরবী। তাঁকে সমস্ত রকম ভাবে সাহায্য করতেন বোনপো প্রবীর মুখোপাধ্যায়। কিন্তু করোনামুক্ত হওয়ার পর মাকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে সোমা উদ্যোগী হননি। তাঁর সঙ্গে মায়ের ব্যক্তিগত সম্পর্ক মোটেও ভাল নয় বলে জানিয়েছেন সোমা। যে বৃদ্ধাশ্রমে পূরবী থাকতেন, তাদের বক্তব্য, হাসপাতাল থেকে আগে পূরবীকে বাড়িতে যেতে হবে। তার পর বৃদ্ধাশ্রমে আসতে পারেন তিনি। কিন্তু সোমা তাঁকে বাড়িতে নিয়ে যেতে নারাজ। তাঁর কথায়, ‘‘ছোট থেকে মা আমাদের উপর অনেক অত্যাচার করেছেন। ফাঁসিতে চড়তে রাজি, কিন্ত ওঁকে বাড়িতে আনব না।’’ সোমার দুই ভাইও মাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে উদ্যোগ তো দূরঅস্ত্‌, কোনও খোঁজখবরও নেননি। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে আনন্দবাজার ডিজিটাল। কিন্তু যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

অন্য দিকে, যে বোনপো পূরবীকে আর্থিক ভাবে সাহায্য করেন সেই প্রবীরও মাসিকে বাড়িতে নিয়ে যেতে রাজি নন। তিনি বলেন, ‘‘আমার নিজের বয়স ষাটের উপরে। বাড়িতে তেমন জায়গাও নেই। মাসির সব খরচই আমি দিই। বাকিদেরও তো একটু দায়িত্ব নিতে হবে!’’

Advertisement

দায়িত্বের দায় এড়িয়ে যাওয়ার এই টানাপড়েনে হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডেই থেকে যেতে হয়েছে পূরবীকে। রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে আনন্দবাজার ডিজিটালের তরফে পূরবীদেবীর কথা জানানো হয়। সব শুনে তিনি বলেন, ‘‘অনেক পরিবারই আছে, প্রিয় জন সুস্থ হওয়ার পরেও তাঁকে বাড়ি নিয়ে যেতে চায় না। দায়িত্ব নিতে হয় আমাদেরই। এই বৃদ্ধার দায়িত্বও আপাতত আমরা নিয়েছি।’’

তবে করোনা-মুক্ত হওয়ার পরেও হাসপাতালে কোভিড রোগীদের সঙ্গে ওই ওয়ার্ডে থাকাটা পূরবীর জন্য শারীরিক এবং মানসিক— দু’দিক থেকেই ক্ষতিকর বলে জানচ্ছেন চিকিৎসকরা। বেশি দিন করোনা ওয়ার্ডে থাকলে দ্বিতীয় কোনও সংক্রমণের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না বলে জানিয়েছেন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই। তাঁর কথায়, ‘‘বেশি দিন যদি করোনা রোগীদের সঙ্গে ওই বৃদ্ধাকে রাখা হয়, তা হলে তাঁর দ্বিতীয় কোনও সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে। হাসপাতালে যদি রাখতেই হয়, তা হলে যত দ্রুত সম্ভব ওই বৃদ্ধাকে জেনারেল ওয়ার্ডে সরানো উচিত।’’ মনোরোগ চিকিৎসকদের মতে বেশি দিন করোনা ওয়ার্ডে থাকলে মনের সমস্যা দেখা দিতে পারে তাই দ্রুত তাঁকে স্বাভাবিক পরিবেশে নিয়ে যাওয়া দরকার।

রাজ্যে করোনা সংক্রমণের চিত্রটা অত্যন্ত উদ্বেগের। বেশির ভাগ হাসপাতালেই শয্যা নেই। করোনার প্রথম ঢেউ থেকেই এমআর বাঙুর রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ করোনা হাসপাতাল। যেখানে শুধুমাত্র করোনা রোগীদেরই চিকিৎসা হয়। সেই হাসপাতালেরই কোভিড ওয়ার্ডে যদি কোনও করোনা-মুক্তকে রেখে দেওয়ার জন্য শষ্যা আটকে তাকে, তা হলে সেটা অত্যন্ত খারাপ বলেই মনে করেন অনির্বাণ। তাঁর কথায়, ‘‘এই রকম একটা অতিমারি পরিস্থিতিতে এমন হওয়াটা বাঞ্ছনীয় নয়।’’

এমআরবাঙুর হাসপাতালের সুপার চিকিৎসক শিশির নস্কর জানান ‘‘আমরা ওঁকে তো রাস্তায় ফেলে দিতে পারি না। পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আপাতত আমরাই ওঁর খেয়াল রাখছি।’’

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আপাতত ‘মুক্তি’র দিন গুনছেন করোনামুক্ত পূরবীও। শেষ পর্যন্ত কোথায় ‘ঠাঁই’ হবে তাঁর, জানেন না কিছুই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement