সুখেন দাস
গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় এক যুবককে সকালে হাসপাতালে ভর্তি করে গিয়েছিলেন তাঁর আত্মীয়স্বজনেরা। কিন্তু বিকেলে হাসপাতালে গিয়ে সেই রোগীকেই আর খুঁজে পাননি তাঁর পরিজনেরা। এর প্রায় চার ঘণ্টা পরে হাসপাতালের বন্ধ শৌচাগারের ভিতর থেকে উদ্ধার হল ওই যুবকের নিথর দেহ। তখনও তাঁর হাতে লাগানো রয়েছে স্যালাইনের বোতল। সঙ্গে রয়েছে বোতলের স্ট্যান্ডও।
সোমবার রাতে উত্তর হাওড়ার টি এল জায়সবাল হাসপাতালে এই ঘটনার পরে তুমুল উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। মৃত যুবকের পরিজনেরা এর পরে হাসপাতালের দুরবস্থা নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। হাসপাতালে ভাঙচুরের চেষ্টাও হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে যায়। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিরপেক্ষ তদন্তের আশ্বাস দিলে গভীর রাতে পরিস্থিতি আয়ত্তে আসে।
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে খবর, গত সোমবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ জ্বর ও পেটের গোলমাল নিয়ে বেলুড়ের রাজেন শেঠ লেনের বাসিন্দা সুখেন দাসকে (৩০) ওই হাসপাতালে ভর্তি করেন তাঁর পরিবারের লোকজন। বাড়িতে তাঁর বৃদ্ধা মা আর এক মাসির সঙ্গে থাকতেন সুখেন। এ দিন এক বন্ধু সুখেনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে তাঁর শারীরিক অবস্থা দেখে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করান।
মঙ্গলবার সুখেনের আর এক বন্ধু দীপ দত্ত জানান, সোমবার সকালে হাসপাতালে গিয়ে তিনি দেখেন যে, সুখেন মারাত্মক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তবে মারা যাওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না। দীপবাবুর কথায়, “সকালে ভর্তি করে চলে আসার পরে বিকেলে গিয়ে দেখি যে, ও বিছানায় নেই। কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। এর পরে হাসপাতাল জুড়ে খোঁজ শুরু হয়।’’ খবর পেয়ে পুলিশ হাসপাতালে যায়। রাত ১০টা নাগাদ হাসপাতালের মেল ওয়ার্ডের শৌচাগারের ভিতরে সুখেনের দেহ দেখতে পান এক জন ওয়ার্ড বয়। তিনিই খবর দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। দেখা যায়, শৌচাগারের ভিতরে মুখ থুবড়ে পড়ে রয়েছে সুখেনের দেহ।
এর পরেই ক্ষুব্ধ আত্মীয় এবং বন্ধুবান্ধবেরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তাঁদের প্রশ্ন, সামান্য জ্বরের রোগীর এ ভাবে মৃত্যু হয় কী করে? এত ক্ষণ শৌচাগারের ভিতরে খোঁজ করা হয়নি কেন? কী করে ওয়ার্ড থেকে স্যালাইনের বোতল-সহ এক জন রোগী শৌচাগারে পৌঁছলেন? দিনের বেলাতেও ওয়ার্ডে কোনও নার্স বা ওয়ার্ড বয় থাকেন কি না, ওঠে সেই প্রশ্নও।
এমনিতেই ওই হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। হাসপাতালের আশপাশে সৌন্দর্যায়নের কাজ হলেও হাসপাতাল চত্বরে আবর্জনার স্তূপ এবং জমা জল নিয়ে রীতিমতো আতঙ্কে থাকেন রোগী এবং রোগীর আত্মীয়রা। সামান্য বৃষ্টিতেই হাসপাতাল চত্বরে জল জমে যায়। সেই জল সরতে লেগে যায় কয়েক সপ্তাহ। তবে এ দিনের ঘটনা ওই হাসপাতালের স্বাস্থ্য পরিষেবার বেহাল দশাকে কার্যত আরও বেআব্রু করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করছেন চিকিৎসাধীন রোগীর আত্মীয়েরা।
মঙ্গলবার ওই হাসপাতাল সুপার সুখেন্দু বিশ্বাস বলেন, “কী ভাবে এই ঘটনা ঘটেছে, তার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রোগীকে খুঁজতে কেন এত বেশি সময় লাগল, তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”