Street Animals in Rainy Winter

শীতের বৃষ্টিতে বেড়াল, পথকুকুরদের বিপদ বাড়াচ্ছে সোয়েটার

শীতের এই মরসুমে হঠাৎ বৃষ্টি এ ভাবেই মৃত্যু ডেকে আনতে পারে পথকুকুর, বেড়ালদের। প্রবল ঠান্ডায় একাধিক সমস্যার পাশাপাশি মৃত্যুর বড় কারণ হিসাবে বহু ক্ষেত্রেই দেখা দিচ্ছে ভালবাসার সোয়েটার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৪ ০৭:১৬
Share:

—প্রতীকী ছবি।

প্রবল শীতের মধ্যে হঠাৎ বৃষ্টিতে সম্পূর্ণ ভিজে গিয়েছিল মা কুকুরটি। কেউ ভালবেসে সোয়েটার পরিয়ে রেখে যাওয়ায় বিপদ আরও বেড়েছিল। চুপচুপে ভিজে অবস্থায় সদ্যোজাত তিন সন্তানকে নিয়ে রাস্তার ধারে বসে সে এমন ভাবে কাঁপছিল যে, দেখতে পেয়ে আর এড়িয়ে যেতে পারেননি মানিকতলা গড়পারের বাসিন্দা অশ্বিনী সরকার। কোনও মতে চারটি প্রাণকে তুলে এনে বাড়ির গ্যারাজে রেখেছিলেন তিনি। ভেজা সোয়েটার খুলিয়ে টানা পরিচর্যা চালিয়ে তিন সারমেয় সন্তানকে বাঁচাতে পারলেও তাদের মাকে পারেননি। দিন দশেকের মাথায় মৃত্যু হয় তার!

Advertisement

এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। শীতের এই মরসুমে হঠাৎ বৃষ্টি এ ভাবেই মৃত্যু ডেকে আনতে পারে পথকুকুর, বেড়ালদের। প্রবল ঠান্ডায় একাধিক সমস্যার পাশাপাশি মৃত্যুর বড় কারণ হিসাবে বহু ক্ষেত্রেই দেখা দিচ্ছে ভালবাসার সোয়েটার। কেউ সেই সোয়েটার পরে ভিজে বসে থাকছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কেউ আবার সারা দিনের খেলার মাঝে ময়লা মাখানো সোয়েটারে মুখ দিচ্ছে, তাতে বিপদ বাড়ছে আরও। অচিরেই তৈরি হচ্ছে ইনফেকশাস ট্র্যাকিওব্রঙ্কাইটিস বা কেনেল কাফের মতো রোগ।

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, আগের চেয়ে পথকুকুর, বেড়ালদের নিয়ে সচেতনতা বেড়েছে অনেকটাই। শীতের সময়ে অনেকেই তাদের বাড়ির গ্যারাজ বা গাড়ি বারান্দার নীচে থাকার জায়গা করে দেন। ঠান্ডা থেকে বাঁচাতে পুরনো সোয়েটার চেয়ে নিয়ে অনেকে তাদের পরিয়েও রাখেন। কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই হঠাৎ বৃষ্টি চলে এলে তাদের গা থেকে সেই সোয়েটার খোলানোর সুযোগ পান না অনেকে। ফলে সোয়েটার পরে বৃষ্টিতে ভিজেই ঘুরে বেড়াতে হয় পথকুকুর, বেড়ালদের। এতে ঠান্ডা লেগে যেমন তারা কষ্ট পায়, তেমনই একাধিক প্রাণঘাতী রোগ হওয়ারও ভয় থাকে।

Advertisement

পশু চিকিৎসক সুমেধা ঘোষ বলেন, ‘‘অনেকে সোয়েটার তো পরিয়ে দিয়ে যান, তার পরে আর সময়ে খোলান না। গত কালই প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখেছি বেশ কিছু পথকুকুরকে। কয়েক জন মিলে বৃষ্টির পরে বেরিয়ে যে ক’টা কুকুরকে পেরেছি, সোয়েটার খুলিয়ে দিয়েছি। কিন্তু যাঁরা সোয়েটার পরাচ্ছেন, সময় মতো তা খোলানোর দায়িত্বটাও তাঁদেরই নিতে হবে।’’ পশু চিকিৎসক অভিরূপ বন্দোপাধ্যায় বললেন, ‘‘এই ভাবে ঠান্ডা লেগে গেলে পথকুকুর, বেড়ালদের বুকে, গলায় সংক্রমণ তৈরি হতে পারে। এর সঙ্গেই ইনফেকশাস ট্র্যাকিওব্রঙ্কাইটিস বা কেনেল কাফে ভুগতেও দেখা যেতে পারে। বাড়ির কুকুর বা পথকুকুর— উভয়ের মধ্যেই এই ধরনের অসুখ এই সময়ে বেশি মাত্রায় পাচ্ছি। এতে ওরা এক ধরনের আওয়াজ করে কাশে। ফলে এটাকে হংকিং কাফও বলে। ব্যাক্টিরিয়াঘটিত এই জটিল অসুখ কিন্তু কী পরিবেশে ওরা থাকছে, তার উপরে অনেকটা নির্ভর করে।’’ অভিরূপের আরও দাবি, ‘‘ক্যানাইন ডিসটেম্পারের মতো মরসুমি রোগ বা রক্ত-বমি, পায়খানার রোগও এ বার অনেক বেশি মাত্রায় চোখে পড়ছে। দ্রুত প্রতিষেধক নিয়ে এই সব রোগের অনেকটাই নিরাময় সম্ভব ঠিকই। কিন্তু পথকুকুরদের ক্ষেত্রে যে হেতু বেশির ভাগ সময়েই প্রতিষেধক দেওয়ানো থাকে না, তাই সমস্যা বাড়ে।’’ ফলে একটু উষ্ণতার জন্য সোয়েটার বা আর যা-ই পরান, সময়ে সেগুলি খুলিয়ে দেওয়ার দিকেও সমান নজর দিতে বলছেন চিকিৎসকেরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement