অসুস্থকে সুস্থ করে তোলা হয় যেখানে, সেই জায়গাই রয়ে গিয়েছে ঘোর বিপদের মধ্যে। সূত্রের খবর, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা হাসপাতালের আগুন নেভানোর যন্ত্রগুলির মেয়াদ পেরিয়ে গিয়েছে অনেক দিন আগেই। কিন্তু শুধুমাত্র দেখভালের অভাবেই সেগুলি বদলানো হয়নি। ফলে হঠাৎ করে দুর্ঘটনা ঘটলে যা দিয়ে আগুন নেভানোর কথা সেই অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রগুলি আদৌ কাজ করবে কি না, তা নিয়ে রয়ে গিয়েছে সন্দেহ।
বারাসত জেলা হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে শুরু করে চিকিৎসকদের চেম্বার, রোগীদের ওয়ার্ড, বিভিন্ন পরীক্ষার ঘর সর্বত্র ঝুলছে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র। হাসপাতালের দেওয়ালে-দেওয়ালে লাগানো রয়েছে সেগুলি। রয়েছে একশোরও বেশি অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র। কিন্তু সেগুলির বেশির ভাগেরই মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে। সেগুলি পরীক্ষা তো দূরের কথা, বিষয়টি সম্পর্কে জানা নেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরও। হাসপাতালে আসা এক রোগীর কথায়, ‘‘এখানে তো মানুষ চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ হতে আসেন। কিন্তু এখানেই যদি এমন মরণ ফাঁদ থাকে তা হলে তো সাংঘাতিক অবস্থা।’’
তবে বারাসত হাসপাতাল-সহ জেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রগুলির যে মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে, তা জানেন উত্তর ২৪ পরগনার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয় আচার্য। শনিবার তিনি বলেন, ‘‘আসলে দমকল, পূর্ত দফতরের সঙ্গে একযোগে গোটা জেলারই অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা ঢেলে সাজা হবে। খুব শীঘ্রই সেই নতুন ব্যবস্থা চালু করা হবে। সে কারণেই মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়া ওই পুরনো সিলিন্ডারগুলি বদলানো হয়নি।’’
দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান বা অফিসে মূলত চার রকমের সিলিন্ডারে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা থাকে— একটি হল, ফোম। এগুলি ব্যবহারের সময়সীমা থাকে এক বছর। তার পরে পুরনো ফোম বের করে দিয়ে নতুন ফোম ভর্তি করতে হয়। দ্বিতীয়টি হল, এবিসি। এটি এক রকমের পাউডার। যা তিন বছর অন্তর অন্তর বদলে নতুন পাউডার ভরে ফেলতে হয়। তৃতীয়টি হল ডিসিপি। এটি অনেকটা এবিসির মতোই। এই যন্ত্রেও পাউডার থাকে। বদলাতে হয় তিন বছর অন্তর। আর চতুর্থ ব্যবস্থাটি হল, কার্বন-ডাই-অক্সাইড বা সিওটু। এগুলিতে পাঁচ বছর অন্তর গ্যাস পাল্টাতে হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে যদি এগুলি নিয়মমাফিক না পাল্টানো হয়, তা হলে আগুন নেভানোর ক্ষেত্রে তা কাজ না করাই কথা।
আগুন লাগলে তা নেভানোর জন্য কোনও জলের ব্যবস্থাও নেই হাসপাতালে। তবে সূত্রের খবর, পাশেই রয়েছে পুকুর। প্রয়োজনে সেখান থেকে জল নেওয়া যাবে। হাসপাতালের দু’টি ভবনেই ঢোকা-বেরনোর জন্য রয়েছে একাধিক রাস্তা। যদিও র্যাম্প নেই কোথাও। ভবনগুলিতে লিফট্ বসানো হলেও তা এখনও চালু হয়নি। তবে বিভিন্ন বিভাগে ফায়ার অ্যালার্ম রয়েছে।