Fireworks

‘বাজি ফাটানোর সুযোগ থাকবে, এমন অবকাশ দেওয়াই যাবে না’

জোড়া ফলার কারণে যে কোনও ধরনের বাজিই যে সমূহ বিপদ ডেকে আনতে পারে, সে সম্পর্কে বিশেষজ্ঞেরা লাগাতার সতর্ক করে চলেছেন।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতো শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২০ ০৩:২৭
Share:

বিপজ্জনক: শহরের বাতাসের মান খারাপ হওয়ার কারণ গাড়ির ধোঁয়াও। ছবি: রণজিৎ নন্দী

আক্ষরিক অর্থেই এ বার জোড়া আক্রমণ!গত বছরে করোনার সংক্রমণ ছিল না। কিন্তু ‘খারাপ’ বাতাস ছিল। কালীপুজো, দীপাবলির পরে বাজির সৌজন্যে ওই ‘খারাপ’-এর মাত্রাও অনেকাংশে বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু এ বছর করোনার সঙ্গে সঙ্গে ‘খারাপ’ বাতাসের গতিও অব্যাহত! ফলে এক দিকে সার্স-কোভ ২-এর উপস্থিতি, অন্য দিকে ‘খারাপ’ বাতাস— এই জোড়া ফলার কারণে যে কোনও ধরনের বাজিই যে সমূহ বিপদ ডেকে আনতে পারে, সে সম্পর্কে বিশেষজ্ঞেরা লাগাতার সতর্ক করে চলেছেন।

Advertisement

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, কালীপুজো, দীপাবলির আগে সতর্ক করার এই প্রক্রিয়া শুধু প্রশাসনই নয়, সমাজের সব স্তরেই জারি রাখা দরকার। না হলে মুহূর্তের অসতর্কতায় সংক্রমণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। এই পরিস্থিতিতে আজ, সোমবার বাজি-দূষণ আটকানোর রূপরেখা তৈরি করতে পুলিশের সঙ্গে বৈঠকে বসতে পারে রাজ্য পরিবেশ দফতর। ওই বৈঠকে আবাসন সমিতি ও চিকিৎসকদের সংগঠনেরও থাকার কথা। এঁরা সকলেই মনে করছেন, আদালতের নির্দেশ মেনে না চললে এ বার যে সমূহ বিপদ অপেক্ষা করছে, তা বুঝতে হবে সাধারণ মানুষকেও।

কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য বলছে, গত পাঁচ দিন শহরের বাতাসের মান ছিল ‘খারাপ’। এমনিতে দূষণের মাত্রাভেদে বায়ুসূচককে (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) মোট ছ’টি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে— ভাল (০-৫০), সন্তোষজনক (৫১-১০০), মাঝারি মাপের দূষণ (১০১-২০০), খারাপ (২০১-৩০০), খুব খারাপ (৩০১-৪০০) এবং বিপজ্জনক (৪০১-৫০০)। বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা (পিএম১০), অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণা (পিএম২.৫), নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইড, সালফার-ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, ওজ়োন, অ্যামোনিয়া ও সিসা— এই আটটি দূষকের উপস্থিতি ও শরীরের উপরে তাদের প্রভাবের ভিত্তিতে বাতাসের গুণমান নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।

Advertisement

আরও পডুন: চলমান সিঁড়ি, ফুটব্রিজ সংস্কারে ভোল বদলাচ্ছে বারাসত স্টেশন​

আরও পডুন: ‘বাজি ফাটানোর সুযোগ থাকবে, এমন অবকাশ দেওয়াই যাবে না’

এর ভিত্তিতে দেখা গিয়েছে যে, অন্যান্য বছরে অক্টোবরের শেষ থেকে এমনিতেই বাতাস দূষিত হতে শুরু করে। যার মাত্রা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে। যেমন গত বছরের নভেম্বরের প্রথম আট দিনের বাতাসের গুণমান ‘মাঝারি মাপের দূষণ’, ‘খারাপ’ ও ‘খুব খারাপ’-এর মধ্যে ঘোরাফেরা করেছিল। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক কর্তার কথায়, ‘‘গত বছর নভেম্বরের শুরুতে এক দিনও বাতাসের মান ভাল বা সন্তোষজনক ছিল না। সেখানে এ বছরের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। ফলে কোনও রকম বাজি ফাটানোর সুযোগ থাকবে, এমন অবকাশ দেওয়াই যাবে না।’’

ঝুঁকি নেওয়া যাবে না কেন? এর কারণ ব্যাখ্যা করে বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ভাসমান ধূলিকণার পাশাপাশি বাজি ফাটানো হলে তা থেকে নির্গত হওয়া কার্বনের পরিমাণও বাতাসে অসম্ভব বেড়ে যায়। যা শেষ পর্যন্ত ফুসফুসে প্রবেশ করে। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে, ঘিঞ্জি এলাকায় ওই দূষিত বাতাস থমকে থাকে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক দেবাশিস রায় জানাচ্ছেন, করোনার কারণে এমনিতেই ফুসফুসের ক্ষতি হয়। তার উপরে

বাজি ফাটানো হলে তা থেকে নির্গত ধোঁয়ায় সেই ক্ষতি বহু গুণে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে শব্দবাজি না আতশবাজি কোনটা ফাটছে, তা এ ক্ষেত্রে গৌণ। দেবাশিসবাবুর কথায়, ‘‘সংক্রমিত হওয়ার পরে আপাতদৃষ্টিতে সুস্থ হয়ে উঠলেও ফুসফুসের ক্ষতি করে দিচ্ছে করোনা। বাজির ধোঁয়া সেই ক্ষতিকে একটা স্থায়ী রূপ দিতে পারে।’’ এক জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘যাঁদের ফুসফুসের রোগ রয়েছে, তাঁদের প্রতিরোধ ক্ষমতা ইতিমধ্যেই কম। বাজির ধোঁয়া সেই প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও কমিয়ে দিতে পারে। ফলে এ বছরের কালীপুজো, দীপাবলিতে আমরা একটা সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে রয়েছি।’’

পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’-এর সম্পাদক নব দত্তের বক্তব্য, ‘‘কালীপুজো, দীপাবলিতে বাজির তাণ্ডবের হাত থেকে শহরের হাসপাতালগুলিও ছাড় পায় না। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতিতে এর পুনরাবৃত্তি আটকাতে ইতিমধ্যেই রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কাছে আবেদন করেছি।’’ পরিবেশমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলছেন, ‘‘আদালত যখন নির্দেশ দিয়েছে, তখন বাজি নিষিদ্ধ করা হবে। আদালতের নির্দেশ কার্যকর করতে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি শাস্তিমূলক পদক্ষেপও করা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement