শহরের বাতাসে ‘বিষের’ পরিমাণ মাপতে বিশেষজ্ঞ সংস্থাকে দায়িত্ব দিল রাজ্য সরকার। আপাতত কলকাতা এবং হাওড়া শহরে এই কাজ শুরু হবে। মানুষের শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক কোন গ্যাস কতটা পরিমাণে রয়েছে, তার হিসেব কষতে ওই দুই শহরে কাজ শুরু করবে ‘ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ (নিরি)। বাতাসে কার্বন ও নাইট্রোজেন-ডাইঅক্সাইডের মতো ক্ষতিকারক গ্যাসের মাত্রা বাড়ছে। বৃহস্পতিবার এ নিয়ে এক কর্মশালা আয়োজিত হয়েছিল সল্টলেকে। সেখানে হাজির ছিলেন রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়-সহ রাজ্য পরিবেশ দফতরের কর্তারা এবং নিরি-র প্রতিনিধি।
শোভনবাবু জানান, কলকাতা এবং হাওড়া শহরে দূষণের মাত্রা নিয়ে চিন্তায় ছিল রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। দুই শহরেই দূষণের মাত্রা যে ভাবে বেড়ে চলেছে, তা নিয়ন্ত্রণ করাটা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছেন মেয়র। কিন্তু কী ভাবে?
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র জানান, শহরে প্রতিনিয়ত দূষণ বাড়ছে। যানবাহন, কারখানা, নির্মাণকাজ থেকে শুরু করে আগুন জ্বালানো, রাস্তার ধারে রান্নাবান্না— সবেতেই বাড়ছে দূষণের মাত্রা। কিন্তু কোন উৎস থেকে কতটা দূষণ ছড়াচ্ছে, তা মাপার কোনও ব্যবস্থা এখন সে ভাবে নেই। নিরি সেই কাজও করবে এবং একই সঙ্গে জানিয়ে দেবে ওই সব ক্ষেত্রে দূষণ প্রতিরোধে কী পদক্ষেপ করতে হবে।
পরিবেশ দফতর সূত্রের খবর, আগামী দু’বছর ধরে ওই কাজ করবেন নিরি-র বিশেষজ্ঞেরা। এর জন্য কলকাতায় ১৯টি এবং হাওড়ায় ৬টি জায়গায় ‘মনিটরিং স্টেশন’ গড়বে তারা। আগামী ছ’মাসের মধ্যে তারা প্রাথমিক রিপোর্ট দেবে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে। কল্যাণবাবু জানান, দূষণ নিয়ন্ত্রণে শহর জুড়ে ইতিমধ্যেই নানা ব্যবস্থা নিয়েছেন তাঁরা। প্রতিদিন একাধিক জায়গায় জল দিয়ে গাছ ধোয়ার কাজ চলছে। নিয়মিত ধোঁয়ার পরীক্ষা করতে বলা হচ্ছে পরিবহণ দফতরকে। আর নিরি-র রিপোর্ট আসা শুরু হলেই দূষণ প্রতিরোধে তাদের নির্দেশমতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নিরি-র এক বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, বিষাক্ত এবং বিশুদ্ধ বাতাসের হিসেব রাখতে কলকাতা, হাওড়ার পাশাপাশি সিঙ্গুর ও নদিয়ার মোহনপুরেও ‘মনিটরিং স্টেশন’ বসানো হবে। সিঙ্গুর এবং মোহনপুরের বাতাস বিশুদ্ধ। সেই হিসেব মাথায় রেখেই তৈরি করা হবে কলকাতা এবং হাওড়াকে। কল্যাণবাবু জানান, আপাতত কলকাতা এবং হাওড়া দিয়ে শুরু হলেই আগামীতে খনি ও শিল্পাঞ্চল-সহ ঘিঞ্জি শহরগুলিতেও ওই প্রকল্প চালু করা হবে। রাজ্যের প্রতিটি জেলাকে পরিবেশগত ভাবে সুস্থ রাখাই তাঁদের লক্ষ্য বলে জানান কল্যাণবাবু।