অসচেতন: পাতিপুকুর মাছের বাজারে রবিবার চলছে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা। আর দূরত্ব-বিধি শিকেয় তুলে তা-ই ভিড় করে দেখছেন স্থানীয়েরা। ওই পরীক্ষায় এ দিন পাঁচ ব্যবসায়ীর শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
সারা দেশেই আনলকের পর্ব শুরু হলেও সংক্রমণের বর্তমান হার যা, তাতে পুরোদমে এখনই সব কিছু চালু করা যাবে না বলে সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞদের একটি অংশ। তাঁদের মতে, মুহূর্তের অসতর্কতায় সংক্রমণের হার আরও বাড়তে পারে। অর্থনৈতিক কারণে লকডাউন তুললেও কী ভাবে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়, তার নির্দিষ্ট রূপরেখা নতুন করে তৈরি করা প্রয়োজন। সব জায়গায় নিয়ম যাতে মানা হয়, সেই দায়িত্বও প্রশাসনকে নিতে হবে, জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। ইতিমধ্যেই অন্য দেশের অভিজ্ঞতা থেকে জানা গিয়েছে, সংক্রমণ কমার পরে যখনই নিয়ম শিথিল করা হয়েছে, তখনই ফের সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পেতে শুরু হয়েছে।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ-এর প্রাক্তন ডিরেক্টর-জেনারেল নির্মল গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে সংক্রমণের হার ১০-১২ শতাংশ রয়েছে। সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের কম হোক আগে। তখন না হয় নিয়ম শিথিল করার কথা ভাবা যেতে পারে। তার আগে কখনওই নয়।’’ এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি জানাচ্ছেন, সার্স-কোভ-২ ভাইরাস এই মুহূর্তে একটা বৃত্তের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। যে কারণে দেশের একাধিক শহরে ইতিমধ্যেই সংক্রমণ শীর্ষে পৌঁছেছে। কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গে এখনও সংক্রমণ শীর্ষে পৌঁছয়নি, কিন্তু সংক্রমণের হারের যে অভিমুখ, তাতে বেশ কিছু দিনের মধ্যে এখানে সংক্রমণ শীর্ষে পৌঁছতে পারে।
তবে বিজ্ঞানী-গবেষকদের একটি অংশের মতে, বিশ্বের অনেক দেশেই ‘সেকেন্ড ওয়েভ’ শুরু হয়েছে। আনলকের তৃতীয় পর্যায়ের মধ্যে দিয়ে যাওয়া ভারতের তাই অন্য দেশের অভিজ্ঞতা থেকে শেখা উচিত। যেই মুহূর্তে মাস্ক পরা, দূরত্ব-বিধি মানা, হ্যান্ড হাইজিনের মতো প্রাথমিক নিয়মগুলি কোনও দেশে শিথিল হয়েছে, তখনই ফের সেখানে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পরামর্শদাতা তথা ‘দ্য সেন্টার ফর ডিজ়িজ়, ডায়নামিক্স, ইকনমিক্স অ্যান্ড পলিসি’-র ডিরেক্টর রামাণন লক্ষ্মীনারায়ণের কথায়, ‘‘একটা ব্যাপার পরিষ্কার, এই অতিমারি এখনও অনেক দিন থাকবে।’’ আর সে জন্যই সংক্রমণের গতি থামাতে মাস্ক পরা, দূরত্ব-বিধির নিয়মকে গুরুত্ব দেওয়া দরকার বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
ডব্লিউএইচও-র সঙ্গে যুক্ত এক গবেষকের কথায়, ‘‘এই সংক্রমণ কী ভাবে ছড়ায়, তা সবাই জানেন। সবাই এটাও জানেন যে মাস্ক পরা বা দূরত্ব-বিধি মানা কতটা জরুরি। সেখানে কোনও ফাঁক থাকলে সংক্রমণ থামানো মুশকিল। অন্তত যত দিন না প্রতিষেধক বা ওষুধ বার হচ্ছে।’’ তবে জনঘনত্ব যেখানে বেশি, যেমন কলকাতার মতো শহরে নিয়ম মানার ক্ষেত্রে কী করণীয়, এ নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে সরকারের নির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরি করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন অনেকে। পাশাপাশি পরীক্ষা আরও বাড়ানো দরকার বলে মনে করছেন তাঁরা। কারণ, এ শহরে দূরত্ব-বিধি মানার জন্য আলাদা ঘর কত জনের আছে? এমনকি অনেকে মিলে ব্যবহার করেন একটি শৌচালয়। ফলে আক্রান্তকে চিহ্নিত করে অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন না-করলে কিছুতেই কোভিড ১৯-কে নির্দিষ্ট পরিসরে আবদ্ধ করে রাখা যাবে না।
এক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘যে সমস্ত দেশ ঠিক ভাবে সব নিয়ম পালন করেছে, তারা সংক্রমণকে নির্দিষ্ট গণ্ডিতে আবদ্ধ রাখতে পেরেছে। আর যারা পারেনি, সেখানে সংক্রমণ লাগামছাড়া হয়েছে। ফলে শুধু নীতি নির্ধারণই নয়, জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষার কথা ভেবে সেই নীতি যাতে বাস্তবায়িত হয়, তা সরকারের সুনিশ্চিত করা দরকার।’’