ফাইল চিত্র।
মেট্রোর কাজের পরিসরের মধ্যে থাকা বৌবাজারের জীর্ণ বাড়িগুলির স্বাস্থ্য খতিয়ে দেখবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলির অবস্থা সার্বিক ভাবে যাচাইয়ে কলকাতা পুরসভা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ দলকে দিয়ে সমীক্ষার কাজ শুরু করেছে। শুক্রবার কলকাতা পুর ভবনে এই কথা জানান মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
২০১৯ সালের ৩১ অগস্ট বৌবাজারে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোপথের সুড়ঙ্গ খোঁড়ার সময়ে দুর্গা পিতুরি লেন ও সেকরাপাড়া লেনের ২৩টি বাড়ি পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিল। আরও ২৩টি বাড়ি বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। তিন বছর আগের সে দিন থেকে আজ পর্যন্ত বাড়িছাড়া প্রায় ৯০টি পরিবার। বুধবার রাতে নতুন করে ১৪টি বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। কেএমআরসিএলের প্রতিশ্রুতি মতো তিন বছরেও বৌবাজারের গৃহহীনদের বাড়ি তৈরি হয়নি। তাঁদের জন্য বাড়ি তৈরির কাজ শীঘ্রই শেষ করতে মাসখানেক আগে স্থানীয় কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দে পুরসভার মাসিক অধিবেশনে একটি প্রস্তাব রেখেছিলেন। সেই প্রস্তাবের ভিত্তিতে পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী শুক্রবার কেএমআরসিএল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল পুরসভার। এরই মধ্যে গত বুধবার বৌবাজারে নতুন করে ১৪টি বাড়িতে ফাটল দেখা দেওয়ায় এ দিনের বৈঠকটি আরও বেশি গুরুত্ব পায়। এ দিনের বৈঠকে কলকাতা পুরসভা, কেএমআরসিএলের আধিকারিকেরা ছাড়াও উপস্থিত ছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ দল। ছিলেন বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়, তাপস রায়, স্থানীয় কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দে প্রমুখ।
এ দিন বৈঠকের পরে মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘বৌবাজারে নির্মীয়মাণ মেট্রো প্রকল্প এলাকার বাড়িগুলির স্বাস্থ্য খতিয়ে দেখবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ দল। এ ক্ষেত্রে বাড়িগুলির সার্বিক অবস্থা খতিয়ে দেখতে কেএমআরসিএল কর্তৃপক্ষের কাছে ওই সমস্ত বাড়ি এবং আশপাশের মাটি পরীক্ষা সম্পর্কিত একাধিক বিষয়ের রিপোর্ট চেয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। কেএমআরসিএল প্রায় পাঁচটি বিষয়ের রিপোর্ট সপ্তাহখানেকের মধ্যে কলকাতা পুরসভাকে জমা দেবে।’’
এ দিন মেয়র অভিযোগ করেন, ‘‘কেএমআরসিএলের প্রতিশ্রুতি মতো তিন বছরের মধ্যে গৃহহীনদের বাড়ি তৈরি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দু’বছর ন’মাস পার হয়ে হলেও একটা ইট গাঁথা হল না। এটা খুব যন্ত্রণার।’’ মেয়রের আরও অভিযোগ, ‘‘কেএমআরসিএলের প্রতিনিধিদের কাছে গেলে রীতিমতো অপমান করা হয় বলে স্থানীয় বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তেরা। মনে রাখতে হবে, মেট্রোর কাজ করতে গিয়ে তাঁদের বাড়ি ভেঙেছে। কেএমআরসিএলের উচিত, ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে ক্ষমা চাওয়া।’’
এ দিন মেয়র আরও অভিযোগ করেছেন, মেট্রোর কাজের জন্য সিমেন্ট ও জলের মিশ্রণে এলাকার নিকাশি নালা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। একটু বৃষ্টিতেই আগের তুলনায় বেশি জল জমছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় কাউন্সিলর। নিকাশির পাইপ মেরামতি করতে কেএমআরসিএলের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে বলে জানান মেয়র। ক্ষতিগ্রস্তদের অভাব-অভিযোগ শুনতে আগামী সোমবার থেকে কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দে-র অফিসে ব্যবস্থা থাকবে। ফিরহাদ জানান, সেখানে কেএমআরসিএলের প্রতিনিধিরা নিয়মিত থাকবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি আরও জানান, বৌবাজারে নির্মীয়মাণ মেট্রো প্রকল্প এলাকায় কোন বাড়ি ভাঙা হবে, কোন বাড়ি রাখা হবে — সবটাই যাচাই করে রিপোর্ট দেবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ দল। পরবর্তী ক্ষেত্রে চূড়ান্ত রিপোর্ট নিয়ে নবান্নে মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠক করা হবে বলে জানান মেয়র।
কেএমআরসিএলের এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, ‘‘বিপদ ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই বাসিন্দাদের দ্রুত সরানো হয়েছে। আমরা সমস্ত ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে আছি। তাঁদের কথা ভেবেই আমরা কাজ করছি। মাটির নীচে নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।’’