প্রতীকী ছবি।
গত মাসের শেষে হরিদেবপুর এলাকার মল্লিকপুরে তীব্র গতিতে ছুটে আসা একটি স্কুটার গাছে ধাক্কা মারায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছিল। ওই মাসেরই দ্বিতীয় সপ্তাহে অন্য একটি ঘটনায় বালিগঞ্জ সার্কুলার রোড দিয়ে বেপরোয়া গতিতে ছুটে চলা একটি এসইউভি গাড়ি পিষে দিয়েছিল এক মহিলা পথচারীকে। গত বছর ভারতে শুধু পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ১ লক্ষ ৫৫ হাজার ৬২২ জনের। ‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড বুরো’র তথ্য অনুযায়ী, এই সংখ্যার অন্তত ৩৮ শতাংশ মৃত্যুর কারণ হিসেবে উঠে এসেছে বেপরোয়া গতি।
দুর্ঘটনায় মৃত্যু কমাতে পথের নিরাপদ গতি নির্ণয়ে জোর দেওয়া জরুরি। মোটর ভেহিক্লস ইনস্পেক্টরদের দু’দিনের বার্ষিক সাধারণ সভা উপলক্ষে আয়োজিত জাতীয় সম্মেলনে শনিবার সেই ভাবনাই তুলে ধরেন খড়্গপুর আইআইটি-র অধ্যাপক তথা পরিবহণ বিশেষজ্ঞ ভার্গব মৈত্র। তাঁর কথায়, ‘‘একটি নির্দিষ্ট পথ দিয়ে কত জোরে গাড়ি ছুটতে পারে, সেটাই রাস্তা নির্মাণের একমাত্র বিবেচ্য বিষয় নয়। বরং দুর্ঘটনা কমাতে ওই পথ আর কারা ব্যবহার করেন এবং কোন এলাকা দিয়ে ওই রাস্তা যাচ্ছে তা নির্ণয় করাও জরুরি।’’ তার ভিত্তিতেই নির্দিষ্ট রাস্তায় পথচারীদের নিরাপত্তার ক্ষেত্র এবং গাড়ির গতির বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত বলে জানান ভার্গব।
ভার্গবের মতে, ‘‘একটি গাড়ি ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে ছুটলে তার ধাক্কায় পথচারীর মৃত্যুর আশঙ্কা ১০ শতাংশ। একই গাড়ি যখন ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার গতিতে ছোটে, তার থেকে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর আশঙ্কা বেড়ে হয় প্রায় ৯৫ শতাংশ।’’ ফলে দুর্ঘটনা কমাতে রাস্তা নির্মাণের প্রযুক্তিগত ত্রুটি দূর করার পাশাপাশি ওই রাস্তা কোন এলাকা দিয়ে যাচ্ছে ও আরও কিছু জিনিস দেখা প্রয়োজন। তার ভিত্তিতেই জাতীয় ও রাজ্য সড়কগুলিতে গতির সর্বাধিক সীমা বেঁধে দেওয়া জরুরি বলে মত তাঁর।
মোটর ভেহিক্লস ইনস্পেক্টরদের বার্ষিক সভার উদ্বোধনে এসে পথ দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু ঠেকাতে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে জোর দেওয়ার কথা বলেন পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীও। তিনি বলেন, ‘‘দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে মানুষকে সচেতন করার প্রয়াস চলবে। পাশাপাশি গতি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাও চালু করবে সরকার। রাজ্যের বিভিন্ন সড়কে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে গতি নির্ধারণের প্রক্রিয়া চালানো হবে। স্কুল স্তর থেকে সচেতনতা বৃদ্ধিতে জোর দেওয়া হবে। জোরে গাড়ি চালানোয় কোনও কৃতিত্ব নেই, এই বার্তাই কমবয়সিদের দিতে হবে।’’