দাপট: শিবরাত্রি উপলক্ষে সাউন্ড বক্স বাজিয়ে চলছে নাচ। রবিবার, স্ট্র্যান্ড রোডে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
শিবরাত্রির উৎসবেও বন্ধ হল না শব্দের তাণ্ডব। শব্দ-বিধি ভাঙার প্রবণতাও রোখা গেল না। শিবরাত্রিতে পুজোর নামে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে শনিবার সকাল থেকে শুরু হওয়া শব্দ-তাণ্ডব চলল রবিবার মধ্যরাত পর্যন্ত। মাইক, বক্সের দাপটে কোথাও প্রবীণেরা না ঘুমিয়ে জেগে থাকতে বাধ্য হলেন, কোথাও আবার বাধ্য হয়ে আশ্রয় নিলেন আত্মীয়ের বাড়ি। পুজো উপলক্ষে একের পর এক বিধিভঙ্গ হলেও পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে দেখা গেল না।
শনিবার সন্ধ্যা থেকে শিবরাত্রির পুজো ঘিরে তোড়জোড় শুরু হয়েছিল। যদিও তার অনেক আগে থেকেই শহরের বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয়েছিল শব্দ-বিধি ভাঙা। পুজোকে কেন্দ্র করে বড় বড় বক্স বাজানোও শুরু হয়েছিল আগেই। সঙ্গে ছিল তাসা বাজিয়ে মিছিল। শনিবার সন্ধ্যা থেকে ওয়েলিংটন, কলেজ স্ট্রিট, আমহার্স্ট স্ট্রিট-সহ উত্তর কলকাতার একাধিক রাস্তায় সাউন্ড বক্স, তাসা বাজিয়ে মিছিল বেরোয়। ওয়েলিংটন থেকে বেরোনো মিছিলে থাকা সাউন্ড বক্স এবং তাসার দাপটে কান ঝালাপালা হয়ে গেলেও ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে পুলিশকে দেখা গেল দাঁড়িয়ে থাকতে। এক পুলিশকর্মীকে এ নিয়ে প্রশ্ন করতে উত্তর এল, ‘‘বছরে দু’-এক দিন এমন হয়! সব দিন আইন, নিয়ম-কানুন দেখাতে গেলে চলে?’’
শিবরাত্রিতে একই রকম ছবি ছিল নিমতলা শ্মশান সংলগ্ন একটি মন্দিরের পুজো ঘিরেও। শনিবার বিকেলে মিছিল করে সেখানে পুজো দিতে আসেন অনেকে। একই ছবি দেখা গিয়েছে কাশীপুর, মানিকতলা, উল্টোডাঙা, কাদাপাড়া সংলগ্ন এলাকাতেও। দক্ষিণ কলকাতায় তুলনায় উৎসবের মাত্রা কম হলেও বিধি ভাঙা বন্ধ ছিল না বলেই অভিযোগ। বালিগঞ্জ স্টেশন সংলগ্ন এক শিবমন্দিরে শনিবার সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত তারস্বরে বক্স বাজানোর অভিযোগ করেছেন স্থানীয়েরা। যা চলে রবিবারও। এমনকি সেখানে শব্দবাজি ফাটানো হয় বলেও অভিযোগ। এক বাসিন্দা প্রবাল চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘প্রতি বছর এই একই জিনিস। তাই আগেই বৃদ্ধা মাকে দিদির বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। বক্স না বাজালে কি ভক্তি আসে না?’’ একই অভিযোগ কাশীপুর এলাকার একটি পুজো ঘিরেও। যদিও ওই পুজোর সঙ্গে জড়িত এক ব্যক্তি বললেন, ‘‘এটা তো শুধু পুজো নয়, ছোটখাটো উৎসব। বক্স বাজিয়ে আনন্দ না করলে হয় নাকি! এক দিনের তো ব্যাপার, সারা বছর তো চলবে না।’’
যদিও লালবাজারের এক পুলিশকর্তা বললেন, ‘‘আগে থেকে সতর্ক ছিল পুলিশ। বিধি ভাঙলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বেশ কয়েকটি জায়গায় শিবরাত্রির আগে গিয়ে সতর্ক করে আসা হয়। তবে বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটে থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’