গত বছরের মার্চে ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে মরণোত্তর অঙ্গদান নিয়ে দেশবাসীকে উৎসাহিত করেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু ১ বছর পরেও পরিস্থিতি বদলায়নি। ফাইল ছবি।
গত বছরের মার্চে ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে মরণোত্তর অঙ্গদান নিয়ে দেশবাসীকে উৎসাহিত করেন প্রধানমন্ত্রী। অঙ্গদানে উৎসাহিত করতে নীতি প্রণয়নের ভাবনার কথাও তিনি শুনিয়েছিলেন। তবু পরিস্থিতি বদলায়নি। মরণোত্তর অঙ্গদানের তুলনায় গ্রহীতার তালিকা ক্রমে দীর্ঘ হচ্ছে। রাজ্যেও হৃৎপিণ্ড, যকৃৎ, বৃক্ক (কিডনি) পাওয়ার অপেক্ষায় দিন কাটছে কয়েকশো রোগীর।
২০১৮ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ব্রেন ডেথ হয়েছে ১০৭ জনের। তাঁদের মধ্যে অঙ্গদান করেছেন ৭০ জন। পূর্বাঞ্চলের অন্য রাজ্যের থেকে এই সংখ্যা বেশি হলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে দাবি চিকিৎসকদের। মে-র গোড়া পর্যন্ত রাজ্যে হৃৎপিণ্ড, বৃক্ক, যকৃৎ, হাত পাওয়ার তালিকায় ৬৬২ জন!
‘ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্ট্রি ইন অর্গান ডোনেশন অ্যান্ড ট্রান্সপ্লান্টেশন’ (আইআরওডিএটি)-এর ২০২১ সালের পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, প্রতি দশ লক্ষ জনসংখ্যায় আমেরিকায় মরণোত্তর অঙ্গদানের হার ৪১.৮৮ এবং স্পেনে ৪০.২০ শতাংশ। ভারতের হার ০.৮৬। ২০১৮ থেকে এ পর্যন্ত এ রাজ্যে ১২১টি বৃক্ক, ৪৯টি যকৃৎ, ৩৫টি হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপিত হয়েছে। তিনটি ফুসফুস ও একটি ক্ষুদ্রান্ত গিয়েছে ভিন্ রাজ্যে। আবেদনকারী থাকলেও একটিও হাত প্রতিস্থাপন হয়নি। এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘২০২২ সালে রাজ্যে ‘লিভিং কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট’ হয়েছে ১০০৩টি। অথচ মরণোত্তর অঙ্গদানে বৃক্ক পেয়েছেন ২৫ জন।’’
রাজ্যে কি সে ভাবে মরণোত্তর অঙ্গদান সম্পর্কে প্রচার হচ্ছে না?
চিকিৎসক মহলের দাবি, প্রতিটি ব্রেন ডেথের পরেই মৃতের পরিজনদের অঙ্গদান সম্পর্কে বোঝান চিকিৎসকেরা। বহু ক্ষেত্রেই রাজি হন না পরিজনেরা। এক অভিজ্ঞ চিকিৎসকের কথায়, ‘‘মরণোত্তর অঙ্গদান নিয়ে এখনও অনেক রকমের কুসংস্কার রয়েছে। সে সব কাটাতে বিশিষ্টজনদেরও প্রচারের অংশ করা উচিত।’’ বিভিন্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এমন অভিজ্ঞতাও রয়েছে, মৃতের অঙ্গ কেটে বিক্রির ধান্দা করা হচ্ছে সন্দেহে লোকজন এনে অশান্তি করা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে প্রিয়জনকে অন্যের মধ্যে বাঁচিয়ে রাখতে পরিজনেরাই এগিয়ে আসেন।
‘ন্যাশনাল অর্গান অ্যান্ড টিসু ট্রান্সপ্লান্ট অর্গানাইজ়েশন’ (নোটো)-এর অধীনে রয়েছে পাঁচটি আঞ্চলিক সংস্থা। সেই ‘রিজিয়োনাল অর্গান অ্যান্ড টিসু ট্রান্সপ্লান্ট অর্গানাইজ়েশন’ (রোটো)-এর অধীনে কয়েকটি করে রাজ্য রয়েছে। যেমন, পূর্বাঞ্চলের রোটোর অধীনে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড ও সিকিম। গত ছ’বছরে সিকিম ও ঝাড়খণ্ডে একটিও ব্রেন ডেথ ঘোষণা হয়নি। এখনও পর্যন্ত বিহারে দু’জনের (১টি বৃক্ক ও ২টি যকৃৎ প্রতিস্থাপন হয়েছে) এবং ওড়িশায় ৬ জনের (শুধু ১২ জনের বৃক্ক প্রতিস্থাপন হয়েছে) ব্রেন ডেথ ঘোষণা হয়েছে। পূর্বাঞ্চলে রোটোর সদর কার্যালয় এসএসকেএম। সংস্থার অধিকর্তা মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মরণোত্তর অঙ্গদান নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে সকল স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। স্কুল-কলেজেও প্রচার করতে হবে।’’
চিকিৎসক মহলের একটি অংশের মত, বছরকয়েক আগেও বিষয়টি নিয়ে গা-ছাড়া মনোভাব ছিল রাজ্যের। এখন সচেতনতা যে অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, তা-ও নয়। এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘‘ব্রেন ডেথ হওয়া ব্যক্তির পরিজনদের বোঝাতে এখন ট্রান্সপ্লান্ট কোঅর্ডিনেটর বা কাউন্সেলর রাখা হচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, মরণোত্তর অঙ্গদানকে গুরুত্ব দেওয়ার কারণেই রাজ্যে গ্রিন করিডর, ময়না তদন্ত, এমনকি মৃতদেহ বাড়ি পৌঁছনোর ব্যবস্থাও করা হয়। রোটোর এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘অঙ্গদানের পরে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে মর্গের চিকিৎসক ময়না তদন্ত করেন। সূর্যাস্তের পরেও ময়না তদন্ত হয়।’’ তবুও ঘাটতি যে রয়েছে, তা মানছেন সকলেই।