তিন মেট্রো রুটের কেন্দ্রস্থল হতে চলেছে এসপ্ল্যানেড স্টেশন। এক দিকে আদি উত্তর-দক্ষিণ মেট্রো এবং অন্য দিকে নির্মীয়মাণ জোকা-বিবাদীবাগ ও ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো। রাজ্য সরকার এবং মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, প্রতি দিন ওই তিন মেট্রো রুটে লক্ষ-লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করবেন। এর মধ্যে সিংহভাগ যাত্রীই উঠবেন কিংবা নামবেন এসপ্ল্যানেড স্টেশনে। অতএব, এসপ্ল্যানেডে যানজট ও ভিড় এড়াতে বিস্তারিত পরিকল্পনা শুরু করে দিল রাজ্য ও মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ।
কী সেই পরিকল্পনা?
পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, লন্ডনের কিং’স ক্রস বা হাল আমলে নয়াদিল্লির রাজীব চকের ধাঁচেই এসপ্ল্যানেড জংশনকে গড়ে তোলার কথা ভাবা হচ্ছে। পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘তিনটি মেট্রো রুট চালু হয়ে গেলে কলকাতার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ যাত্রী দিনভর এসে জড়ো হবেন এসপ্ল্যানেড স্টেশনে। অনেকে স্টেশন থেকে বেরিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে চলে যাবেন। অনেকে আবার একটি মেট্রো রুটে এসে অন্য রুটের মেট্রো ধরার জন্য এসপ্ল্যানেডে নামবেন। সে সব কথা মাথায় রেখেই আমাদের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’’ উদাহরণ হিসেবে ওই পরিবহণ কর্তা বলেন, ‘‘কোনও যাত্রী বেহালা থেকে এয়ারপোর্ট যেতে চাইছেন। তিনি জোকা-বিবাদীবাগ মেট্রোয় এসপ্ল্যানেডে এসে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো ধরবেন। এ ভাবেই নানা দিকের মানুষ নানা প্রয়োজনে আসবেন এসপ্ল্যানেডে।’’
প্রাথমিকভাবে এসপ্ল্যানেড স্টেশনকে থ্রি-টিয়ার স্টেশন করার কথা ভাবা হয়েছে। তিনটি স্তরে একে-একে গড়িয়া-দমদম মেট্রো, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো এবং জোকা-বি বা দী বাগ স্টেশন হবে। একটি স্টেশন থেকে যাতে যাত্রীরা অন্য স্টেশনে যেতে পারেন, তার ব্যবস্থা করা হবে স্টেশনের মধ্যেই। একই টিকিটে যাতে তিনটি রুটের যাত্রীরাই যাতায়াত করতে পারেন, ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে তা নিয়েও। পাশাপাশি, স্টেশন থেকে বেরিয়ে যাত্রীরা যাতে সহজে নিজেদের গন্তব্যে যেতে পারেন, তার জন্য বড় বড় সাবওয়ে তৈরিরও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। মেট্রোর এক কর্তা জানান, একটি সাবওয়ের সাহায্যে যাত্রীরা কার্জন পার্কের তলা দিয়ে সোজা গিয়ে উঠবেন হাইকোর্টের দিকে। দু’টি সাবওয়ে উঠবে আকাশবাণী এবং বি বা দী বাগের দিকে। আরও দু’টি সাবওয়ে চলে যাবে ধর্মতলা এবং চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের দিকে।
যে সব যাত্রীরা স্টেশনের বাইরে বেরিয়ে অন্য গন্তব্যে যেতে চাইবেন, তাঁদের জন্য প্রয়োজনীয় ট্যাক্সিস্ট্যান্ড এবং বাসস্ট্যান্ড করার কথাও ভাবা হচ্ছে। পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওই এলাকায় হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী আমরা কোনও বাসস্ট্যান্ড করতে পারব না। তাই, নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড না করে মেট্রোর যাত্রীদের সঙ্গে বাসের যোগাযোগ কী ভাবে করিয়ে দেওয়া যায়, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে।’’ ওই কর্তা আরও বলেন, ‘‘শুধু বাস নয়, এসপ্ল্যানেড স্টেশন থেকে বেরিয়ে কোনও যাত্রী যাতে সহজেই ফেরি সার্ভিস ধরে গঙ্গা পার হতে পারেন, সে জন্যও পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’’
কেন্দ্রীয় এই স্টেশনের দেখতেও যাতে নজরকাড়া হয়, সে জন্যও প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেট্রো রেল ও রাজ্য পরিবহণ দফতরের কর্তারা। ওই পরিবহণ কর্তার কথায়, ‘‘হাওড়া বা শিয়ালদহ স্টেশন কমপ্লেক্স ইতিমধ্যেই নজরকাড়া। এ বার কলকাতার বুকে এমনই তৃতীয় স্টেশন কমপ্লেক্স তৈরি হতে চলেছে এসপ্ল্যানেড।’’ স্টেশনে যাত্রীদের জন্য খাবার ও অন্য জিনিসপত্রের দোকানও রাখার কথা ভাবা হচ্ছে। তবে ওই কর্তা জানান, এখন সবই একদম প্রাথমিক পরিকল্পনার স্তরে রয়েছে। আগামী মাস ছয়েকের মধ্যে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত নকশা তৈরি হবে বলে মনে করছেন রাজ্য পরিবহণ দফতর এবং মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের কর্তারা।