—ফাইল চিত্র।
করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহের বার্তা জানিয়ে রোগীর কন্যার মোবাইলে পৌঁছে গিয়েছিল এসএমএস। তিন দিন পরে বাবার রিপোর্ট পজ়িটিভ না নেগেটিভ, জানতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানালেন, ‘ভুলবশত’ সেই বার্তা গিয়েছে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গ্রিন বিল্ডিংয়ে করোনার উপসর্গ নিয়ে দশ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পরেও সেই পুর স্বাস্থ্যকর্মীর নাকি নমুনাই সংগ্রহ করা হয়নি! যে ঘটনার জেরে সরকারি কোভিড হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষার ‘স্বচ্ছতা’ নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
কলকাতা পুরসভার ভেক্টর কন্ট্রোল ইনচার্জ (ভিসিআই) পদে কর্মরত ৫৬ বছরের ওই প্রৌঢ়কে শুক্রবার মৃত ঘোষণা করেছেন চিকিৎসকেরা। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, নমুনা সংগ্রহের সময়ে
অ্যাপের মাধ্যমে রোগীর তথ্য আপলোড করলে একটি ‘এসআরএফ আইডি’ তৈরি হয়। ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’ (আইসিএমআর)-এর নির্দেশিকা অনুযায়ী, যে ক’জনের নমুনা সংগ্রহ এবং পরীক্ষা করা হচ্ছে, তাঁদের সকলের ক্ষেত্রেই এ ধরনের আবেদনপত্র পূরণ করা বাধ্যতামূলক। এ ক্ষেত্রে মৃতের এসআরএফ আইডি হল, ১৯৩১৫০০০৪৪৯৫২। এসএমএসে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত ৩০ জুন প্রৌঢ়ের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। তাঁর মেয়ে জানান, শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ তাঁরা জানতে পারেন, ঘণ্টাখানেক আগে বাবার মৃত্যু হয়েছে। এর পরে ওয়ার্ড মাস্টারের ঘরে দেহ নিতে গেলে তাঁদের বলা হয়, দেহ হস্তান্তরিত করা যাবে না। কারণ, প্রৌঢ় করোনা সন্দেহভাজন হওয়ায় তাঁর দেহের নমুনা সংগ্রহ করতে হবে। মেয়ে তখন এসআরএফ আইডি দেখিয়ে বলেন, তাঁর বাবার নমুনা তো ইতিমধ্যেই সংগ্রহ করা হয়েছে! সেই সংগৃহীত নমুনার রিপোর্ট কোথায়? প্রশ্নবাণের মুখে পড়ে ‘ভুলবশত’ ওই এসআরএফ আইডি তৈরি হয়েছে বলে সাফাই দেওয়া হয়।
মৃতের মেয়ে শনিবার বলেন, ‘‘নমুনা সংগ্রহ না হলে এসআরএফ আইডি তৈরি হল কী ভাবে! করোনার উপসর্গ নিয়ে দশ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পরেও নমুনা সংগ্রহ হল না! পুর স্বাস্থ্যকর্মীর এই অবস্থা হলে সাধারণ মানুষের কী হচ্ছে?’’ এ দিন ধাপায় ওই স্বাস্থ্যকর্মীর দেহ সৎকার করা হয়েছে। পিতৃহারা কন্যার আক্ষেপ, ‘‘রিপোর্ট নেগেটিভ হলে বাবার দেহ পেতাম। হাসপাতালের ভুলে শেষ বারের মতো বাবাকে ভাল ভাবে দেখতেও পেলাম না। প্রতিবেশীরা আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে আসতে দিচ্ছেন না। বাবার পারলৌকিক কাজ করতে পারছি না। এর দায় কে নেবে?’’
নমুনা পরীক্ষা সংক্রান্ত কোভিড কেস ম্যানেজমেন্টের কাজে স্বাস্থ্য দফতর নিযুক্ত এক পদস্থ আধিকারিক জানান, ওয়ার্ডে নমুনা সংগ্রহের কাজে সাধারণত দু’জনের থাকার কথা। এক জন নমুনা সংগ্রহ করেন, অন্য জন অ্যাপে তথ্য আপলোড করেন। তথ্য আপলোডের সংখ্যার সঙ্গে সংগৃহীত নমুনার সংখ্যা মেলালেই তো ভুল ধরা পড়ে যেত! এ ধরনের গাফিলতির তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য ভবনের আধিকারিকদের একাংশ।
পরিবার সূত্রের খবর, গত ১৯ জুন জগদ্দলের বাড়িতে ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই প্রৌঢ়। সর্দি, কাশি ও ক্লান্তিভাবের পাশাপাশি শ্বাসকষ্টের উপসর্গও ছিল। পুরসভায় তাঁর
ঊর্ধ্বতন আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলার পরে ২৪ জুন ওই পুর স্বাস্থ্যকর্মীকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের গ্রিন বিল্ডিংয়ে ভর্তি করানো হয়। মৃতের স্ত্রী বলেন, ‘‘আইসিইউ-তে রাখার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু দশ দিনেও ওঁর জন্য আইসিইউ শয্যার ব্যবস্থা করা যায়নি।’’ মৃতের মেয়ে জানান, তাঁর বাবা ফোনে বলতেন, অক্সিজেন পেলে তিনি স্বস্তি বোধ করছেন। কিন্তু অক্সিজেন দেওয়ার যে ব্যবস্থা রয়েছে, তা পর্যাপ্ত নয়।
হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ তথা সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘নমুনা সংগ্রহের পরে এসআরএফ আইডি তৈরি হওয়া উচিত ছিল। যা হয়েছে, তা ঠিক হয়নি। অক্সিজেন সরবরাহ সংক্রান্ত অভিযোগ ঠিক নয়। আইসিইউ শয্যা সকলকে দেওয়া সম্ভব না হলেও হাই ফ্লো অক্সিজেন, এনআরবিএম মাস্ক পর্যাপ্ত রয়েছে।’’