অভিভাবকদের সঙ্গে স্কুল কর্তৃপক্ষের সম্পর্ক নিবিড় করতে একাধিক পদক্ষেপের নির্দেশ রয়েছে স্কুলশিক্ষা দফতরের। কিন্তু সেই নির্দেশ যে আদতে খাতায় কলমেই রয়ে গিয়েছে, তা কার্যত চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে বিনোদিনী গার্লস হাইস্কুলে অভিভাবকদের তাণ্ডবের ঘটনা। এ বার তাই অভিভাবকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে শহরের বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষ কী কর্মসূচি নিচ্ছেন, তার উপরে নজরদারি চালাবে কলকাতার স্কুলশিক্ষা দফতর। পুজোর ছুটির পরেই শহরের স্কুলগুলির সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে একাধিক পদক্ষেপ করা হবে বলে জানিয়েছেন ওই দফতরের এক কর্তা।
আশপাশের এলাকার মানুষজন এবং অভিভাবকদের সঙ্গে স্কুলের সুসম্পর্ক রাখার দিকে আগেই জোর দিয়েছিল দফতর। বিকাশ ভবন সূত্রের খবর, এর জন্য শুধু স্কুলের পরিচালন সমিতিতে অভিভাবকদের প্রতিনিধি রেখেই দায় সেরে ফেলার পরিবর্তে মাসে অথবা সপ্তাহে অন্তত দু’বার করে অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা স্কুলের। কিন্তু বিনোদিনী স্কুলের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে যে, শিশুনিগ্রহের অভিযোগে বিক্ষোভ দেখানোর সময়ে অভিভাবকদের সঙ্গে বহিরাগতেরাও স্কুলে ঢুকে ভাঙচুর চালিয়েছেন। শিক্ষিকাদের মারধর করেছেন। ঘটনার সময়ে আশেপাশের কেউই গোলমাল থামাতে এগিয়ে আসেননি। এমন কোনও অভিভাবককে পাওয়া যায়নি, যিনি স্কুল কর্তৃপক্ষের পাশে দাঁড়াবেন। ওই স্কুলের এক খুদে পড়ুয়ার উপরে যৌন হেনস্থার অভিযোগে নির্দিষ্ট জায়গায় অভিযোগ না জানিয়ে অভিভাবকদের এ ভাবে রুদ্রমূর্তি ধারণ করার পিছনে সংগঠিত কারণ রয়েছে বলেও মনে করেছে দফতর। তাই অভিভাবকদের একাংশের দোষ থাকলেও স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক যে আদৌ মধুর নয়, তা বুঝতে পেরেছে দফতর। এ বার তাই সেই সম্পর্ক মেরামতির উপরেই জোর দিতে চাইছে দফতর।
কলকাতা স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘অতিরিক্ত বিক্ষোভ দেখানো এবং স্কুলের ভিতরে ঢুকে ভাঙচুর হঠাৎ করে হতে পারে না। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষও অভিভাবকদের নিয়ে কখনও বৈঠক করেছে কি না, সে সব জানতে চাওয়া হবে। কিছু হাতে গোনা স্কুলে স্থানীয় সমাজ ও অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠক হয় বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ স্কুলেই এ সব হয় না। তাই এই সিদ্ধান্ত।’’ দফতরের কর্তাদের মতে, অভিভাবকদের হাতে শিক্ষিকা নিগ্রহ অথবা স্কুল ভাঙচুরের ঘটনা পড়ুয়ামনে প্রভাব ফেলে। এ ধরনের ঘটনা এড়াতে যেমন অভিভাবকদের মানসিকতার বদল প্রয়োজন, তেমনই স্কুলেরও উচিত বেশি করে স্থানীয় মানুষজন ও অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো।
দফতর সূত্রে খবর, স্কুলের যে কোনও অনুষ্ঠানে আশেপাশের বাসিন্দা এবং অভিভাবকদের যুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া রয়েছে কলকাতার বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষকে। কারণ, এর ফলে স্কুলের সঙ্গে সকলের আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে। এ ছাড়া পড়ুয়াদের যে সমস্ত কাজ হাতেকলমে করানো হয়, তাতে স্থানীয় মানুষদের যুক্ত করার নির্দেশ রয়েছে। এই কাজে নজর দিচ্ছে না কোন কোন স্কুল, এ বার তার উপরেই নজরদারি চালাতে চাইছে স্কুলশিক্ষা দফতর।