ফাইল ছবি
এক ব্যবসায়ীকে হুমকি দিয়ে ৫০ লক্ষ টাকা নেওয়ার সময়ে গ্রেফতার হওয়া ঝাড়খণ্ডের আইনজীবী রাজীব কুমার আগেও কি কলকাতার ব্যবসায়ীদের থেকে টাকা নিয়েছিলেন? ওই আইনজীবীর গ্রেফতারির পরে তদন্তে এ রকমই তথ্য উঠে আসছে। তবে, ওই টাকা কোথায় হাতবদল হয়েছে, তা নিয়ে লালবাজারের গোয়েন্দারা নিশ্চিত নন।
লালবাজার সূত্রের খবর, ধৃত আইনজীবী রাজীব কুমার ওই টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেননি। সূত্রের দাবি, গত সপ্তাহে লালবাজারে ডেকে পাঠানো হয়েছিল এমন কয়েক জন ব্যবসায়ীকে। তাঁরা যেমন ওই ঘটনার কথা স্বীকার করেননি, তেমনই কোনও অভিযোগও জানাতে চাননি পুলিশে। গত ৩১ জুলাই দক্ষিণ কলকাতার একটি শপিং মলে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা নেওয়ার সময়ে হাতেনাতে ধরা পড়েন রাজীব। ওই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে রাঁচী হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছিল। সেই মামলা নিয়ে রফা করতেই কলকাতায় আসেন রাজীব।
তল্লাশিতে রাঁচী থেকে তাঁর বিপুল সম্পত্তির হদিস মেলে। পাশাপাশি, রাজীব কুমারের সঙ্গে ঝাড়খণ্ডের প্রশাসনিক মহলের শীর্ষ স্তরের ব্যক্তিদের যোগাযোগের প্রমাণও পেয়েছিলেন তদন্তকারীরা। তাঁদের এক জন ইডি-র ডেপুটি ডিরেক্টর সুবোধ কুমার। যিনি বর্তমানে ওড়িশার ভুবনেশ্বরে কর্মরত। ২০১৬ থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত তিনি রাঁচীতে কর্মরত ছিলেন। লালবাজারের দাবি, মঙ্গলবার তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য তদন্তকারীরা ভুবনেশ্বর যান। কিন্তু তিনি লালবাজারে ইমেল করে জানান, আগামী ১৭ অগস্ট পর্যন্ত ছুটিতে রয়েছেন। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা জানান, ফের তাঁকে নোটিস দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। কারণ, রাজীব কুমারের বিভিন্ন চ্যাট থেকে ওই অফিসার সম্পর্কে নানা তথ্য মিলেছে। যা খতিয়ে দেখার জন্যই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার।
অন্য দিকে, লালবাজারের একটি সূত্রের দাবি, ওই অফিসার ছাড়াও একাধিক কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল রাজীব কুমারের। রাজ্য প্রশাসনের অনেকের সঙ্গেও একই রকম সম্পর্কের প্রমাণ পেয়েছেন তদন্তকারীরা। যা থেকে তাঁদের অনুমান, সকলে মিলেই ওই জনস্বার্থ মামলা দায়ের করার পরে ভয় দেখিয়ে কিংবা সমঝোতা করে দেওয়া হবে বলে টাকা আদায় করতেন। তাঁদেরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হবে বলে সূত্রের খবর।
রাঁচীতে রয়েছে কলকাতা পুলিশের একটি দল। সেই দলটি রাজীব কুমারের বিপুল সম্পত্তির সন্ধান পেয়েছে। মিলেছে একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বিপুল টাকার হদিস। তার উৎস জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা।
পুলিশ জানায়, রাঁচীতে প্রায় সাতশো জনস্বার্থ মামলার সঙ্গে যুক্ত অভিযুক্ত। জনস্বার্থ মামলা করেছেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের বিরুদ্ধেও। তবে তিনি নিজে নয়, অন্য এক জনকে দিয়ে ওই মামলা দায়ের করাতেন। পুলিশ জানিয়েছে, যাঁকে দিয়ে ওই মামলা দায়ের করাতেন, তাঁর খোঁজ চলেছে।