শিয়ালদহ স্টেশন। —ফাইল চিত্র।
শিয়ালদহ ডিভিশনের দমদম, সোনারপুর, মধ্যমগ্রাম, বারাসত, নৈহাটি, কল্যাণী-সহ শহরতলির একাধিক স্টেশনের ভোলবদলের আশা দেখছে রেল। সৌজন্যে, ‘অমৃত ভারত’ প্রকল্পের বিপুল বরাদ্দ। আজ, সোমবার ভিডিয়োর মাধ্যমে সারা দেশে এই প্রকল্পের আওতায় ৫৫৪টি স্টেশনের উন্নয়নের কাজের আনুষ্ঠানিক সূচনা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
বছরখানেক আগেই ওই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল শিয়ালদহ স্টেশনকে। সেই মতো মাস্টার প্ল্যান তৈরি হয়ে গেলেও স্টেশনের সামনের পরিসরে কাজ শুরু করা যায়নি। কারণ, ওই কাজের জন্য বেলেঘাটা রোড-সহ আরও কিছু রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন হবে। ওই বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছেন রেল কর্তৃপক্ষ। রেল সূত্রের খবর, সারা দিনের বিভিন্ন সময়ে গাড়ির ভিড় সংক্রান্ত তথ্য ট্র্যাফিক বিভাগকে দেওয়া হয়েছে।
যান নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত জটিলতা মিটলে শিয়ালদহ স্টেশনের সামনের পরিসরে গাড়ি রাখার জায়গা প্রস্তুত করা এবং যাত্রীদের স্টেশনে প্রবেশ ও প্রস্থানের পথ আলাদা করে দেওয়া হবে। যাত্রীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে একাধিক পরিকাঠামোও তৈরি করা হবে।
শিয়ালদহ স্টেশনে বাইরের আলোকসজ্জা ছাড়াও প্ল্যাটফর্মের ভিতরে যাত্রীদের তথ্য সংক্রান্ত ব্যবস্থায় একাধিক বদল আনা হচ্ছে। একাধিক এলইডি স্ক্রিন ছাড়াও, বিভিন্ন চিহ্ন ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়াও ১ থেকে ৪ নম্বর পর্যন্ত প্ল্যাটফর্মের দৈর্ঘ্য বাড়ানো হচ্ছে, যাতে ১২ কোচের রেক সেখানে থামতে পারে। চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে বাফারের দিকে ১০ মিটার ভেঙে ওই কাজ শুরু হয়েছে। আগামী মে মাসের মধ্যে চারটি প্ল্যাটফর্ম সম্প্রসারণের কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে বলে রবিবার জানিয়েছেন শিয়ালদহ ডিভিশনের রেলওয়ে ম্যানেজার দীপক নিগম। প্ল্যাটফর্মে যাত্রীরা যাতে ঘেরা অংশ এড়িয়ে সাবধানে যাতায়াত করেন, সে জন্য রেলের তরফে আবেদন জানানো হয়েছে।
শিয়ালদহ শাখার অন্যতম ব্যস্ত স্টেশন দমদম জংশনের উন্নয়নের জন্য অমৃত ভারত প্রকল্পের আওতায় ৭ কোটি ৯৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ওই পরিকল্পনায় স্টেশনের বাহ্যিক সজ্জার বদল ছাড়াও পানীয় জল, আলো, শৌচাগার, যাত্রী প্রতীক্ষালয় উন্নত করার কথা ভাবা হয়েছে। এ ছাড়াও প্ল্যাটফর্মে গ্রানাইট পাথর বসানো, যাত্রীদের প্রবেশ ও প্রস্থানের পৃথক পথ তৈরি-সহ একাধিক পরিকল্পনা রয়েছে।
এই প্রকল্পের আওতায় সোনারপুর স্টেশন ৮ কোটি ১০ লক্ষ, বারাসত স্টেশন ২৮ কোটি ৮৩ লক্ষ, মধ্যমগ্রাম স্টেশন ১৩ কোটি ২৭ লক্ষ, বনগাঁ স্টেশন ২৯ কোটি ৫৪ লক্ষ, নৈহাটি এবং কল্যাণী স্টেশন ৭ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা করে পাবে। তবে শুধু গেদে স্টেশনের জন্যই বরাদ্দ করা হয়েছে ১৮ কোটি ৫ লক্ষ। এ কথা জানিয়েছেন শিয়ালদহের ডিভিশনের রেলওয়ে ম্যানেজার।
পরিকল্পনার আওতায় বনগাঁ এবং বারাসতের মতো কয়েকটি স্টেশনে নতুন ছাউনি নির্মাণ, পারাপারের জন্য ১২ মিটার চওড়া উড়ালপথ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। সব ক’টি স্টেশনেই যাত্রীদের দ্রুত প্রবেশ এবং প্রস্থানের জন্য একাধিক লিফ্ট এবং চলমান সিঁড়ি বসানো হবে। স্টেশনগুলিকে স্থানীয় স্তরে ব্যবসা বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবেও গড়ে তুলতে চায় রেল। আগামী ৫০ বছরের চাহিদা পূরণের উপযোগী করার উপরে এই প্রকল্পে জোর দেওয়া হচ্ছে বলে এ দিন জানিয়েছেন শিয়ালদহের সিনিয়র ডিভিশনাল কমার্শিয়াল ম্যানেজার শান্তনু চক্রবর্তী।
কলকাতা স্টেশনকে দূরপাল্লার গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনের পৃথক টার্মিনাল হিসাবে গড়ে তোলার কথাও ভাবছে রেল। এ জন্য বিশেষজ্ঞ সংস্থার সঙ্গে আলোচনাও শুরু হয়েছে।