প্রিন্সেপ ঘাট। ছবি: সংগৃহীত।
প্রিন্সেপ ঘাট থেকে ম্যান ও ওয়ার জেটি কিংবা ইডেন গার্ডেন্স থেকে মল্লিকঘাট ফুলবাজার হয়ে বি বা দী বাগ। গঙ্গার ধারে চক্ররেল যেন কলকাতার নানা ঐতিহ্য আর ইতিহাসের কোলাজ। প্রায় দেড়শো বছর আগে বন্দরের পণ্য নদী-তীরবর্তী বিভিন্ন গুদামে পৌঁছে দিতে খিদিরপুর থেকে বাগবাজার পর্যন্ত তৈরি হয়েছিল ক্যালকাটা পোর্ট কমিশনার্স রেলওয়ে। পরে সেই রেলের একাংশ সম্প্রসারিত হয় দক্ষিণে মাঝেরহাট পর্যন্ত। অন্য দিকে, উত্তরে জঞ্জাল বহনের জন্য তৈরি হওয়া ক্যালকাটা মিউনিসিপ্যাল গারবেজ রেলওয়ে সম্প্রসারিত হয় বাগবাজার থেকে কাশীপুর গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরি হয়ে চিৎপুর পর্যন্ত। ছোট ছোট করে তৈরি হওয়া ওই সব রেলপথের সঙ্গে শিয়ালদহের শহরতলির রেল আশির দশকে
জুড়ে গিয়ে কলকাতার চক্ররেলের আকার নেয়।
১৯৪৭ সালের পর থেকে বন্দরের পণ্যবাহী রেলকে যাত্রিবাহী রেলে পরিবর্তিত করা নিয়ে আলোচনা শুরু হলেও নানা কারণে সেই উদ্যোগ ফলপ্রসূ হয়নি। শেষ পর্যন্ত কলকাতায় মেট্রো রেলের যুগ শুরু হওয়ার মুখে, ১৯৮৪ সালে এ বি এ গনিখান চৌধুরীর তৎপরতায় পুরোমাত্রায় যাত্রিবাহী রেলপথ হিসাবে সূচনা হয় চক্ররেলের। চলতি বছরে এই রেলপথ ৪০ বছরে পা দিয়েছে। শিয়ালদহ উত্তর শাখার যাত্রীদের শহরে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে চক্ররেলের গুরুত্ব অনেক। একই ভাবে এই রেলপথ শিয়ালদহ স্টেশনকে এড়িয়ে উত্তর এবং দক্ষিণ শাখার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ-সেতুও। প্রায় ৪৪ কিলোমিটার পথে ২১টি স্টেশন জুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই রেলপথের গুরুত্ব তুলে ধরতে এ বার উদ্যোগী হচ্ছে শিয়ালদহ ডিভিশন।
২০১৩ সালের পর থেকে গত ১১ বছরে চক্ররেলের যাত্রী বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। এখন এই রেলপথের ২৭টি ট্রেনে দৈনিক প্রায় ৬৫ হাজার যাত্রী সফর করেন। চক্ররেলের চার দশক পূর্তি উপলক্ষে আগামী শনিবার কলকাতা স্টেশন থেকে প্রিন্সেপ ঘাট স্টেশন পর্যন্ত বিশেষ ট্রেন চালাবে পূর্ব রেল। শিয়ালদহ ডিভিশনের একমাত্র মহিলা পরিচালিত স্টেশন প্রিন্সেপ ঘাটে প্রদর্শনীর মাধ্যমে তুলে ধরা হবে চক্ররেলের নানা পর্বের ইতিহাস।