জোরকদমে: জট কাটিয়ে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ এগোচ্ছে স্ট্র্যান্ড রোডে। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
দেশের অন্য সব মেট্রোয় প্রতি কিলোমিটার ট্রেন চালাতে কর্মী লাগে ৩৮ জন। কিন্তু কলকাতা মেট্রোয় একই দূরত্বের জন্য ১০০ জন কর্মী রয়েছেন।
অথচ, এই মেট্রোর ব্যয়ের নিরিখে আয় ক্রমেই কমছে। ২০১৪-’১৫ আর্থিক বছরে কলকাতা মেট্রোয় ১০০ টাকা আয় করতে খরচ হচ্ছিল ২৫৪ টাকা। এখন ওই অঙ্ক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০০ টাকার কাছাকাছি। এই অবস্থা দেখে কলকাতা মেট্রোকে খরচ কমিয়ে আয় বাড়াতে বললেন রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান আর কে মিত্তল।
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো হচ্ছে কলকাতায়। তার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন লিমিটেড (কেএমআরসিএল) কলকাতা মেট্রোরই অঙ্গ। ফলে সেখানে নতুন কর্মী নিয়োগ না করে কলকাতা মেট্রো থেকেই আপাতত কর্মীদের কেএমআরসিএল-এ পাঠানোর চিন্তা করছে রেল মন্ত্রক। এতে খরচ অনেকটা কমবে। এ দিন মেট্রোর সঙ্গে আলাদা করে বৈঠকের সময়ে রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন। পাশাপাশি, মেট্রোকে যাত্রী-ভাড়ার বাইরে আয় বাড়ানোর কথাও বলেন তিনি।
এই বৈঠকের পরে এ দিন চেয়ারম্যান যান গঙ্গার তলায় কাটা ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সুড়ঙ্গ পরিদর্শনে। বিকেল তিনটে নাগাদ তিনি পৌঁছন হাওড়া ময়দানে। সুড়ঙ্গ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতেই গঙ্গা পেরোন তিনি। পরে মিত্তল বলেন, ‘‘এত দিনে একটা কঠিন কাজের ভাল পরিসমাপ্তি ঘটল। নদীর নীচে সুড়ঙ্গ কাটাতে গিয়ে প্রকল্পের গতি কিছুটা কমে গিয়েছিল। এ বার কাজের গতিও বাড়বে।’’
পরিদর্শন: গঙ্গার নীচে প্রস্তুত মেট্রোর সুড়ঙ্গ ঘুরে দেখলেন রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান আর কে মিত্তল। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
কলকাতা-হাওড়া শহরে গোটা পথটাতেই ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো চলবে মাটির নীচ দিয়ে। তাই যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টিতে বিশেষ জোর দিয়েছে কেএমআরসিএল। প্রতিটি স্টেশনে ভূমিকম্প প্রতিরোধী ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সুড়ঙ্গ দু’টি দীর্ঘ হওয়ায় বাইরে থেকে নির্মল বাতাস ঢোকানোর ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। যাতে যাত্রীদের শ্বাসপ্রশ্বাসের কোনও অসুবিধা না হয়। থাকছে আরও ব্যবস্থা। এ দিন মিত্তল বলেন, ‘‘এই সব কাজের জন্য অতিরিক্ত সময় ধরেও আশা করছি, ২০২০ সালের আগেই হাওড়া থেকে সল্টলেকের পাঁচ নম্বর সেক্টর পর্যন্ত টানা ইস্ট-ওয়েস্ট চলানো যাবে।’’ ইস্ট-ওয়েস্টের কাজে দেরি হয়েছে মূলত জমি অধিগ্রহণ নিয়ে। তবে এ দিন মিত্তল বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার এখন যথেষ্ট সাহায্য করছে। সব জমিই পাওয়া গিয়েছে। কাজে আপাতত সমস্যা নেই।’’
২০১২ সালে যখন এই প্রকল্পের দায়ভার রেলের হাতে যায়, তখনই ঠিক হয়েছিল প্রথম পর্যায়ে কাজ হবে পাঁচ নম্বর সেক্টর থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত। সময়সীমা ধরা হয়েছিল, ২০১৩ সালের অগস্ট। আর দ্বিতীয় পর্যায়ে শিয়ালদহ থেকে হাওড়া ময়দান পর্যন্ত কাজের সময়সীমা ধরা ছিল ২০১৪-র অক্টোবর। তখন প্রকল্পের ব্যায় ধরা ছিল ৪ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা। কিন্তু রেল সূত্রের খবর, সময় বেড়ে যাওয়ায় এখন খরচ হবে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। এ দিন বোর্ড কর্তা দাবি করেন, ‘‘সেই টাকা জোগান দেওয়া হবে।’’
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সুড়ঙ্গ যেখান দিয়ে গিয়েছে, তার কিছু অংশে অনেক সৌধ রয়েছে। ন্যাশনাল মনুমেন্ট অথরিটি ওই সব এলাকায় সুড়ঙ্গ কাটার অনুমতি দেওয়ার সময়ে মেট্রোকে বলেছিল, ওই এলাকার নীচে যে সব স্টেশন হবে সেগুলিকে মানানসই ভাবে সাজাতে। মেট্রোকর্তারা জানান, তা মাথায় রেখে ডালহৌসি চত্বরের স্টেশনগুলিতে নির্মাণ চলছে।