ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো নিয়ে রাজ্যের অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় যা বলেছিলেন, হলফনামায় তা পুরোপুরি বদলে দিল রাজ্য সরকার। অশোকবাবু সওয়ালে বলেছিলেন, ‘ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোয় রাজ্যের অংশীদারি রয়েছে ২০.৯ শতাংশ।’ কিন্তু সোমবার হলফনামায় সরকার জানিয়েছে, আর্থিক অংশীদারি না থাকলেও প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ইত্যাদি বিষয়ে রাজ্যের দায়বদ্ধতা আছে। সরকার মনে করে, সেই দায়বদ্ধতাই ‘অংশীদারি’। আর সেই কারণে প্রকল্পটি যাতে প্রকৃত অর্থেই জনগণের উপযোগী হয়, তা দেখার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের।
গত ২১ নভেম্বর বিচারপতি নাদিরা পাথেরিয়ার প্রশ্নের উত্তরে রাজ্য সরকারের অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোয় রাজ্যের ২০.৯ শতাংশ অংশীদারি রয়েছে। বিচারপতি রাজ্যকে হলফনামা দিয়ে তাদের বক্তব্য জানাতে বলেন। কারণ, গত জুনে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের নির্দেশে কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন, ঠিকাদার সংস্থা এবং রাজ্যের প্রতিনিধি দল এক বৈঠকে কাজ শুরুর ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছয়। তখন রাজ্য তাদের অংশীদারি রয়েছে বলে কিছু জানায়নি।
এই প্রকল্প নিয়ে আগেও একাধিক বার কলকাতা হাইকোর্টে হলফনামা দাখিল করেছে রাজ্য সরকার। এ দিনের হলফনামায় রাজ্যের অংশীদারির কথা বলতে গিয়ে সরকার তাদের দায়-দায়িত্বের কথা জানিয়েছে। অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল এ দিন কার্যত তেমন কিছু সওয়াল করেননি। আগামী শুক্রবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
এ দিনের শুনানিতে মেট্রোর ঠিকাদার সংস্থার তরফে আদালতে আবেদন করা হয়, রাজ্য যদি বিকল্প পথেও ওই মেট্রো নিয়ে যেতে চায়, তা হলে হাওড়া থেকে মহাকরণ (যে রুট নিয়ে বিতর্ক নেই) পর্যন্ত অন্তত কাজ শুরু করতে দিক। কারণ ওই অংশেও কাজ বন্ধ রয়েছে। এ দিন বিচারপতি নাদিরা পাথেরিয়ার কাছে মেট্রো প্রকল্পের ঠিকাদার সংস্থার আইনজীবী জয়ন্ত মিত্র অভিযোগ করেন, রাজ্য ওই কাজ শুরুর ব্যাপারে কোনও উচ্চবাচ্য করছে না। তাঁর আরও অভিযোগ, কাজ শুরু করতে চেয়ে জুন মাসের পর থেকে একাধিক বার রাজ্যকে চিঠি দিয়েও উত্তর মেলেনি।
জয়ন্তবাবু এ দিন আদালতে জানান, প্রকল্পের বিকল্প রুট নিয়ে বিতর্ক চলছে। কিন্তু হাওড়া থেকে ব্রেবোর্ন রোড পর্যন্ত অংশ নিয়ে কোনও পক্ষেরই বিতর্ক নেই। তাই হাওড়া থেকে ওই পর্যন্ত (যে রুটের কিছুটা হুগলি নদীর নীচ দিয়ে যাবে) কাজ শুরু করা যেতেই পারে। তা করতে কমবেশি দু’বছর লাগবে বলেও ঠিকাদার সংস্থার আইনজীবী জানান। জয়ন্তবাবুর আরও বক্তব্য, ওই দু’বছরের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক এই মেট্রো কোন পথে যাবে।
কিন্তু হাওড়া থেকে এগোতে গেলে মেট্রোর কাজে রাজ্যের ভূমিকা কী? ঠিকাদার সংস্থা সূত্রের খবর, ব্রেবোর্ন রোড পর্যন্ত কাজ এগিয়ে আনতে রাস্তার দু’টি ‘ফ্ল্যাঙ্ক’ ছ’মাস করে ঘিরে রাখতে হবে। রাস্তা ঘিরে রাখার দায়িত্ব রাজ্যের। সরকার উদ্যোগী না হলে কাজ করা যাবে না।
ঠিকাদার সংস্থা সূত্রের খবর, সুড়ঙ্গ কাটার যন্ত্র বার করতে হবে ব্রেবোর্ন রোডের মাঝখান দিয়ে। নির্ধারিত রুটে মহাকরণ স্টেশন তৈরি হলে ওই যন্ত্র সেন্ট্রাল স্টেশন বা কাছাকাছি কোথাও ভূগর্ভ থেকে আনলেও চলত। কিন্তু সরকার মহাকরণ স্টেশনের জায়গা নিয়ে বিকল্প চিন্তা করায় ওই যন্ত্র ব্রেবোর্ন রোডে বার করা ছাড়া গত্যন্তর নেই। এ সব নিয়েই জট রয়েছে বলে মেট্রোর আধিকারিকেরা মনে করছেন।