—প্রতীকী চিত্র।
মহালয়ার এক মাসও বাকি নেই। শহরে মণ্ডপ, এমনকি বিজ্ঞাপনী হোর্ডিংয়ের বাঁশের কাঠামো সেজে উঠেছে। কিন্তু ব্যানার, হোর্ডিং থেকে পুজোর প্রতিযোগিতার নামে অনেকেই কিছুটা ঢোঁক গিলছেন। একটি পরিচিত বহুজাতিক রং সংস্থার কর্তা মলয় সরকার বলছেন, “আমাদের পুজোর প্রতিযোগিতা আদৌ হবে কি না, এখনই বলা সম্ভব নয়। গত ১৫ দিন ধরে শহরের যা পরিস্থিতি, তা না-পাল্টালে নিশ্চিত কিছু বলা অসম্ভব।” আবার কেউ কেউ বলছেন, পুজো প্রতিযোগিতা আয়োজন বা বিজ্ঞাপনে নানা কারণে নজর কাড়তে ব্যর্থ কোনও সংস্থা শহরের হাওয়া বুঝেই গুটিয়ে থাকছে।
রাত দখল আর মানববন্ধনে মেতে থাকা কল্লোলিনী তিলোত্তমার প্রতিবাদে মুখর মধ্য রাত কিন্তু অনেককে বাঙালির চেনা শারদ উৎসবের অক্লান্ত রাতই মনে করাচ্ছে। শোক ও ক্ষোভের মিশেলে সেই প্রতিবাদই পুজোর জমক নিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে। উৎসবের নেপথ্যের প্রধান কুশীলব সর্বভারতীয় বাণিজ্যিক পৃষ্ঠপোষক তথা স্পনসরকুলই শহরের মেজাজ বুঝে সাবধানে পা ফেলছেন।
কলকাতার ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’-এর সভাপতি তথা হাতিবাগান সর্বজনীনের কর্তা শাশ্বত বসু অবশ্য একেবারেই হতাশ নন। তবে তিনি বলছেন, “স্পনসরদের সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত হতে দোলাচল অবশ্যই তৈরি হয়েছে। মুম্বই, বেঙ্গালুরুর অনেক অফিসের কর্তারাই কলকাতার খবরে নজর রেখে জল মাপছেন।” দক্ষিণের ত্রিধারা সম্মিলনীর কর্তা তথা বিধায়ক দেবাশিস কুমারও চিন্তিত। বালিগঞ্জ কালচারালের অঞ্জন উকিল রাখঢাক না-করেই বলছেন, “অন্য বার এত দিনে শতকরা ৭০ ভাগ চুক্তি চূড়ান্ত হয়ে যায়। এ বার সেটা ৩০ শতাংশ। গণেশ পুজোর পর পর অগ্রিম কিছু টাকা হাতে না-এলে অনেকেরই সমস্যা হবে।” ছোটদের স্বাস্থ্যবর্ধক পানীয়ের সংস্থা এবং বাড়ি ও রান্নাঘরের সরঞ্জাম নির্মাতা একটি সংস্থা এই পুজো নিয়ে হঠাৎই পিছপা বলে পুজোর আয়োজক মহলের খবর। অন্য বার যাদের প্রচার সর্বত্র দেখা যায়, এমন একটি অন্তর্বাস সংস্থার উপস্থিতিও মণ্ডপে এ বার অনেক কম বলে খবর।
উত্তরের বড় পুজো টালা প্রত্যয়ের কর্তারা মনে করেন, “স্পনসরেরা মুখ ফেরালে প্রধানত আগামী বছরের পুজোর পুঁজিতেই টান পড়বে।” আর জি করের ঘটনায় বাঙালির বিষাদকে খাটো করছেন না কাশী বোস লেনের পুজো কর্তা সোমেন দত্ত। তবে তাঁর প্রশ্ন, পুজোর সঙ্গে যুক্ত ঢাকি, কারিগরদের সঙ্গে জাস্টিস বা সুবিচারের কী হবে? পুজো ধাক্কা খেলে তো তাঁদের পেটেই টান পড়বে! তবু সল্টলেকের একটি পুজো যত দূর সম্ভব নিচু তারের আয়োজনের পথে হাঁটছে বলে খবর। শহরের বড়, মেজো, সেজো পুজোর পরিকল্পনা এক বছর আগে শুরু হয়। এবং চাঁদা নয়, বাণিজ্যিক সংস্থার টাকার উপরেই তারা প্রধানত নির্ভরশীল।
অতিমারির বছরে তা-ও বেশ কয়েক মাস আগেই বিপর্যয়টা স্পষ্ট হয়। কিন্তু এ বার আর জি কর-কাণ্ডের অভিঘাত একেবারে শেষবেলায় বোঝা গিয়েছে। কোনও কোনও পুজোকর্তা মনে করেন, পৃষ্ঠপোষকেরা একটু ধীরে চললেও শেষ পর্যন্ত মুখ না-ফিরিয়ে গেট বা হোর্ডিংয়ের দর কমানোর চেষ্টা করবেন। বাঙালির আবেগ বুঝে নিজেদের ভাবমূর্তি নির্মাণে অনেক পুজো আবার তাদের আয়োজনেও প্রতিবাদের বার্তা দিতে উৎসাহী। উৎসব উপদেষ্টা ধ্রুবজ্যোতি বসু শুভর কথায়, “দুর্গাপুজো মানে ৮০ হাজার কোটি টাকা লেনদেনের উৎসব। রাজ্যের জিডিপি-র চার শতাংশের বেশি। পথে নামা প্রতিবাদীরা দুর্গাপুজোর সঙ্গে এত মানুষের জীবিকার যোগ বোঝেন! একটা ভারসাম্য রেখেই পুজো সারা হবে।” আজ, গণেশ চতুর্থী এবং সোমবার সুপ্রিম কোর্টের শুনানির পরেই পুজো ভাঁড়ারের লাভ-ক্ষতির অঙ্ক আর একটু পরিষ্কার হবে।