Durga Puja 2024

পরবাসেও বাড়ির পুজো, তিথি মেনে আয়োজন আটলান্টার বাঙালি পরিবারের

কর দম্পতির পুজোর সূচনা হয় মহালয়ায় চণ্ডীপাঠের মধ্যে দিয়ে। তার পরে যাবতীয় আচার, তিথি মেনে চার দিন পুজো হয়। খামতি থাকে না সন্ধিপুজোর ১০৮টি পদ্ম বা প্রদীপের আয়োজনেও।

Advertisement

সুনীতা কোলে

শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪ ০৫:৩২
Share:

আটলান্টায় কর দম্পতির বাড়ির প্রতিমা। ছবি: সংগৃহীত।

কর্মব্যস্ত জীবনের মধ্যে থেকে সযত্নে সরিয়ে রাখা একটি সপ্তাহান্ত। কোনও কমিউনিটি হল বা স্কুলের জিম ভাড়া করে সেখানেই যাবতীয় বন্দোবস্ত। শহর তো বটেই, কয়েকশো কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে হাজির হওয়া বাঙালিরা একত্রিত হয়ে দু’-তিনটে দিন হইচই, খাওয়াদাওয়া, আড্ডার মেজাজে কাটানো। পরবাসে বাঙালিরা দুর্গাপুজোটা কম-বেশি এ ভাবেই উদ্‌যাপনে অভ্যস্ত।

Advertisement

তাই দীর্ঘদিন ধরে লালিত স্বপ্ন পূরণের রাস্তা যখন খুলে গেল, তখন নির্দিষ্ট তিথি-সময় মেনে, যাবতীয় আচার পালন করে চার দিন ধরেই পুজো করবেন বলে ঠিক করেছিলেন আমেরিকার আটলান্টা নিবাসী কর দম্পতি। একদা কলকাতার বাঘা যতীনের বাসিন্দা, তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী শান্তনু ও স্কুলশিক্ষিকা ইন্দ্রাণী করের বহু দিনের ইচ্ছে পূরণ হয়েছে বছর তিনেক আগে। নিজেদের বাড়িতেই দুর্গাপুজো শুরু করেছেন তাঁরা। ফোনে শান্তনু বললেন, ‘‘আমাদের দু’জনের খুব ইচ্ছে ছিল, বাড়িতে পুজো শুরু করব। কলকাতার ছোট ফ্ল্যাটে সেটা সম্ভব হয়নি। পরে কিছু দিন মুম্বইয়ে কাটিয়ে ২০০৬ সালে আমেরিকায় আসি।’’

শান্তনু-ইন্দ্রাণী জানাচ্ছেন, প্রবাসে নিজেদের পুজো করার ইচ্ছেটা তীব্রতর হয়। তবে বিদেশের নানা নিয়মকানুন সামলে পুজোর আয়োজনে বাধা ছিল অনেক, অভাব ছিল জায়গারও। নতুন বাড়িতে উঠে আসার পরে সেই সমস্যা মেটে। শেষমেশ ২০২২-এ বাড়িতে, নিজেদের পৌরোহিত্যে দুর্গাপুজো শুরু করেন তাঁরা। সহযোগী ছিল তাঁদের যমজ, কলেজপড়ুয়া মেয়েরা— আরাত্রিকা ও ঊর্জশী।

Advertisement

শান্তনু জানাচ্ছেন, কয়েক বছর আগে নিজেরা পুজো করায় কোনও বাধা আছে কিনা, তা দেশে এসে জানতে চান পারিবারিক পুরোহিতের থেকে। তিনি উৎসাহ দেওয়ায় আর দেরি করেননি ওই দম্পতি। পুজোর প্রয়োজনীয় দশকর্মা সামগ্রী,বাসনপত্র নিয়ে ফেরেন আমেরিকায়। শিল্পী সায়ক রায়ের তৈরি ফাইবারের দুর্গা মূর্তিও পৌঁছে যায়। পারিবারিক পুরোহিতের থেকে পুজো করার প্রশিক্ষণ নিতে থাকেন ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে। প্রথম বার পুজোর আয়োজনে তাঁরা হোঁচটও খেয়েছেন বিস্তর। তবে বার দুয়েকের অভিজ্ঞতাসম্বল করে এ বছর তাঁরা বেশ আত্মবিশ্বাসী।

কর দম্পতির পুজোর সূচনা হয় মহালয়ায় চণ্ডীপাঠের মধ্যে দিয়ে। তার পরে যাবতীয় আচার, তিথি মেনে চার দিন পুজো হয়। খামতি থাকে না সন্ধিপুজোর ১০৮টি পদ্ম বা প্রদীপের আয়োজনেও। আমন্ত্রিত বাঙালিদের পাশাপাশি উৎসবে শামিল হন বেশ কিছু অবাঙালিও।

বাঙালির দুর্গাপুজোয় পেটপুজোর বন্দোবস্ত থাকবে না, তা হয় না। তাই লুচি, পোলাও, লাবড়া, ফুলকপির ডালনা, ছানার কোফতা, চাটনি, সন্দেশের মতো সাবেক বাঙালি পদের ভোগ প্রতিদিন রাঁধেন ইন্দ্রাণী নিজেই। তিনি বলেন, ‘‘অসম্ভব ব্যস্ততা থাকে ক’টা দিন। তবে কী করে যেন সব সুষ্ঠু ভাবে হয়েও যায়।’’ অতিথি আপ্যায়ন, পরিবেশনের গুরুদায়িত্ব সামলান দুই কন্যা। পুজোর আয়োজনে হাত লাগান বন্ধুবান্ধবেরাও।

পুজোর মুখে তাই ব্যস্ততা তুঙ্গে কর পরিবারে। এক দিকে শোলা কেটে নানা মোটিফ তৈরি করে মণ্ডপে ‘ফিনিশিং টাচ’ দিতে ব্যস্ত ইন্দ্রাণী, অন্য দিকে আলোকসজ্জা, আবহসঙ্গীতের খুঁটিনাটি পরখ করে নিচ্ছেন শান্তনু। তবে কলকাতার পুজো ঘিরে এ বছরের বিষণ্ণতার আঁচ পড়েছে সুদূর আটলান্টাতেও। আর জি করের মর্মান্তিক ঘটনার কথা মাথায় রেখে কর পরিবারও ডাক দিয়েছে, ‘উৎসব থাক এ বার, ত্রিশূল ধরো মা’। দম্পতি বলেন, ‘‘এই ঘটনা সকলকেই নাড়া দিয়েছে। পুজো মানে যে শুধু আনন্দ করব, তা নয়। আমরা চাই বিষয়টা নিয়ে মানুষ কথা বলুন, সুবিচারের দাবি উঠুক সর্বত্র।’’

পুজোয় নারীর সাক্ষরতা ও স্বনির্ভরতারও বার্তা দিতে চান তাঁরা। পশ্চিমবঙ্গের ‘ফিড’ নামের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির সঙ্গে আরাত্রিকা ও ঊর্জশী যুক্ত রয়েছেন করোনাকাল থেকেই। ওই সংস্থা পরিচালিত একাধিক স্কুল ও অন্য কর্মসূচির কথাও তাঁরা অতিথিদের সামনে তুলেধরবেন, যাতে দেশে কল্যাণমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে আরও মানুষ উৎসাহিত হন। শান্তনু-ইন্দ্রাণী বলেন, ‘‘দেশের টানে, পুজোর টানে এ ভাবেই বেঁধে বেঁধে থাকতে চাই আমরা প্রবাসীরা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement