সপ্তমীতে জনপ্লাবন। —নিজস্ব চিত্র।
বনেদি বাড়ি থেকে বারোয়ারি— সপ্তমীতে জমজমাট ভিড় কলকাতায়। প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে জনজোয়ার। সাবেকি থেকে থিমপুজো, আলোর রোশনাই মেখে সপ্তমীর রাতে হুল্লোড়ে মেতেছে বাঙালি। সপ্তমীতে কোন কোন পুজো সবচেয়ে বেশি ভিড় টানল?
হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস ছিল, সপ্তমীও বৃষ্টিতে ভিজবে। ষষ্ঠীর রাতে দু’দফায় বৃষ্টির পরে রাত জেগে ঠাকুর দেখা দর্শনার্থীদের সংখ্যা অনেকটাই কমেছিল। কিন্তু রবিবার সন্ধ্যার পর কলকাতার কোথাও বৃষ্টি হয়নি। সপ্তমীতে তাই আনন্দ চেটেপুটে নিচ্ছেন দর্শনার্থীরা।
শহরের বড় বাজেটের পুজোগুলোর মধ্যে অগ্রগণ্য চেতলা অগ্রগামী, সুরুচি সংঘ, শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাব, একডালিয়া এভারগ্রিন, মুদিয়ালি, ত্রিধারা সম্মিলনী, ২৫ পল্লী, সেলিমপুর, যোধপুর পার্ক কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন, মুদিয়ালি, বোসপুকুর শীতলা মন্দির, হাতিবাগান সর্বজনীনের পুজো রয়েছে। দক্ষিণের গড়িয়াহাট থেকে উত্তরের শ্যামবাজার, শুধুই জনজোয়ার।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
প্রয়াত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের নাম জড়িয়ে থাকা একডালিয়া এভারগ্রিনের পুজোয় সপ্তমীতে ভালই ভিড় হয়েছে। একডালিয়া ৮০তম বর্ষে তৈরি করেছে গুজরাতের সরস্বতী মন্দিরের আদলে মণ্ডপ। পুজো কমিটির সদস্যেরা জানাচ্ছেন, এ বারের পুজো তাঁরা উৎসর্গ করছেন সুব্রতকে। কয়েকটি প্যান্ডেল প্রচুর দর্শক টেনেছে। তার মধ্যে আছে মন্ত্রী সুজিত বসুর শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাব। শ্রীভূমির ‘ভ্যাটিকান সিটি’ দেখতে ভালই দর্শক হয়েছে। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ শিরোধার্য করে গত বারের মতো এ বার যাতে ভিআইপি রোডে যানজট না হওয়ায়, সে দিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখেছেন সুজিত। রবিবার সকাল থেকেই শ্রীভূমির মণ্ডপে ভিড় ছিল। তবে উল্টোডাঙাগামী বা এয়ারপোর্টের দিকে যাওয়া গাড়ি এবং বাইক মোটের উপর মসৃণ ভাবে ছুটেছে।
দক্ষিণ কলকাতার আর একটি বড় পুজো নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘ। এত দিন প্রতি বছর তাক লাগিয়েছেন উদ্যোক্তারা। কিন্তু যে পুজোর সঙ্গে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম জড়িয়ে, দুর্নীতি মামলায় তাঁর গ্রেফতারির প্রেক্ষিতে ওই পুজো এ বার কেমন লোক টানে সে দিকে নজর ছিল। সপ্তমীতে নাকতলার ‘মোটা কাপড়’ থিম দেখতে সন্ধ্যা থেকেই ভিড় বেড়েছে।
ভিড়ে ভিড়ে একাকার মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম যে পুজোর সঙ্গে যুক্ত, সেই চেতলা অগ্রণীর মণ্ডপেও। কম যায়নি মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সুরুচি সংঘও। সপ্তমীর রাত যত বেড়েছে, ততই জমকালো ভিড় দেখা গিয়েছে য়ে পুজো উদ্বোধনে ঢাক কাঁধে চমকে দিয়েছিলেন মমতা। অরূপদের এ বারের পুজোর থিম ‘পৃথিবী আবার শান্ত হবে’।
দক্ষিণ কলকাতার অন্যতম পুজো বড়িশা ক্লাবের থিম ‘সাঁঝবাতি’। ওই মণ্ডপেও ভাল ভিড় লক্ষ করা গিয়েছে। ত্রিধারা সম্মিলনীর এ বারের থিম ‘দৌড়’ দেখতে জড়ো হচ্ছেন প্রচুর দর্শক। অভিষ্ট্য লক্ষ্যের উদ্ধেশ্যে দৌড়চ্ছেন সবাই। এই দৌড়কেই থিম হিসাবে তুলে ধরেছে ত্রিধারা সম্মিলনী। প্রতি বছরের মতো যোধপুর পার্ক কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনে হচ্ছে এ বারেও সাবেকি আদলে পুজো হচ্ছে। ভিড় টানল তারাও। মহালয়ার সন্ধ্যায় এই পুজোর উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ ছাড়া, উত্তর ও দক্ষিণের যে বিখ্যাত পুজোগুলোয় ভাল জনাসমাগম দেখা গিয়েছে, তাতে রয়েছে ২৫ পল্লী, মুদিয়ালি, বোসপুকুর শীতলা মন্দির, নলিনী সরকার স্ট্রিট, শিবমন্দির, হাতিবাগান সর্বজনীনের পুজোর মণ্ডপে রাত বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে জনসমাগম।
স্বাধীনতার ৭৫ বছরের পূর্তি উপলক্ষে সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যার এ বার মণ্ডপ করেছে লালকেল্লার আদলে। সপ্তমীর রাতে সেখানেও জনসমাগম দেখা গিয়েছে। এ বারের পুজোয় প্রবল আলোচিত উত্তর কলকাতার টালা প্রত্যয়ে সপ্তমীতে ভিড়ের ধারাবাহিকতা অটুট। ‘ঋতি: দ্য মোশন’ থিম দেখতেও বৃষ্টির ষষ্ঠীতে জব্বর ভিড় ছিল।
সব মিলিয়ে সপ্তমীতে ভিড়ের মেদ বাড়ল আরও। মাথায় আছে বৃষ্টির পূর্বাভাস। সেই আশঙ্কায় হয়তো তড়িঘড়ি পরিক্রমা সেরে ফেলছে আমজনতা।