গণেশ সাহা।
পুজোয় কলকাতায় ঠাকুর দেখতে এসে বিসর্জনের ঘাটে রাখা পুরসভার ক্রেনের ধাক্কায় আহত হল বছর সাতেকের এক বালক। বুধবার, দশমীর দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে বাবুঘাটে। ব্রেক ফেল করা ক্রেনটির ধাক্কায় ওই বালকের পাশাপাশি আরও কয়েক জন জখম হন বলে অভিযোগ। গণেশ সাহা নামে ওই বালককে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ঘটনার পরে বাবুঘাটে উপস্থিত একটি পুজো কমিটির লোকজন ক্রেনের চালককে ধরে মারধর করেন। তা দেখে পাল্টা আসরে নামেন সেই সময়ে ঘাটে উপস্থিত অন্যান্য ক্রেনের চালক থেকে শুরু করে পুরসভার সাফাইকর্মীরা। দু’পক্ষের মারামারিতে ধুন্ধুমার বেধে যায় ঘাট চত্বরে। কিন্তু অভিযোগ, সেই সময়ে আশপাশে তেমন ভাবে পুলিশকর্মীদের দেখা যায়নি। পরে খবর পেয়ে পুলিশ আসে। এ নিয়ে পুলিশের তরফে দাবি করা হয়েছে, তাদের দুপুর দুটোর পর থেকে বাবুঘাটে ডিউটির নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু বিসর্জন তো শুরু হয়ে গিয়েছে দশমীর সকাল ৯টা থেকেই! এতেই প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি পুরসভা এবং পুলিশের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ছিল? খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসা পুরসভার মেয়র পারিষদ তথা বিসর্জন তত্ত্বাবধানের দায়িত্বপ্রাপ্ত দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘সকালের দিকে সে ভাবে প্রতিমা আসে না। সেই ভেবেই হয়তো পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে এমন দুর্ঘটনা দুঃখজনক। পরিস্থিতি কড়া হাতে সামাল দেওয়ার কথা বলেছি।’’ এই ঘটনার কথা শুনে বিকেলে বাবুঘাটে আসেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, ‘‘যেটুকু জানতে পেরেছি, ঘাটের ঢালু অংশে কিছুটা জল পড়ে ছিল। তাতেই গড়িয়ে যায় ক্রেনটির চাকা। তবে ওই বালকের আঘাত খুব গুরুতর নয়।’’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অসমের বাসিন্দা গণেশ দুর্গাপুজো দেখবে বলে পরিবারের সঙ্গে গত ২ অক্টোবর কলকাতায় আসে। উঠেছিল বাগুইআটির একটি হোটেলে। আজ, বৃহস্পতিবার একাদশীর দিন তাঁদের ফিরে যাওয়ার কথা। গণেশের বাবা রঞ্জিতকুমার সাহা বলেন, ‘‘গত কয়েক দিন মণ্ডপে ঘুরে ঘুরে ছেলে ঠাকুর দেখেছে। আমিই বলেছিলাম, এ দিন বিসর্জন দেখাতে নিয়ে যাব। সেই শুনে ওর কী আনন্দ! সকাল সকাল হোটেল থেকে বেরিয়ে বাবুঘাটে পৌঁছে যাই। দুপুর ১টা ৫০ নাগাদ এই ঘটনা ঘটে।’’
গণেশের মা কাঞ্চনা সাহা জানান, অন্য অনেকের সঙ্গে তাঁরাও দাঁড়িয়ে ছিলেন ঘাটের কাছে। কাঠামো জলে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তুলে ফেলার জন্য পুরসভার ব্যবস্থা করা ক্রেনগুলি সেই সময়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল বিসর্জনের জায়গায়। তখনই একটি ক্রেন হঠাৎ করে ঘাটের ঢালু অংশে গড়াতে শুরু করে। সামনে থাকা কয়েক জনকে ধাক্কা মেরে সেটি সোজা গণেশের গায়ে ধাক্কা দেয়। ধাক্কার চোটে মাটিতে পড়ে যায় ওই বালক। ঘাটের যেখানে জল রয়েছে, তার সামনে বেশ কিছু বালির বস্তা ফেলা হয়েছিল পুরসভার তরফে। চালক ক্রেনটিকে থামাতে না পারায় সেটির চাকা বালির বস্তায় গিয়ে আটকে যায়। কাঞ্চনা বলেন, ‘‘ওই বালির বস্তা না থাকলে ছেলেকে হয়তো পিষেই দিত ক্রেনটা। বার বার বলার পরেও চালক ক্রেন থামাতে পারেননি।’’ দ্রুত ওই বালককে উদ্ধার করে এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার বাঁ পায়ে প্লাস্টার করা হয়েছে। মাথার নানা অংশে ছাল উঠে যাওয়ায় সেখানেও ওষুধ দেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনার পরেই ক্রেনের চালককে ধরে মারধর শুরু করেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত একটি পুজো কমিটির লোকজন। চালক অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘ক্রেনের ব্রেক ফেল করেছিল। কিছুতেই সেটি থামানো যাচ্ছিল না। আমি ইচ্ছে করে তো করিনি!’’