বাঁচতে মরিয়া মধুগড়, লড়ছে প্রমোদনগর

প্রমোদনগরও পুরকর্তাদের চিন্তা বাড়িয়েছে। চিন্তিত রাজ্য প্রশাসনও। কারণ, গত এক-দেড় মাসে ওই অঞ্চলে কয়েকশো মানুষ অজানা জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন।

Advertisement

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:০৪
Share:

দূষণ: পুকুরপা়ড়ে আবর্জনার স্তূপ প্রমোদনগরে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।

ঠেকে শিখল মধুগড়। আর ডেঙ্গির থাবায় কোণঠাসা হয়ে আপ্রাণ লড়াই শুরু করেছে প্রমোদনগর।

Advertisement

মধুগড় দক্ষিণ দমদম পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে। প্রমোদনগর তিন নম্বরে। এ বছর ডেঙ্গির ‘মুক্তাঞ্চল’ হিসেবে মধুগড় সংবাদের শিরোনামে উঠে এসেছিল। ডেঙ্গিতে মৃত্যুও ঘটেছে ওই এলাকায়। এখনও মাঝেমধ্যে কেউ না কেউ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হচ্ছেন সেখানে। তবে তা আগের তুলনায় অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে বলে এলাকার মানুষই দাবি করছেন। সেই সঙ্গেই তাঁরা বলছেন, ‘‘ঠেকে শিখছি।’’

প্রমোদনগরও পুরকর্তাদের চিন্তা বাড়িয়েছে। চিন্তিত রাজ্য প্রশাসনও। কারণ, গত এক-দেড় মাসে ওই অঞ্চলে কয়েকশো মানুষ অজানা জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। এখনও প্রতিদিন জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন অনেকে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুরসভা মশা মারার চেষ্টা করলেও কাজ হচ্ছে না। এক পাড়া থেকে আর এক পাড়ায় ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গি।

Advertisement

প্রমোদনগরের বাসিন্দা সুভাষ সরকারের বক্তব্য, কাউন্সিলরের তরফে ক্যাম্প ও রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হলেও ডেঙ্গি তাঁদের পিছু ছাড়ছে না। তাঁর কথায়, ‘‘একটি বাড়িতে ডেঙ্গি হলেই আশপাশে তা ছড়িয়ে পড়ছে। প্রশাসনের উপরে নির্ভরতার পাশাপাশি আমাদেরও এখন সচেতন হওয়ার সময় এসেছে।’’

মধুগড়ে ছোট চায়ের দোকান চালান প্রদীপ দত্ত। তিনি বলেন, ‘‘ক’দিন আগেও রাতে ঘুমোতে গেলে শুধু অ্যাম্বুল্যান্সের আওয়াজ কানে আসত। জ্বরে ‘আধমরা’ মানুষগুলোকে হাসপাতালে ভর্তি করা নিয়েই চলত দৌড়োদৌড়ি। ঘরে ঘরে জ্বর ও ডেঙ্গি। সে এক প্রবল আতঙ্ক।’’ এখন তা অনেকটাই কম, কাউন্সিলরও পাশে দাঁড়িয়েছেন বলে তাঁর দাবি।

মধুগড় আর প্রমোদনগরের আর্থ-সামাজিক চেহারা অনেকটা একই রকম। কলোনির সংখ্যা বেশি। অধিকাংশ মানুষই নিম্ন-মধ্যবিত্ত। আর্থিক ভাবে দুর্বল হওয়ায় এই ধরনের পরিবারগুলির পক্ষে রক্ত পরীক্ষা করানোটাও বিলাসিতা। তার সঙ্গে সচেতনতার অভাব তো রয়েছেই। তবু দু’টি এলাকারই অভিযোগ, সময় মতো পুরসভা ঠিক ভাবে মশা মারতে পারেনি। পারলে আজ এই অবস্থা হত না।

মধুগড়ের বাসিন্দারা এখন শিখে গিয়েছেন, সন্ধ্যার পরে দরজা-জানলা বন্ধ রাখতে হবে। জ্বালিয়ে দিতে হবে মশা মারার তেল। ঘরের আশপাশে জল জমতে দেওয়া যাবে না। মশারি টাঙিয়ে শুতে হবে। এবং জ্বর হলেই রক্ত পরীক্ষা করিয়ে ফেলতে হবে। প্রমোদনগরের মানুষও সেই পথেই চলুক, চাইছে মধুগড়।

মধুগড় এলাকার স্থানীয় কাউন্সিলর প্রবীর পালের দাবি, ডেঙ্গির আক্রমণে প্রথম দিকে কিছুটা ব্যাকফুটে চলে গেলেও প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। ডেঙ্গির মশাদের বিরুদ্ধে ‘পাল্টা আক্রমণ’ চালিয়ে হাতে-নাতে ফলও পেয়েছেন। তাঁর দাবি, জ্বরের প্রকোপ বাড়তেই তিনি বাড়ি বাড়ি মশা মারার তেল, ধূপ থেকে শুরু করে ব্লিচিং পাউডার ছড়ানোর ব্যবস্থা করেছেন। সেই সঙ্গে চেষ্টা করেছেন মানুষকে সচেতন করার। তাতে অনেকটা ফলও পেয়েছেন। তাতেই মধুগড়ে ডেঙ্গি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে বলে দাবি প্রবীরবাবুর।

প্রমোদনগরের কাউন্সিলর প্রদীপ মজুমদার জানিয়েছেন, ডেঙ্গি রুখতে তিনি চেষ্টার কোনও কসুর করছেন না। বাড়ি বাড়ি গিয়ে জমানো জল ফেলে দিচ্ছেন। তেল ছড়াচ্ছেন। ডাক্তার দেখানোর ব্যবস্থা করছেন। তাঁর আশা, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই জ্বরের সংক্রমণ অনেকটা কমে যাবে।

দুই এলাকার দুই কাউন্সিলরের সাফাই শুনে বাসিন্দাদের অবশ্য একটাই প্রশ্ন: সারা বছর তা হলে কী করলেন ওঁরা?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement